প্রশান্ত পশ্চিম



মাহমুদ হাফিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্ব ৯

সকালে উঠে দেখি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। পূবের জানালায় সূর্যের দেখা নেই। রাস্তায় গাড়িও নেই তেমন। যে বাড়িতে এসে উঠেছি, এর পূর্বদিকে উত্তর-দক্ষিণ লম্বা রাস্তা। রাস্তা ডিঙিয়ে পূর্বদিকে তাকালে কয়েকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। আমাদের দেশের বাংলো প্যাটার্নের । ছাদগুলো চারচালা। করোগেট টিনের বাড়ি স্টাইলের, ওপর থেকে নিচের দিকে নামানো। শীতকালে বরফ পড়ে বলে কোন ছাদই আমাদের মতো সমান নয়, চারচালা ঘরের মতো বাঁকানো। কোন স্থপতি আমেরিকানদের এই্ বাড়ি বানানো শিখিয়েছে আল্লাহ মালুম। বাড়ির কাঠামো ভিন্ন হলেও দেখতে প্রায় একই রকম । বিস্তীর্ণ সবুজের মধ্যে এসব সাদা, ছাই বা হাল্কা খয়েরি রঙের বাড়ি নজর কাড়ে বড়। শান্ত সকালে যতোদূর চোখ যায়, সবুজের মধ্যে বাড়িগুলো আমার চোখে প্রশান্তি দেয়  সিয়াটলে দ্বিতীয় দফা ভ্রমণের এই প্রথম সকালটিতে। 

পাহাড়, টিলা ও সবুজ বনানীময় লিনউইড এলাকাটিই দৃষ্টিনন্দন। এর পেছন দিয়ে চলে গেছে ফোর ও ফাইভ ফ্রি ওয়ে।  অদূরেই মিলেছে তা আই ফাইভে। এই আই ফাইভ বা ইন্টারস্টিট ফাইভ রাস্তাটি আমেরিকার সঙ্গে মেক্সিকো ও কানাডার মতো প্রতিবেশি  দেশকে যুক্ত করেছে। মেক্সিকো সীমান্তের চুলাভিস্তা থেকে শুরু হয়ে প্রশান্ত পশ্চিমের সব উপকূলীয় শহর ছুঁয়ে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার গিয়ে পৌঁচেছে। পথে সান্দিয়েগো, লস এঞ্জেলেস, সানফ্রানসিস্কো, স্যাকরামান্টো, ইউজিন, পোর্টল্যান্ড, সিয়াটলকে ছুঁয়ে গেছে। একটা রাস্তা দিয়ে উত্তরে কানাডায় আর দক্ষিণে মেক্সিকোয় যাওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সড়ক নেটওয়ার্কের ঘনবন্ধনকে প্রমাণ করে।

পাকা ফল খাওয়ার লোক নেই

নিচে আসি। আস্তে আস্তে বাড়ির সবা্‌ই ওঠে। রসুইঘর থেকে শব্দ আসে: ‘ নো অনিয়ন, নিড অনিয়ন’ মানে বাড়িতে পিঁয়াজ নেই বলে। গৃহকর্তা গাড়ি বের করেন। গৃহকর্তা লা জওয়াব। বাড়িতে প্রার্থিত অতিথি। গুঁড়িবৃষ্টির সকালে আলস্য ভেঙে তাঁকে গাড়িতে বেরুতেই হয় বাজারে। বাজার বলতে চটের হাতে কাওরান বাজার বা মালিবাগ বাজার নয়, সুপার মার্কেট। এশিয়ার সঙ্গে পুঁজির প্রতাপশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফারাকটি চোখে লাগে। এশিয়ায় পথে ঘাটে দোকান বাজার। অনায়াস জীবনযাপনের জন্য যত্রতত্র থেকে রসদ সংগ্রহ চলে। এখানে ব্যাংকের ডেবিট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে দৌড়াতে হবে চেইন সুপারশপে।

গৃহকর্তা বাড়ির সম্মুখভাগে গ্যারাজের অটোমেটেড দরজা মোবাইল টিপে খোলেন। আস্তাবল থেকে হোন্ডা নামের ঘোঁড়াটি বের করেন। আমাকে বাজারে যাওয়ার আহবান জানালে গাড়িতে উঠে বসি। বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন ও আলু পটল কেনার আটপৌরে সাংসারিকজীবনের মধ্যে সমতাবিধানে বাজার করাকেই জীবনের সখ হিসাবে বেছে নিয়েছি। বাজারে যাওয়ার আহবানকে তাই লুফে নিই। গৃহকর্তার ঘোঁড়াটি মসৃণ সড়ক ধরে দৌড়াতে থাকে। আবিষ্কার করি, আমাদের হোস্টের বাড়িটি পাহাড়-টিলার ওপর এক চমৎকার লোকেশনে। বাড়িটির সামনে উত্তর দক্ষিণ লম্বা রাস্তার দু’দিক থেকে বের হয়ে আশপাশের শপিং ও রিক্রিয়েশন এরিয়াগুলোতে যাওয়া যায়। দুদিক দিয়েই গাড়িতে ৪/৫ মিনিটের দূরত্ব। বাড়ি থেকে বামে গেলে পাহাড়ি ঢালু রাস্তায় দু’দিকের নয়ানাভিরাম বাড়িগুলোকে গুডবাই জানিয়ে নেমে যেতে হয় লুকাস্টওয়েতে, তারপর ফিলবার্ট রোড নামের বনানীময় এক নেইবারহুডের সড়ক। ডানে গেলে সামান্য ঢালুতে নেমে ড্যামসন সড়ক হয়ে ওঠা যায় অন্য সড়কে।  জায়গাটি পকেট মতো হওয়ায়  নিরিবিলি, শান্ত ও চাপমুক্ত।

জানালা দিয়ে আনবাড়ি

গাড়িতে উঠে বুঝতে পারি মার্কিনীদের মতোই এখানে রাস্তা গাড়ির গতি আমাদের দ্বিগুনেরও বেশি। নেইবারহুডের রাস্তাতেই তা চলে কমপক্ষে ৭০ কিলোমিটার বেগে। বড় রাস্তায় গেলে কমবেশি ১৩০ কিলোমিটার বেগ পায় গাড়ির। মোদ্দাকথা, এরা নতুন গাড়ি ব্যবহার করে, রাস্তায় ব্রেক করার প্রয়োজন হয় না তাই এই খরগোশগতি। আমি সীটবেল্ট বেঁধে তৈরি হয়ে বসি।

এশিয়ান -বিশেষ করে মসলাদার খাদ্যরসিক অতিথি  এলে গৃহকর্তা আপামর মার্কিনীদের বাজারগন্তব্য ‘কস্টকো হোলসেল’য়ে যান না, চলে যান এশিয়ান মাছ মসলা শাকসব্জি পাওয়া যায় এমন সুপারশপে। সিয়াটলে জাপানী-কোরিয়ানরা এইচ মার্কেট, এশিয়ান মার্কেট নামে এশিয়ান খাদ্যসম্ভারে এন্তার সুপারশপ গড়ে তুলেছে। ভারতীয়রাও কম যায় না। এ নগরে ভারতীয় মসলা মাছের জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছে ‘ময়ূরী’নামের সুপারশপ। এতে শুধু ভারত পাকিস্তান নয়-  বাংলাদেশের মাছ, মশলা, নাড়ু, চানাচুর সবই মেলে। বাসায় এখন যেহেতু পিঁয়াজ দরকার, গৃহকর্তা স্বগতোক্তিতে বললেন-‘ময়ূরীতেই আজ যাই’। 

গৃহকর্ত্রীর সখের গোলাপ

পৌঁছে দেখি এলাহী কাণ্ড। ইচ্ছে থাকলে এখানে হয়তো মুক্তাগাছার মন্ডা, কুমারখালীর দই আর কুমিল্লার রস মালাইও মেলানো যায়। পিঁয়াজ, বিস্কুট, বেগুনসহ কিছু সবজি চটজলদি কিনে নেন গৃহকর্তা। একই পথে ফিরে আসি।  এখানে একটু বেলা করে নাস্তা খাওয়ার চল। দিনে রাতে মেইন কোর্সটি এক বা দু’বার খাওয়া হয়। দিনমান চলে শুকনো খাবার, ফলমূল।আমরা ফিরে এসে নাস্তা খাই। বৃষ্টি ধরে এলেও আকাশ মেঘমুক্ত হতে চায় না। বৃষ্টি চলে গেলে সবাই ব্যাকইয়ার্ড বা গৃহঅন্দরে হাটাহাটি করে। এ বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডটি একটু বেশিই বড়। আমাদের হিসাবে কমপক্ষে আটকাঠা আয়তনের। সবুজ ঘাসে ছাওয়া। একপাশে গৃহকর্ত্রী জেরিনের সখের গোলাপফুলের তিনটি টব। একপাশে বুনোফুলের ঝোঁপ। বড় একটা বৃক্ষও আছে ব্যাকাইয়ার্ডে।

কাঠের সীমানা প্রাচীরে ফলভারে নত ব্লবেরি

সীমানাদেয়ালের পিছন বা পশ্চিম দিকের বাগানে থোকায় থোকায় ব্লবেরি ঝুলছে। তার শাখা বিস্তৃত হয়েছে কাষ্ঠনির্মিত সীমানা দেয়ালের ওপরে। রসভারে নত টসটসে ঘন বেগুণী রঙ ফলপ্রিয়কে হাতছানি দেয়। মার্কিনমুলুকে ট্রেসপাসিং বা অনঅধিকার প্রবেশ নাজায়েজ। বাড়ি বা জমিওলা গুলিও করে দিতে পারে। স্পর্শরহিত ফলবৃক্ষের বাগানটি এ্যাজমালি বলে তাতে সবারই অধিকার। তাই হাতছানি দেয়া রসমঞ্জুরি যদি কেউ কব্জাও করে কারও কিছু বলার কিছু । আমার গৃহবন্ধু জলি দেখি গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে পাকাফল তুলে এ নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা। এতো দামি ফল যেচে বাড়ির সীমানা দেয়ালে এসে রসভার মেলে ধরেছে। হাত দিয়ে পেড়ে ফল খাওয়ার আনন্দ আলাদা। আমি দূর থেকে বলি ধুয়ে নাও। আর আল মাহমুদ এর কবিতার ভাষায় বলি ‘ তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিয়ো সেই ফল’ উচ্চারণ করি। মুহুর্তেই আমার হাতে চলে আসে দুয়েকটি। খেয়ে দেখি, টকমিষ্টি। বলি আরও কয়েকটি দাও। ভাবি এই ফলের নামেই বুঝি বৃটিশ ফোন কোম্পানির নাম হয়েছিল ব্লবেরি। আজকাল অবশ্য ওই নামটি কম শোনা যায়।

ব্লবেরি

বিলগেটস এর কোম্পানি মাইক্রোসফট এর পক্ষ থেকে উইন্ডোজ ১১ প্রকল্প কমপ্লিট করায় ইডেন নামে একটি দামি ড্রিংক এসেছে গৃহকর্তার নামে।  ভারমন্ট আইস সিডার। হানি ক্রিসপ। গৃহকর্তা আমাকে ও তুসুকে অফার সামান্য করে। আমরা চুমুক দিয়ে বড় মজা পাই। দামি আপেল থেকে নাকি তৈরি। সারসগলা বোতলটি দেখতেও বেশ।

দুপুর গড়াতেই সূর্য সমস্ত অভিমান ত্যাগ করে হেসে ওঠে। বাড়ির সামনে ও গৃহঅন্দর তীর্যক আলো পড়লে চারপাশ ঝলমলিয়ে ওঠে। সবুজ ব্যাকইয়ার্ড হয়ে ওঠে কাকলিময়।

   

ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পুরস্কার পেলো এয়ার এ্যাস্ট্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার ২০২৩’- এর বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে এয়ার এ্যাস্ট্রা।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত গালা অ্যাওয়ার্ড নাইটে এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফের হাতে বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরির গোল্ড পুরস্কার তুলে দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, এমপি।

যাত্রী সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত এয়ার এ্যাস্ট্রা ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট এবং ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

বাংলাদেশ মনিটর তাদের বাৎসরিক কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ‘এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার’ প্রবর্তন করে। এভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ মনিটর’-এর জরিপের ভিত্তিতে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।

বিগত এক বছরে যারা কমপক্ষে তিনবার আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন, তারা অনলাইনে নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সকে ভোট দিতে পেরেছেন।

;

সিলেটে একসঙ্গে ঘুরে দেখা যাবে ২৩টি পর্যটন স্পট



মশাহিদ আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। সিলেটের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন সিলেটে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটকরা।

কিন্তু পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। তবে এবার পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। দুই দিনে এক সঙ্গে ২৩টি স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

জানা যায়, সিলেটের ৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির দিক নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রেরিত ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর হয়ে জাফলং পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। আর সেই প্রস্তাবনা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই তিনদিন সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। কারণ শুক্রবার ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় চাকরিজীবিরা আসা যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই একদিনে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি জাফলং ও পাথর সাম্রাজ্য সাদাপাথর ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু সময় ও ভোগান্তির কারণে তা আর একদিনে ঘুরে বেড়ানো যায় না। কারণ যেখানে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে জাফলং থেকে সাদাপাথর যাওয়া সম্ভব সেখানে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার। আর এই ১২০ কিলোমিটারে পাড়ি দিতে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় আর ৫টি পর্যটন স্পট। জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর প্রতিমধ্যে পান্তুমাই, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, লাক্কাতুড়া চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে।

সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে সহজতর এবং আরামদায়ক করণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সড়কটি বাস্তবে রূপান্তরিত হলে এখানে আসা পর্যটকরা একটি সড়কে যাতায়াত করে ২ দিনে ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। সড়কটি নির্মাণ করা হলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।

জাফলং-কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত সড়ক তৈরির বিষয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপের কাজ শেষ করেছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেট।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পটির আশপাশে আরও কয়েকটি চলমান প্রকল্প থাকায় এই সড়ক নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

আর গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জাফলং থেকে সাদাপাথর বা সাদাপাথর থেকে জাফলং যেতে হলে ভিন্ন সড়ক ব্যবহার করতে হয়।এতে করে সময় খরচ দুটিই বাড়ে।গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এক সড়ক দিয়েই অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।

;

থাইল্যান্ড ভ্রমণে তাপ ও বৃষ্টি থেকে সাবধান!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন ঋতুর দেশ থাইল্যান্ড। বর্তমানে চলছে বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টি যখন থাকে না তখন প্রচণ্ড রোদের তাপ। অন্তত গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায়ই বিকেলের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে এবং দিনের বেলায় গরমে অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ।

এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদফতর প্রয়োজন না হলে জনগণকে রোদে বের না হওয়ার জন্য এবং বৃষ্টিতে ভিজলে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। 

এমন গরম আবহাওয়ায় স্থানীয় থাই জনগোষ্ঠীর পছন্দের বেড়ানো বা সময় কাটানোর জায়গা হচ্ছে বড় শপিংমলগুলো। তবে পর্যটকদের শুধু শপিং মলে ঘুরে পোষাবে না। তাই ছাতা, ক্যাপ এবং সঙ্গে পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যাংককের তামপাত্রা ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। তবে সেটা ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এমন গরমে বিশেষত শিশুদের বারবার পানি পান করানো এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের পর থেকে থাইল্যান্ডে পুরোপুরি বর্ষা। তবে বর্ষাতেও বৃষ্টি ছাড়াও রোদের তাপ থাকে প্রচুর। থাইল্যান্ডে বর্ষা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্দ্র এবং শীতল। এ সময়টায় চিয়াং মাই বা চিয়াং রাইয়ের মতো উত্তর থাইল্যান্ডে পুরোপুরি শীত অনুভূত হয়। তবে গালফ অব থাইল্যান্ড এবং আন্দামানের তীরের ভূমিতে শীত কখনোই অনুভুত হয় না। বরং গরমই থাকে।

যেহেতু বাংলাদেশের পর্যটকরা বেশিরভাগই সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বেড়াতে যান, তাই সবসময় হালকা এবং উজ্জ্বল রংয়ের কাপড় পড়ার পরামর্শ থাকবে। কারণ এই অঞ্চলগুলোতে এবং দ্বীপগুলোতে বেশিরভাগ সময় গরমই থাকে।

এসব স্থানে ভ্রমণের সময় শিশু ও বয়স্কদের গরম থেকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ছায়ায় থাকা, পানি পান করা, ভিটামিন সি গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকক, উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে এখন বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। ব্যাংককে বিকেল নাগাদ ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসময় নাইট মার্কেট বা খোলা স্থানে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এখানে সেভেন ইলেভেনের মতো সুপারশপগুলোতে একবার ব্যবহারের জন্য ছাতা এবং রেইনকোট পাওয়া যায়।

তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পরবর্তীতে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

;

থাইল্যান্ডের খাও খিও ওপেন জু'তে এক বেলা



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাংকক আর পাতায়ার মাঝামাঝি চনবুড়ির আমফুর শ্রী রাচা শহর। তাই পাতায়া থেকে ব্যাংককে ফেরার সময়ই এখানকার 'খাও খিও ওপেন জু' ঘুরে আসতে পারেন পর্যটকরা।

থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা বাংলাদেশি ও ভারতীয় পর্যটকদের পছন্দের জায়গা ব্যাংককের সাফারি পার্ক। সেখানে ডলফিন, হাতি, ওরাং ওটাং, শুশুক, কাউবয়, সাই-ফাই এমন শোগুলো শিশুরা খুবই উপভোগ করে। তবে খরচ কিছুটা বেশি এবং প্রায় পুরো একদিন সময় ব্যয় করতে হয় সেখানে। এছাড়াও বন্য প্রাণিকে প্রদর্শনের স্থানটিও অনেক বেশি কৃত্রিম।

তাই কোলাহল এড়িয়ে যারা মুক্ত চিড়িয়াখানা বা ওপেন জু ঘুরতে চান, তাদের জন্য উপযুক্ত খাও খিও।

মুক্তভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে হরিণের পাল

গত রোববার (২০ আগস্ট) আমরা গিয়েছিলাম খাও খিও ওপেন জু দেখতে। বিদেশিদের জন্য ২২০ বাথে প্রবেশের টিকেট মেলে। সাফারি পার্কের মতো হট্টগোল নেই এখানে। আর পরিবেশটাও অনেকটা শান্ত। চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই আমাদের স্বাগত জানালো হরিণের দল। একেবারেই মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করছে এই হরিণেরা। সব বয়সের মানুষেরা উপভোগ করছেন তাদের সান্নিধ্য। ২০ বাথে দীর্ঘাকার ঘাস কিনে হরিণদের গায়ে হাত বুলিয়ে খাওয়ানো যায়। শিশুদের জন্য হরিণের সঙ্গে খেলা করাটা খুবই উপভোগ্য। শিশুরা হয়তো এতো বেশি খাওয়াচ্ছিল যে হরিণের পেটে আর জায়গা নেই। অবশ্য শিশুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে কোন কার্পণ্য নেই ওদের।

এখানে সকাল ১০টায় পেঙ্গুইন প্যারেড দেখতে যাই আমরা। সারি বেঁধে পেঙ্গুইনরা এসে জলাশয়ের ধারে দাঁড়ায়। এরপর ফ্যাশনোর মতো করে আবার হাঁটা দেয়। পেঙ্গুইনদের খেলা উপভোগ করে সকলে। একসঙ্গে প্রায় ১০০ জন এই প্যারেড উপভোগ করতে পারেন। এরপর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব। মাত্র ৫০ বাথে ছোট মাছ কিনে খাওয়ানো যায় পেঙ্গুইনদের। আমাদের হাতের মাছগুলো ছিনিয়ে নিতে পেছন পেছন হাঁটা দেয়। এটা সত্যিই অপূর্ব দৃশ্য৷ এরপর পেঙ্গুইনদের ঝাঁকে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগতো পাওয়া যাবেই।

থাইল্যান্ডের খাও খিও ওপেন জু

খাও খিও ওপেন জু শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়। বরং মানুষকে বন্য প্রাণির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া, বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য কাজ করে। তাই চিড়িয়াখানার মূল ৪টি বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে, জ্ঞান, বন্য প্রাণি সংরক্ষণ, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও বিনোদন।

এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় ফ্লেমিঙ্গো পাখির প্যারেড দেখতে যাই আমরা। দুধ রাঙ্গা শরীরে ওপর আবছা লাল ডানার পাখিগুলোকে প্রথমে বক ভেবে ভুল করি আমি। তবে সৌন্দর্যে এরা বককে তো ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ ঘাসের ওপর ফ্লেমিঙ্গোর প্যারেড শিশুরা উপভোগ করে। এরপর সেখানে ফ্লেমিঙ্গোদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার আকর্ষণীয় পর্ব।

পেঙ্গুইনের প্যারেড শো

প্রায় ২ হাজার একরের ওপর স্থাপিত এই চিড়িয়াখানা দেখতে হলে গলফ কার্ট ভাড়া নেওয়া যায়। ২০০ বাথে ৪ ঘণ্টার জন্য গলফ কার্ট ভাড়া নিয়ে নিজেরাই চালানো শুরু করলাম। না হলে পা ব্যথা হয়ে যাবে। ইউরোপিয়ান পর্যটকদের বড় কয়েকটি দল ট্রেন কার্ট নিয়ে ঘুরছিল। এক একটা কার্টে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী বসতে পারেন।

সকাল ১১টায় রয়েছে এলিফ্যান্ট শাওয়ার শো। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বিশালকার কাঁচের একুরিয়ামে হাতির গোসল আর খেলা উপভোগ করা যায়। এসময় উপস্থাপিকা জানান, এটাই হাতির স্বাভাবিক গোসল প্রক্রিয়া। এর জন্য হাতিকে কোন জোরপূর্বক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে এই কথার পুরোটা বিশ্বাস হয়নি আমাদের।

আমরা মাটির নিচ থেকে উপভোগ করলাম হাতির প্রদর্শনী। পুকুরের সমান গভীর আর বিস্তৃত একুরিয়ামে যখন হাতি নামলো এবং পরে এপাশ ওপাশ করে সাঁতারনো শুরু করলো, শিশুরা চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করলো।

এখানে হাতির সঙ্গে ছবি তোলা এবং পরে হাতিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। যা সব বয়সীরা উপভোগ করছিল।

বিশালকার কাঁচের একুরিয়ামে হাতির গোসল

সাফারির সঙ্গে এই প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানার বড় একটি পার্থক্য হচ্ছে এখানে অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ এবং উচ্চ স্বরের গান বাজনা নেই। তাই শান্ত পরিবেশে বেড়ানো যায়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য খুবই উপযোগী।

সকাল সাড়ে ১১টায় এখানে রয়েছে শুশুকের প্রদর্শনী। বল এবং রিং নিয়ে নানা খেলা প্রদর্শন করে শুশুক।

প্রদর্শনীগুলো শেষ করে আমরা গেলাম অন্য প্রাণিদের দেখতে। এর মধ্যে জিরাফ এবং হিপ্পোকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। পানি থেকে বিশাল হা করে ছুড়ে দেওয়া সবজি গিলে নিচ্ছিল হিপ্পোরা৷

খাও খিও ওপেন জু'তে প্রায় ৮ হাজার বন্য প্রাণি রয়েছে। নানা জাতের বাঘ, ভালুক, পাখি, বানর, দেখে দুপুর নাগাদ আমরা বের হলাম চিড়িয়াখানা থেকে।

ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে ভ্রমণ করা যায় ষাট বছরের পুরনো এই চিড়িয়াখানায়। দলীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে পূর্বে অবহিত করলে বিশেষ ডিসকাউন্ট এবং ট্রেন কার্টের সুবিধা উপভোগ করা যায়।

;