করোনার টিকার দুই ডোজ সম্পন্ন করলেই যাওয়া যাবে মালদ্বীপ। বিশ্বের যেকোনো দেশের পর্যটকরাই এ সুযোগ নিতে পারবে।
সম্প্রতি মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে, যা গত শনিবার থেকে কার্যকর হয়।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো যাত্রী যদি করোনা প্রতিরোধ টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ (বুস্টার ডোজ প্রয়োজন নেই) নিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ৫ মার্চ থেকে সেসব যাত্রীর মালদ্বীপ ভ্রমণের আগে আরটি-পিসিআর টেস্টের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা হলো। সূত্র: লয়ালটিলবি ডটকম
করোনাভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১ এপ্রিল সীমান্ত খুলে দেয় মালয়েশিয়া। মূলত ওইদিন থেকে দেশটিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এর ফলে ফের পর্যটক টানতে নানা উদ্যোগ নেয় মালয়েশিয়া। এর অংশ হিসেবে দেশটির পর্যটন উন্নয়ন সংস্থা ‘ট্যুরিজম মালয়েশিয়া’ ২ থেকে ৭ জুন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর ঢাকা এবং চট্রগ্রামে প্রথমবারের মতো রোডশো’র আয়োজন করছে।
ঢাকায় রোববার (৫ জুন) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটরদের জন্য রোডশো’র আয়োজন করে মালয়েশিয়া পর্যটন উন্নয়ন বোর্ড- ট্যুরিজম মালয়েশিয়া।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা এমডি. হাশিম, ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শিবলুল আজম কোরেশী সহ স্বনামধন্য সকল ট্রাভেল এজেন্ট এবং ট্যুর অপারেটররের শীর্ষকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার সিনিয়র পরিচালক সৈয়দ ইয়াহিয়া সৈয়দ ওথমান এবং ‘দ্য বাংলাদেশ মনিটর’র সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুর আলম।
এদিকে রোডে শো উপলক্ষে ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার সিনিয়র পরিচালক (কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগ) সৈয়দ ইয়াহিয়া সৈয়দ ওথমান এর নেতৃত্বে একটি মালয়েশীয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে মালয়েশিয়ার ৫টি ট্রাভেল এজেন্সি এবং দুটি স্বাস্থ্যশিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরাও।
বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা এমডি. হাশিম বক্তব্য রাখছেন
অনুষ্ঠানে রোড শো’র আয়োজন প্রসঙ্গে বক্তরা জানান, মালয়েশিয়া ভ্রমণে বাংলাদেশিদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করার সাথে সাথে এই রোডশো’র লক্ষ্য হলো ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা যার মাধ্যমে তারা পর্যটনকে পূর্বাবস্থায় বা আরো ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে।
সৈয়দ ইয়াহিয়া সৈয়দ ওথমান বলেন, বাংলাদেশে ফিরে আসার এটি একটি দারুণ সময় এবং রোডশো আয়োজনের জন্য যথার্থ। বাংলাদেশে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় শুরু এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য মালয়েশিয়ার সীমান্ত উন্মুক্তকরণ বলতে গেলে একই সময়ে সংঘঠিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের মালয়েশিয়ায় স্বাগত জানানোর সূযোগ পেয়ে আমরা সত্যিই রোমাঞ্চিত। পর্যটকরা এখন মালয়েশিয়ার শ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ রোমাঞ্চকর আকর্ষণগুলো সাশ্রয়ী খরচে উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। দীর্ঘ দুবছর পর পর্যটকরা এখন অনেক কিছুই এক্সপ্লোর করতে পারবেন যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি চালু হওয়া আউটডোর থিমপার্ক, গেন্টিং স্কাইওয়ার্ল্ড, কুয়ালালামপূরে নতুন সাজে সজ্জিত সানওয়ে রিসোর্ট এবং জাকজমকপূর্ণ নতুন আকর্ষণ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু অট্টালিকা ‘মারদেকা ১১৮’। অনিন্দ্য সুন্দর সমূদ্রতট, চিত্তাকর্ষক পর্বতমালা ও বনোরাজিসহ বিভিন্ন আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর কর্মকান্ড আপনার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখবে।
উল্লেখ্য, বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যার হিসেবে মালয়েশিয়ার তালিকায় বাংলাদেশের স্থান প্রথম দিকে। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছেন; যা মোট সংখ্যার ১৯.৩০ শতাংশেরও বেশি। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে পূর্ণ কোর্স কোভিড টিকাপ্রাপ্ত বিদেশিদের জন্য মালয়েশিয়া ভ্রমণে কোন কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই। আসার আগে ও যাওয়ার পর পর্যটকদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা লাগবে না। ১৭ বছর বা তার নিচের বয়সী শিশুদের জন্যও করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। বর্তমানে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, বাটিক এয়ার এবং এয়ার এশিয়া ঢাকা এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে ভ্রমণের জন্য সপ্তাহে ৩ হাজার ৯১০ টির বেশি আসন অফার করছে।
দুই বছর পর পুরোদমে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করার ঘোষণা দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১ এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য সীমানা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, দর্শনার্থীদের পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা কর্মী যারা দুই ডোজ বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন তারা খুব সহজেই মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারবেন। তাদের কোয়ারেনটিনে থাকার প্রয়োজন নেই। তবে তাদের অবশ্যই যাত্রার দুই দিন আগে একটি আরটি-পিসিআর পরীক্ষা এবং পৌঁছানোর পরে একটি দ্রুত পরীক্ষা (আরটিকে) করতে হবে।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে পর্যটনসহ সব ধরনের ভিসার কার্যক্রম বন্ধ করে দেশের সীমানা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছিল দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ার প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৯৮ শতাংশকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে এবং অর্ধেকেরও বেশি বুস্টার ডোজ পেয়েছেন।
অন্ধকার থাকতেই ভোর ৫টা নাগাদ হোটেল ছেড়ে নৌকা ঘাট পৌঁছে গেলাম। ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই কিছু জেলে নৌকা নিয়ে নেমে গেছে কাপ্তাই লেকের জলে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে। আজকের যাত্রা সাদা পানির ঝর্ণা তথা ধুপপানির উদ্দেশ্যে। রাঙমাটির বিলাইছড়ি ঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ আমাদের বোট ছাড়ল উলুছড়ির উদ্দেশ্যে, সেখান থেকেই শুরু হবে ঝর্ণার উদ্দেশ্যে মূল ট্রেকিং। লোকালয়ের পাশ দিয়েই এগিয়ে চলছে আমাদের বোট। স্থানীয়রা কেউ কেউ লেক ঘেষা রাস্তায় প্রাতঃভ্রমণ করছেন, কেউ কেউ কৌতুহলী দৃষ্টি আমাদের বোটের দিকে তাকিয়ে আছেন। এবারের যাত্রায় আমরা মোট ৯ জন যাচ্ছি। সবারই পাহাড়ে হাঁটার অল্প বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন নন-এসি বাসে করে কাপ্তাই এসেছিলাম। কাপ্তাই ঘাট থেকে দুই দিনের জন্য ৫৫০০ টাকায় নৌকা ভাড়া নিয়ে আমরা রাঙ্গামাটির বিলাছড়িতে পৌঁছেছি। রাত্রিবাস হয়েছে ঘাট লাগোয়া স্মৃতিময় বোডিং-এ। কোনরকমে থাকা যায় সেরকম রুমের ভাড়া পড়েছে ১০০০ টাকা।
কাপ্তাই লেকের বুক চিরে আমাদের নৌকা এগিয়ে চলছে। বিগত কয়েকদিন বৃষ্টিজনিত পাহাড়িঢলের কারণে সব পলিমাটি এসে জমা হয়েছে সুন্দরি কাপ্তাইয়ের বুকে, তাই পানি একেবারে ঘোলা। সুন্দর পানিপথের মাঝে মাঝে জংলার মতন আবার কখনো বা নাম না জানা জলজ ফুল দেখতে পাচ্ছি। সামান্য যাবার পর বিলাইছড়ি আর্মি সদর দফতরের নৌ-চেক পোস্ট পড়লো সেখানে যথাযথ পরিচয় লিপিবন্ধ করেই আবার সচল হলো আমাদের নৌকার ইঞ্জিন। নৌকা এবার নদী বা খালের মতো সরু পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। কি মনোরম এই পথ, সবুজে ঘেরা খাড়া পাহাড়কে পাশে রেখে চলছি। মাঝে মাঝে পাহাড়ের খাজে শুভ্র মেঘকে আটকে থাকতে দেখছি যেন সবুজ পাহাড় তার শুভ্রতায় ভরা প্রেয়সীকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। আমরা কেউ কোনো কথা বলছিনা, অবারিত সৌন্দর্যে অবগাহন করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি।
কাদা মাটি মাড়িয়ে ঝর্ণার উদ্দেশ্যে মূল ট্রেকিং শুরু
এক পর্যায়ে আমরা আলীক্ষিয়াং নামক একটা স্থানে দাঁড়িয়ে নাস্তা সেরে নিলাম। এখানে খুব কম সংখ্যক পরিবারই বাস করে যার মধ্যে মাত্র ৩টি পরিবার আছে বাঙালি। লাল মিয়া নামে এক বাঙালির হোটেলে ঝটপট নাস্তা করেই যাত্রা শুরু হলো। মিনিট ৫/৭ পরেই আবার দাঁড়াতে হলো আরেকটা আর্মি চেক পোস্টে, যথারীতি পরিচয় লিপিবদ্ধ করার পালা। এবারে চেক পোস্ট থেকে আমাদের সতর্ক করা হলো ফিরতি পথে বিকেল ৫টার মধ্যেই এই চেকপোস্ট পার হতে হবে। চেকপোস্ট পেরিয়ে সুন্দর নদীপথ ধরে যেতে যেতে মোটামুটি আড়াই ঘণ্টায় উলুছড়ি পৌঁছে গেলাম। ঘাট থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে এক ক্ষুদে গাইড বিচ্ছুকে সাথে নিয়ে শুরু হলো মূল ট্রেকিং। যাত্রা শুরুর পূর্বে মাঝির মাধ্যমে দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করে গেলাম স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে, কারণ এখানে কোন খাবারের দোকান নেই। ২০০ টাকায় আমাদের ভাত, মুরগি, আলু ভর্তা আর ডাল খাওয়ার ব্যবস্থা হলো।
যাইহোক ট্রেকিং এর শুরুতেই পথটা বেশ খারাপ। খানিকটা পথ বেশ পিচ্ছিল, গ্রিপ পেতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। আর বেশ খানিকটা পথ ভয়াবহ কর্দমাক্ত, মোটামুটি হাঁটুর সমান কাঁদা। এ ধরনের রাস্তার আলাদা একটা মজা আছে, আমরা পাহাড়ে আসি রোমাঞ্চের খোঁজে আর এরকম পথ, নালা, জংগল, চড়াই-উতরাই ও ঝর্না দেয় ভীষণ রকম আনন্দ। ধুপপানিতে বর্ষার শেষ দিকে যাওয়াই উত্তম বিধায় আমরা সেপ্টেম্বর মাসে যাচ্ছি এই পথে। অন্য সময় গেলে হয়তো অন্যরকম সৌন্দর্য দেখতে পাবো কিন্তু ঝর্ণায় বেশি পানি পেতে হলে এর থেকে দেরিতে যাওয়া ঠিক হবে না।
অবারিত সৌন্দর্যে অবগাহন করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি
ট্রেকিং শুরুর খানিক পরেই একটা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গ্রাম পড়ল, চারিদিকে পাহাড় মাঝখানে সমতল আর সেখানে ধান পেকে সোনালি রঙ ধারন করে আছে। কি সেই সৌন্দর্য, সবুজের মাঝে খানিকটা সোনালি আভা একেবারে চিরায়ত বাংলার রূপ। গ্রামবাসীরা তাদের উৎপাদিত ফল বিক্রি করছিল আমরা সেখান থেকে দেশি লাল পেয়ারা আর পেঁপে কিনে খেয়ে হাঁটা দিলাম।
এরপর প্রথমে একটা সিড়ি তারপর খাঁড়া তিনটে পাহাড় ডিঙিয়ে বেশ হাঁপিয়ে গিয়ে বিশ্রাম নেবো বলে চিন্তা করতেই দূরে তাকিয়ে দেখি দুটো শিশু কি যেন বিক্রি করছে! ওদের কাছে গিয়ে দেখি কলার ছড়ি ঝুলিয়ে রেখেছে, প্রতি পিস ৫ টাকা। অতঃপর বেশকিছু কলার সুব্যবস্থা করে সেখানে খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু হলো আমাদের। আরও কিছুদূর গিয়ে ধুপপানি গ্রামে পৌঁছে দেখি টেবিল পেতে রীতিমতো দোকান সাজিয়ে বসে আছে, জুস পানি চিপস শসা আর ফল-মূল কি নেই সেখানে! আবারও পেয়ারা কিনে নিয়ে যাত্রা শুরু হলো আমাদের।
সাদা পানির ঝর্ণা
হাচরে-পাচরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা হেঁটে পৌঁছে গেলাম ধুপপানিতে। রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে এর অবস্থান। খুব বেশিদিন হয়নি মানুষজন এই ঝর্ণার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কিছু বছর আগে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই স্থানে ধ্যান করার কারণে নয়নাভিরাম এই ঝর্ণাটি মানুষের নজরে আসে। তঞ্চঙ্গ্যা শব্দে ধুপ অর্থ সাদা আর পানিকে পানিই বলা হয় অর্থাৎ ধুপানির অর্থ সাদা পানির ঝর্ণা ।
মূলত এই ঝর্ণার পানি স্বচ্ছ এবং যখন অনেক উঁচু (প্রায় ১৫০ মিটার) থেকে ঝর্ণার জল আছড়ে পড়ে তখন তা শুধু সাদাই দেখা যায়। তাই একে ধুপপানি ঝর্ণা বলা হয়। বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ঝরনাগুলির মধ্যে অন্যতম এই ঝরনায় নিচের দিকে একটি গুহার মতন আছে। যা এই ঝরনাকে করেছে অনন্য।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিতার্কিক ও সংগঠকদের অংশগ্রহণে সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো ৮ম কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ (এনডিএফ বিডি) লিডারশিপ ট্রেনিং ক্যাম্প-২০২১। এতে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে হাজির হই সারাদেশের ১২০ জন বিতার্কিক। সিলেট যাওয়ার জন্য আমাদের জন্য ট্রেনের একটা বগি রিজার্ভ করা হয়েছিলো। প্লাটফর্মে বসে থাকা অবস্থায় ট্রেন এসে হাজির। আমরা এক্সট্রা লেখা বগিটা খুঁজতে হুড়োহুড়ি করে দৌঁড়ে পেলাম। এরপর ৩৬০ আওলিয়ার দেশ সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু।
অদূরে নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়।
ট্রেনে উঠার পর কেউবা বসে কেউবা দাঁড়িয়ে কেউ গাইছে গান, কেউ দোতরা বাজাচ্ছে আবার কেউবা গিটারে সুর তোলায় ব্যাস্ত। অন্যদিকে কেউবা ব্যস্ত গল্প-আড্ডায়। পুরো বগি বিতার্কিকদের আনন্দে ভরপুর! কুষ্টিয়া থেকে আসা শামীম রানা বলছিলেন, যে কোনো ট্যুরই আমার কাছে আনন্দের। সুযোগ পেলে হাতছাড়া করি না।
সারা রাত ঝিকঝিকঝিক শব্দে দ্রুত গতিতে চলছিলো আমাদের ট্রেন। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় পৌঁছে যাই সিলেটে। আমাদের বহন করার জন্য সেখানে রাখা ছিলো তিনটা বাস। বাসে উঠার পর পৌনে এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাই খাদিমনগর এফআইভিডিবি ডরমেটরি ভবনে। সেখানেই ফ্রেশ হই। নাস্তার পর শুরু হয় সংগঠনের কার্যক্রম। এরপর টিম লিডারদের নির্দেশনায় দলবেঁধে বাসে করে যাত্রা শুরু হয় তামাবিল ও জাফলংয়ের উদ্দেশে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে উঁচু-নিচু,আঁকা-বাঁকা রাস্তায় গাড়ি ছুটছে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে উঁচু-নিচু,আঁকা-বাঁকা রাস্তায় গাড়ি ছুটছে। চারিদিকে জনশূন্য ফাঁকা মাঠ আর মাঠ। রোমাঞ্চকর অভিযান। এগারোটার দিকে পৌঁছে যাই তামাবিল। দলবেঁধে সবাই সেখানে নেমে গেটের সামনে ছবি তুলি।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে সরাসরি ভারতের পাহাড়, পর্বত অবলোকন করা যায়। সারি সারি ভারতীয় ট্রাক আসতে দেখে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানলাম, এখানে কয়লা ও সাদা পাথরসহ অন্যান্য পাথর এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয়। যা সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থলপথের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে অবস্থিত জৈন্তা হিল রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত এটি বাংলাদেশের শেষ বাড়ি বলেও জানতে পারলাম।
এরপর সেখান থেকে আবার ফিরে দুপুর বারোটায় পৌঁছালাম রূপের রাণী জাফলংয়ে। ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব-জোন এর ইউনিট ইনচার্জ ওসি মো. রতন শেখ আমাদের সহযোগিতা করলো।
ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান একেএম শোয়েব, কো-চেয়ারম্যান ও রেক্টর এম আলমগীর ও কো-চেয়ারম্যান সিলেট জোনের জোন প্রধান খলিলুর রহমান খলিনের নেতৃত্বে আমাদের ছুটে চলা যেন স্বার্থক হলো।
এগারোটার দিকে পৌঁছে যাই তামাবিল।
ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জয়ন্তিকা পাহাড়ের কোল বেয়ে বয়ে যাওয়া পিয়াইন নদীর দৃশ্য সত্যিই অপরূপ। তবে ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে আমরা নিচে নেমে উপভোগ করলাম। দেখলাম টল টল স্বচ্ছ পানি। পাহাড়ের মাথা ঘেঁষে তুলোর মত মেঘের ছুটে চলা। মন চাইছিল ছুঁয়ে দেখতে। প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। সীমান্তের ওপারে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ডাউকি বন্দরের উপরে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে তুলেছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য।
স্বচ্ছ পানির নিচে চকচকে বালি। খালের মতো সরু অংশ দিয়ে চলছে ডিঙি নৌকা। অদূরে নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক থেকে নেমে আসা ঝর্ণা। নদীর বুকে পাথর উত্তোলনে ব্যস্ত শ্রমিকরা। এ যেন উপচেপড়া সৌন্দর্য। মনটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে। হাতের ক্যামেরাগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আনন্দঘন মুহূর্তগুলো স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী রাখার প্রতিযোগিতা। ক্লিক ক্লিক শব্দে আলোকিত চারিদিক।
এবার উঠে ফেরার পালা। ঘর্মাক্ত আমরা সবাই। তবে বয়স্কা এবং শিশুরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে উপরের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উঠতে হচ্ছে। সারিবদ্ধ দেখা গেলো রঙিন ছাতার নিচে ঠান্ডা পানি, লেবু মিশ্রিত পানি,তেতুল, বরুই আচার, কলাভর্তা, আমড়া, জাম্বুরা মাখানো খেয়ে অনেকেই ক্লান্ত মেটাচ্ছে। এভাবেই উপভোগ করতে করতে সন্ধ্যার পর আবার সেই ডরমেটরি ভবনে ফিরে আসার পালা।