ঘুরে এলাম তামাবিল-জাফলং
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিতার্কিক ও সংগঠকদের অংশগ্রহণে সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো ৮ম কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ (এনডিএফ বিডি) লিডারশিপ ট্রেনিং ক্যাম্প-২০২১। এতে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে হাজির হই সারাদেশের ১২০ জন বিতার্কিক। সিলেট যাওয়ার জন্য আমাদের জন্য ট্রেনের একটা বগি রিজার্ভ করা হয়েছিলো। প্লাটফর্মে বসে থাকা অবস্থায় ট্রেন এসে হাজির। আমরা এক্সট্রা লেখা বগিটা খুঁজতে হুড়োহুড়ি করে দৌঁড়ে পেলাম। এরপর ৩৬০ আওলিয়ার দেশ সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু।
ট্রেনে উঠার পর কেউবা বসে কেউবা দাঁড়িয়ে কেউ গাইছে গান, কেউ দোতরা বাজাচ্ছে আবার কেউবা গিটারে সুর তোলায় ব্যাস্ত। অন্যদিকে কেউবা ব্যস্ত গল্প-আড্ডায়। পুরো বগি বিতার্কিকদের আনন্দে ভরপুর! কুষ্টিয়া থেকে আসা শামীম রানা বলছিলেন, যে কোনো ট্যুরই আমার কাছে আনন্দের। সুযোগ পেলে হাতছাড়া করি না।
সারা রাত ঝিকঝিকঝিক শব্দে দ্রুত গতিতে চলছিলো আমাদের ট্রেন। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় পৌঁছে যাই সিলেটে। আমাদের বহন করার জন্য সেখানে রাখা ছিলো তিনটা বাস। বাসে উঠার পর পৌনে এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাই খাদিমনগর এফআইভিডিবি ডরমেটরি ভবনে। সেখানেই ফ্রেশ হই। নাস্তার পর শুরু হয় সংগঠনের কার্যক্রম। এরপর টিম লিডারদের নির্দেশনায় দলবেঁধে বাসে করে যাত্রা শুরু হয় তামাবিল ও জাফলংয়ের উদ্দেশে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে উঁচু-নিচু,আঁকা-বাঁকা রাস্তায় গাড়ি ছুটছে। চারিদিকে জনশূন্য ফাঁকা মাঠ আর মাঠ। রোমাঞ্চকর অভিযান। এগারোটার দিকে পৌঁছে যাই তামাবিল। দলবেঁধে সবাই সেখানে নেমে গেটের সামনে ছবি তুলি।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে সরাসরি ভারতের পাহাড়, পর্বত অবলোকন করা যায়। সারি সারি ভারতীয় ট্রাক আসতে দেখে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানলাম, এখানে কয়লা ও সাদা পাথরসহ অন্যান্য পাথর এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয়। যা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থলপথের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে অবস্থিত জৈন্তা হিল রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত এটি বাংলাদেশের শেষ বাড়ি বলেও জানতে পারলাম।
এরপর সেখান থেকে আবার ফিরে দুপুর বারোটায় পৌঁছালাম রূপের রাণী জাফলংয়ে। ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব-জোন এর ইউনিট ইনচার্জ ওসি মো. রতন শেখ আমাদের সহযোগিতা করলো।
ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান একেএম শোয়েব, কো-চেয়ারম্যান ও রেক্টর এম আলমগীর ও কো-চেয়ারম্যান সিলেট জোনের জোন প্রধান খলিলুর রহমান খলিনের নেতৃত্বে আমাদের ছুটে চলা যেন স্বার্থক হলো।
ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জয়ন্তিকা পাহাড়ের কোল বেয়ে বয়ে যাওয়া পিয়াইন নদীর দৃশ্য সত্যিই অপরূপ। তবে ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে আমরা নিচে নেমে উপভোগ করলাম। দেখলাম টল টল স্বচ্ছ পানি। পাহাড়ের মাথা ঘেঁষে তুলোর মত মেঘের ছুটে চলা। মন চাইছিল ছুঁয়ে দেখতে। প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। সীমান্তের ওপারে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ডাউকি বন্দরের উপরে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে তুলেছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য।
স্বচ্ছ পানির নিচে চকচকে বালি। খালের মতো সরু অংশ দিয়ে চলছে ডিঙি নৌকা। অদূরে নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক থেকে নেমে আসা ঝর্ণা। নদীর বুকে পাথর উত্তোলনে ব্যস্ত শ্রমিকরা। এ যেন উপচেপড়া সৌন্দর্য। মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। হাতের ক্যামেরাগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আনন্দঘন মুহূর্তগুলো স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী রাখার প্রতিযোগিতা। ক্লিক ক্লিক শব্দে আলোকিত চারিদিক।
এবার উঠে ফেরার পালা। ঘর্মাক্ত আমরা সবাই। তবে বয়স্কা এবং শিশুরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে উপরের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উঠতে হচ্ছে। সারিবদ্ধ দেখা গেলো রঙিন ছাতার নিচে ঠান্ডা পানি, লেবু মিশ্রিত পানি,তেতুল, বরুই আচার, কলাভর্তা, আমড়া, জাম্বুরা মাখানো খেয়ে অনেকেই ক্লান্ত মেটাচ্ছে। এভাবেই উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যার পর আবার সেই ডরমেটরি ভবনে ফিরে আসার পালা।