কালাপাহাড়: সিলেট বিভাগের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়



তৌফিক হাসান, কন্ট্রিবিউটিং ট্রাভেল এডিটর, বার্তা২৪
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দিগন্ত জোড়া অবারিত সবুজ, যৌবনা পাহাড়ি ঝর্ণা, ছলছল শব্দে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়া কিংবা উঁচুনিচু পাহাড়ি জঙ্গলী পথে হাঁটা হয় না অনেকদিন। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির আবাসের মধ্যে দিয়ে, পাখির ডাক শুনতে শুনতে, বুনো ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে, বাঁধন হারা বাতাসে জুম ফসলের উদ্দাম নৃত্য দেখতে দেখতে পদব্রজে ভ্রমণের সেই আনন্দ শহুরে জীবনে কংক্রিটের পথে কই? তাই তো পাহাড়ে যাই, বার বার যেতে হয় পাহাড়ের ভালবাসার আহ্বানকে অগ্রাহ্য না করতে পেরে।

অনেকদিন থেকে পাহাড়যাত্রা হচ্ছিল না বিধায় আমার পাগলপ্রায় অবস্থা। বন্ধুদের বললাম, কোথাও না কোথাও যেতেই হবে! শহরে তো পাগলের অভাব নেই, ভ্রমণবন্ধু মনির ও রাজন এক কথায় রাজি হয়ে গেল। সঙ্গে জুটলো নন ট্রেকার বন্ধু সোনিয়া। সোনিয়া ও আমার একসঙ্গে অনেক স্মৃতি, ক্লাসে সবসময় পাশাপাশি বসা হতো। ফাজলামো ও খুঁনসুটিতে পার করেছি ইউনিভার্সিটি জীবন। কিন্তু ওর ট্রেকিং-এ তেমন অভিজ্ঞতা না থাকায় খানিকটা শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও টিম ফাইনাল হলো, সদস্য মোট ৪ জন।

পাহাড় বলতে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের কথাই জানি। অনেকবার গিয়েছি এবং আরও অসংখ্যবার যেতে চাই অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে। কিন্তু কিছু বিচ্ছিনতাবাদীর কারণে ওই দিকে যাবার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। কয়েকজন ট্রেকার বন্ধুর নিকট খোঁজখবর করলাম কিন্তু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া গেল না। অতঃপর আমার খুব কাছের ক্লাসমেট খাগড়াছড়ির ছেলে তাতু চাকমার সঙ্গে আলোচনা করলাম পরিস্থিতি নিয়ে। সে খোঁজখবর করে পরামর্শ দিল এই সময়ে ওদিকটায় না যেতে।

বাঁশের সাঁকো

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, মৌলভীবাজারের সর্বোচ্চ স্থান কালাপাহাড়ে যাবো। শুধু মৌলভীবাজার নয়, পুরো সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় এটি, উচ্চতা মাত্র ১০৯৮ ফুট। আসলে সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ের উচ্চতা বেশ কম, পাহাড় না বলে টিলা বলাই ভাল। তারপরও আমাদের মতই শখের ট্রেকারের কাছে সেগুলোও পাহাড়। কালাপাহাড়কে স্থানীয়ভাবে লংলা পাহাড় নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশ জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতে কালাপাহাড়ের নাম 'হারারগঞ্জ পাহাড়' । এই পাহাড়ের বেশিরভাগ অংশ তা প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে পড়েছে এবং বাকি অংশ ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় পড়েছে। এক বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে বিয়ানীবাজারমুখী এনা বাসের টিকেট কেটে রওনা হলাম, গন্তব্য কুলাউড়া। যদিও সিলেটগামী ট্রেনে গিয়েও কুলাউড়া নামা যায় তবুও আমরা বাসকেই প্রেফার করলাম। ভোর ৬টা নাগাদ কুলাউড়া নেমেই ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা সেরে ৩০০ টাকায় একটা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে চললাম আজগড়াবাদ চা বাগানের উদ্দেশ্যে। সিএনজিচালক বাদশা মিয়া বেশ সদালাপী, চলতি পথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল। ফোন নম্বর দিয়ে রাখলো, ফিরতি পথে যদি সিএনজি না পাই তাহলে যেন উনাকে ফোন করি। যাত্রা পথে এক জায়গায় খানিক দাঁড়িয়ে কিছু শুকনো খাবার আর পানি নিলাম কারণ ট্রেকিং রুটে কোথাও কিছু পাবার সম্ভাবনা নেই। যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টার ট্রেক তাই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ

সকাল ৮টা নাগাদ আজগড়াবাদ চা বাগানের মধ্য দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হলো, ততক্ষণে কেউ কেউ বাগানে কাজ শুরু করে দিয়েছে আবার কেউবা দ্রুতপায়ে আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি জুম ক্ষেতে কাজ করবে বলে। চা বাগানটা বেশ বড় তবে তেমন সুন্দর নয়, তারপরও অবারিত সবুজে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। চা বাগানের মধ্যেই বিশাল এক বট গাছ, দেখে বাকিরা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আর আমার দায়িত্ব তা তুলে দেওয়ার। চা বাগান শেষ হতেই উঁচু নিচু পথের শুরু হলো, চলতি পথে পার হতে হলো বেশ কয়েকটি পাহাড়ি খাল। খালের ওপর রয়েছে বাঁশের সাঁকো, একটা তো বেশ দুলিয়ে দিলো। তবে রক্ষা যে সাঁকোগুলো এক বাঁশের নয়। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর সরকারি সহায়তায় তৈরি বড় একটা কংক্রিটের সিঁড়ি পেরিয়ে আমরা বেগুনছড়া পুঞ্জিতে পৌঁছলাম। এটা একটা খাসিয়া গ্রাম, গ্রামের প্রায় বাড়িঘরই পাঁকা। আধুনিকতার সকল ছোঁয়াই বিদ্যমান, মোটামুটি বেশিরভাগ বাড়ির ছাদে আকাশ কিংবা টাটা স্কাই দেখতে পেলাম। বোঝা গেল পানের ব্যবসা করে বেশ আছে উনারা। গ্রামে মোট ৩৫টি ঘর রয়েছে, কমবেশি ২৫০ জন লোকের বাস। সবাই খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী এবং গ্রাম একটু সুদৃশ্য চার্চও রয়েছে।

গুনছড়া পুঞ্জি চার্চ

বেগুনছড়া পুঞ্জিতে পৌঁছে আমরা গাইডের খোঁজ করতে লাগলাম, বিভিন্ন মারফত জানতে পেরেছিলাম বেগুনছড়া পুঞ্জিতে গাইড পাওয়া যায়। কিন্তু এই গ্রামে কোন গাইডের দেখা পেলাম না, গ্রামের কেউ গাইডের কাজ করে না। অগত্যা অনেক অনুরোধ করে জুমের জমিতে কাজ করে এমন এক শ্রমিককে সঙ্গে নিলাম পথ দেখানোর জন্য। এদিকে যারা আসবেন তারা আজগড়াবাদ নেমেই পথ দেখানোর জন্য কাউকে খুঁজে নিবেন। কমবেশি ৫০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। যাইহোক, আমাদের গাইড বাবুলকে নিয়ে শুরু হলো আমাদের প্রকৃত জঙ্গল যাত্রা। বেগুনছড়া গ্রাম ছাড়াতেই রাস্তা দুই দিকে বেঁকে গেছে, বামেরটা ছড়ায় গিয়ে মিলেছে দেখে আমরা ডানেরটা ধরলাম। ঠিক হলো ফেরার পথে আমরা ছড়ার রাস্তা দিয়ে ফিরবো। শুকনো পাতা মাড়িয়ে সরু পথ ধরে আমরা যাচ্ছি কালাপাহাড়ের চূড়ায়, দুধারে ছাড়িয়ে যাচ্ছি খাসিয়াদের পানের বাগান, ফলজ বাগান কিংবা ঘন জঙ্গল।

মানুষের তেমন চলাচল নেই বিধায় পথটা বেশ সরু এবং লতা-গুল্মোয় ভরা। তবে পাহাড়ের প্রায় সকল বড় গাছেই পান গাছের সহাবস্থান দেখে বুঝা যায় পাহাড়ের পুরোটাই খাসিয়াদের শস্যভূমি। জুলাই-আগস্টের দিকে ওদিকটায় গেলে সাথে পথ দেখানোর কেউ না থাকলে পথ খুঁজে চূড়ায় যাওয়া মুশকিল। যত উপরের দিকে উঠতে থাকবেন তত মনুষ্য চিহ্ন কমতে থাকবে, চলতি পথে সুনসান নিরবতার ব্যাঘাত ঘটাবে পাখি কিংবা পোকামাকড়ের ডাক। পথিমধ্যে অবশ্য দু-চার জন মানুষেরও দেখা পাওয়া যেতে পারে। কাউকে হয়তো কাঁধে করে কাঠ, কাউকে বাঁশ আবার কেউকে মাথায় জুমের ফসল নিয়ে ফিরতে দেখতে পারেন।

বেগুনছড়া থেকে যাত্রা শুরুর পর বেশ কিছু পাহাড়ি চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আনুমানিক ঘণ্টা দেড়েক পর আমরা মূল পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছলাম। সেথায় দাঁড়িয়ে গাছ-গছালির ফাঁক দিয়ে পাহাড়ের চূড়া চিহ্নিত করার চেষ্টা করলাম। চূড়া বলতে আলাদা করে ঠাওর করার উপায় নাই কারণ পুরোটাই ঘন জঙ্গল, বাঁশ আর গাছে ভরা। আজ ভীষণ গরম পড়েছে, সূর্যও যেন মাথার কয়েক হাত উপরে অবস্থান করছে। উচ্চতা বেশি না হলেও সবার অবস্থা মোটামুটি কাহিল। মাঝে মাঝে বাতাসের শব্দ পাওয়া গেলেও গাছপালা পার করে আমাদের শরীর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেনা বলে কষ্টটা বেশি হচ্ছিল। তাছাড় আলসে বনে যাওয়া শরীর হঠাৎ এমন চাপ সইতে চাইছেনা। বন্ধু সোনিয়ার অস্বস্তি কিছুটা বেশি হওয়ায় গাইডসহ ওকে বসিয়ে রেখে গাইডের থেকে পথ নির্দেশনা নিয়ে যাত্রা শুরু হলো চূড়ার পথে। খানিকটা এগোতেই দেখলাম রাস্তা দুই দিকে বেঁকে গেছে, রাস্তা বলতে তেমন করে আলাদা করা যায় না কষ্ট করে বুঝে নিতে হয়।

পাহাড়ি জঙ্গলের পথে একটু দেখে পা ফেলা

প্রথমেই গাইডের নির্দেশমতো ডানের রুটে চলা শুরু করলাম, আধা ঘণ্টা চলার পর পথ শেষ হয়ে গেল। চিপস আর জুসের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারলাম জায়গাটায় আমাদের আগেও অনেকে এসেছে। জায়গাটার একটা ভিউ পয়েন্ট আছে বটে তবে তেমন কিছু নয়। গাইডের মতে এটাই চূড়া কিন্তু চূড়া হিসেবে স্থানটিকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। অগত্যা ফিরতি পথ ধরে ফিরে এসে ফেলে যাওয়া বামের রুটটা ধরলাম। আমাদের গাইড বামের পথটায় যেতে বারণ করেছিল, বলেছিল এই পথ অনেক ভিতরে নিয়ে যাবে আর সময়ও লাগবে অনেক বেশি। মাথায় তখন চূড়ায় যাবার নেশা, হাতরে-পাতরে জঙ্গল সরিয়ে আমাদের এডভেঞ্চার চলতে থাকলো। পথিমধ্যে রাজন তার মোবাইলে ডাউনলোডকৃত ম্যাপে চূড়া খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। আমি আর বন্ধু মনির হাঁটু সমান জঙ্গল পেরিয়ে চলা শুরু করে দিয়েছি। পিছন থেকে রাজন আমাদের গাইড করছে। খানিকক্ষণ চলার পর খুব সুন্দর একটা বাঁশবাগান পড়লো, বাগানের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বাঁশবাগানে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুলে আবার যাত্রা উঠতে লাগলাম, জায়গাটা কিছুটা অন্ধকার এবং সুনসান। এবার রাজন আমাদের আগে আগে চলতে লাগলো, বাঁশবাগান পেরিয়ে খানিক উঠতেই খোলা আকাশের দেখা পেলাম। রাজনের ম্যাপ অনুযায়ী এটাই চূড়া। চারিদিকে তাকিয়ে আর কোন পাহাড়ের উঁচু দেখতে পেলাম না। জায়গাটা একেবারে জঙ্গলে ভর্তি, মোটামুটি কোমর সমান জঙ্গল। পুরো এলাকাটা হাতি তছনছ করে রেখেছে, হাতির মল চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাঁশের ঝাঁড় পর্যন্ত মুচড়ে রেখেছে, ধ্বংসের চিহ্ন দেখে হাতির বিশালতার ধারণা পেলাম। ডানে-বামে কিছুটা ঘুরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। নিচে সোনিয়াকে বসিয়ে রেখে এসেছি প্রায় ঘণ্টা দুয়েক হলো। রাজন আরও খানিকা এলাকা ঘুরে দেখতে চাইলেও বারণ করলাম পাছে আবার বুনো হাতির পাল্লায় পড়ি। ফিরতি পথে লক্ষ্য করলাম জোঁক আমার পায়ে চুম্বন এঁকেছে আর সেই খুশিতে আমার পা থেকে গড়িয়ে পড়ছে তাজা রক্তের ধারা। পাহাড়ে আসি প্রকৃতির ভালবাসায় আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারি না বলে আর পাহাড়ে আসলে এরকম দু-একটা ভালবাসার নিদর্শন একেবারে অযাচিত নয়।

পাহাড়ি পথ

মাথায় করে গনগনে সূর্য নিয়ে নিচের দিকে নামছি। গাছপালার থাকলে তো সমস্যা নেই, তবে ন্যাড়া অংশে পৌঁছলে চামড়া পুরিয়ে দিচ্ছে সুর্যি মামা। ইতিমধ্যে পানিও শেষ। তড়িঘড়ি করে নেমে এসে গাইডকে বললাম পানির ব্যবস্থা করতে। গাইড বোতল হাতে নিয়ে লাফিয়ে চলে গেল ছড়ার দিকে পানি আনতে। নিকটস্থ ছড়া থেকে পানি নিয়ে আসার পর সেই পানিতে তৃষ্ণা মিটিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিরবো ছড়ার পথ দিয়ে। গাইড দা দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করতে করতে আমাদের নিয়ে চললো। পথ একেবারে খাড়া নিচের দিকে, পথ বলতে তো কিছু নেই। গাইড যেদিক দিয়ে নামাচ্ছে আমরা সে পথেই নামছি। কিছু কিছু জায়গার তো মাটি বেশ আলগা আবার কোথাও খানিক পিচ্ছিল, বেশ সাবধানে নামতে হচ্ছে আমাদের। বেশ অনেকক্ষণ খাড়া উঠা-নামার পর আমরা পাহাড়ি ঝিরি বা ছড়াতে এসে পরলাম। তৃষ্ণার্ত আমরা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার এবং চলমান পানির ধারা থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করলাম। অতঃপর খানিকক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে ছড়ার ঠান্ডা পানির মধ্য দিয়ে ফিরতে থাকলাম। পথে অনেক মানুষ দেখতে পেলাম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কাজ থেকে ফিরছে। কয়েকজনের সাথে কথাও হলো, অনেকেই কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞসা করলো আমরা কালাপাহাড়ে গিয়েছিলাম কি না!

পাহাড়ি ছড়া বা ঝিরিপথ

বৃষ্টি তেমন না হওয়াতে ছড়ায় তেমন পানি নেই। ছড়ার পানিতে গোসল করতে চাই যেনে গাইড একটা অপেক্ষাকৃত গভীর অংশে নিয়ে গেল যেখানে বেগুনছড়া পুঞ্জির লোকজন গোসল করে। খুব বেশি গভীর নয়, কোন রকম গা ভেজানো যায় আর কি, তাতেই আধা ঘণ্টার উপরে শুয়ে থাকলাম। সবার গাত্রদাহ কমলে কাপড় পাল্টিয়ে দ্রুত পা চালাতে থাকলাম। ততক্ষণে আকাশ নিকষ কালো হয়ে এসেছে, নির্ঘাত ঝাপিয়ে বৃষ্টি নামবে……

   

রমজানের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্প



কেএম শাহাবুদ্দিন শিহাব, উপজেলা প্রতিনিধি (কলাপাড়া-পটুয়াখালী)
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৮-২০টি পেশার ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

দীর্ঘ এক মাস রমজান উপলক্ষে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। আর এতে করে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে হয়েছে কুয়াকাটার পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীদের। রমজানের পর এই মন্দা এবার কাটতে শুরু করেছে। এবারের ঈদ ও বাংলা নববর্ষের দীর্ঘ ছুটিতে অর্থনৈতিক লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখে কুয়াকাটার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গত কয়েক দিনের মতো মঙ্গলবারও (১৬ এপ্রিল) দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সৈকতের চায়ের দোকানি থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেলসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে ছিল ব্যস্ততার ছাপ। দম ফেলানোর সময় নেই কারোরই। যে যার মতোন করে পর্যটকদের সেবায় সময় কাটাতে দেখা গেছে।

স্থানীয় শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ী মো. রাসেল মৃধা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমার দোকানে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ উঠাইছি। রমজানে বেচাকেনা না হওয়ার কারণে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ঈদের দিন থেকে এই পাঁচ, ছয় দিনে আমার ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে! মহাজন কিছু টাকা পেতো দিয়া দিছি। এখন আমি চিন্তামুক্ত’!

এ রকমই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাসেল মৃধার পাশাপাশি ঝিনুক দোকানদার মো. শাহিন, আচারের মো. মহিবুল্লাহ, ফ্রাইয়ের মোহাম্মদ তৈয়ব আলিসহ সৈকতের ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ শাওন দীর্ঘ ১ মাস পর লাভের মুখ দেখতে পারায় খুশি। আনন্দিত কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা।

সৈকতের ফটোগ্রাফার মো. শাওন আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সৈকতের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করি। একমাস আয় বাণিজ্য বন্ধ ছিল। বাচ্চাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা তেমন করতে পারিনি। যেটুকু কিনছিলাম, অর্ধেক টাকা বাকি রেখে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ, ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত আমি প্রায় ৯ হাজার টাকা ইনকাম করেছি। দোকানে কিছু টাকা পেতো, পরিশোধ করেছি। এখনো কয়েকজন লোক আছেন। এখন যা ইনকাম করবো, তার থেকে কিছু সঞ্চয় করতে পারবো, ইনশাল্লাহ’!

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন আবাসিক হোটেল এবং খাবার হোটেলের কর্মচারীরা। শতভাগ বুকিং ছিল কুয়াকাটার ১ম শ্রেণির হোটেলগুলোতে এবং ২য় শ্রেণির হোটেলগুলোতেও ৬০ থেকে ৭০ পার্সেন্ট বুকিং ছিল।

আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান রাসেল বার্তা২৪.কে বলেন, রমজান মাস জুড়ে হোটেল খালি ছিল। রমজানে স্টাফ বেতন ও বিদ্যুৎ বিলসহ লাখ লাখ টাকা লোকসান। তবে ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকের সংখ্যা ছিল অনেক। ঈদের ছুটিতে আমাদের শত ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। এ সপ্তাহের পুরোটাই শতভাগ বুকড।

হোটেল কানসাই ইনের ম্যানেজার মো. জুয়েল ফরাজী বলেন, ‘আমার হোটেলে সিঙ্গেল, ডাবল মিলিয়ে প্রায় ২০টি রুম রয়েছে। আমি ঈদের এই চার পাঁচদিনে গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার করে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মালিক পক্ষকে দিয়েছি। এটা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সাহায্য করবে’।

কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত, ছবি- বার্তা২৪.কম

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা’র (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের বিক্রি বেড়েছে। সবাই এখন লাভের মুখে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, ‘প্রতিটি হোটেল- মোটেলের প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং ছিল। রমজানের ঘাটতি শত ভাগ পুষিয়ে উঠতে না পারলেও আমরা শতকরা ৭০ ভাগ সমস্যা কাটিয়ে উঠছি। এখনো পর্যটকেরা ফোনে রুম বুকিং দিচ্ছেন। আশা করি, এ সপ্তাহেই দীর্ঘ এক মাস রমজানের সময়টাতে যে লোকসান ছিল, সেটা শত ভাগ কাটিয়ে উঠতে পারবে আমাদের হোটেল-মোটেলগুলো’।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পুলিশ সুপার মো. আনসার উদ্দিন বলেন, ‘কুয়াকাটাতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হন, সে ব্যাপারে আমরা সর্বদা সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। যে সব পর্যটক কুয়াকাটাতে এসেছেন, তাদের জন্য নিশ্চ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখানে পোশাকে এবং সাদা পোশাকেও আমাদের লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। কুয়াকাটার সি-বিচকে (সমুদ্র সৈকত) সুরক্ষিত রাখার জন্য এবং পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর’!

তিনি আরো বলেন, ‘ইতোপূর্বে, বিচ ম্যানেজমেন্টের (সমুদ্র সৈকত ব্যবস্থাপনা) একটু সমস্যা ছিল। আমরা সেটাকে সুন্দরভাবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করেছি। আমরা পুরা বিচটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।

এখানে যারা স্টেক হোল্ডার রয়েছেন, আমরা তাদের সুন্দর-সুশৃঙ্খলার ভেতরে নিয়ে এসেছি। দেশি-বিদেশি সব পর্যটককে নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তায় কুয়াকাটায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি’! 

;

অসাধারণ এক ভ্রমণক্লান্ত দিবসের কাহিনি



অঞ্জনা দত্ত
ব্লু টেম্পলের সামনে লেখক

ব্লু টেম্পলের সামনে লেখক

  • Font increase
  • Font Decrease

অবাক লাগছে নিশ্চয়ই। দু'দুটো বিপরীতমুখী বিশেষণ দেখে! আসলেই তাই ছিল যে। শুনুন তাহলে। সাধারণত ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর নিয়ে কিছু লিখি না। তার একটি কারণ আমাদের দেশ থেকে বলতে গেলে অনেকেই বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সকাল-বিকাল ব্যাংককে আসেন। শুধু ব্যাংকক শহরেই নয়, থাইল্যান্ডের সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ অগুনতি  দ্বীপে বেড়াতে যান অনেকে। এবারে দীপ্ত (পুত্র) আর মাম্পির (পুত্রবধূ) সঙ্গে সময় কাটাতে এলাম সপ্তাহ তিনেকের জন্য। এর আগে এত লম্বা সময়ের জন্য ব্যাংককে কখনো আসা হযনি। মেয়ে জামাইও আমরা থাকাকালীন তাদের পরীদের নিয়ে এলো সপ্তাহখানেকের জন্য। অনেক বছর পর এক ছাদের নিচে দুর্দান্ত সময় কাটালাম পুরো পরিবার।  

ব্যাংকক বেশ গোছানো শহর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তবে একেক সময় রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম বিরক্তির উদ্রেক করে। অবশ্য  যারা ঢাকা থেকে আসেন, তাঁদের জন্য এই জ্যাম কিছুই না। বলতেই হয় থাইল্যান্ডের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে সহস্রাধিক দ্বীপে। তবে সব দ্বীপই এখনো বাসযোগ্য নয়। আবার বাসযোগ্য দ্বীপের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। এর বাইরে রয়েছে ব্যাংককের আশেপাশেই সুন্দর ছোটো ছোটো অতুলনীয় সৌন্দর্যমন্ডিত শহর। এইরকম দুই একটা শহরে গিয়ে সবুজের সমারোহ দেখে মোহিত হয়েছিলাম।

লিখছি এখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ চিয়াংমাই শহরের কথা। চিয়াংমাই পি কে ডি’র (প্রদীপ কুমার দত্ত) সঙ্গে আগেও একবার গিয়েছিলাম। তবে সময়টা কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। কোথায় কোথায় গিয়েছিলাম তার কতক মনে আছে, আবার কিছু কিছু জায়গার কথা মনে নেই। গোল্ডেন ট্রায়াংগেল ট্যুর এবং অনিন্দ্যসুন্দর হোয়াইট টেম্পলের কথা ভুলিনি। এবার এর বাইরে যা দেখেছি সেটি যেন রূপকথাকেও হার মানায়।

মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার পূর্বে চিয়াংমাই সম্পর্কে দু’এক কথা না বললে অবিচার করা হবে। চিয়াং মাই নামের অর্থ হলো নতুন শহর। এটি ব্যাংককের উত্তরে সাতশত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আবার দেশটির সর্বোচ্চ পর্বতমালার নিকটবর্তী। নতুন শহর মানে এই নয় যে, খুব বেশি সময় হয়নি শহরটির উত্থান ঘটেছে।  চিয়াংমাই প্রাক্তন রাজধানী চিয়াং রাইয়ের উত্তরসূরি, ল্যান না- এর নতুন রাজধানী হিসাবে ১২৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চল। এখানে সারা বছর তাপমাত্রা উষ্ণ থেকে গরমের হলকার মতো হয়ে থাকে। ব্যাংককেও যেমন দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম থাকে, তবে অনেক সময় বিকেল হতে হতে তাপমাত্রা কমে আসে, চিয়াংমাইতেও অনেকটা তাই। এই গরমের কারণে প্রথমদিন দিনের প্রথমার্ধে বের হইনি। শ্বশুর আর পুত্রবধূ ঘুরে এসেছিল। পরে পি কে ডি জানাল ঐসব জায়গায় আগে যখন এসেছিলাম, তখন গিয়েছিলাম। আমার অবশ্য সেসব কিছুই মনে পড়েনি। গত বছর মাম্পিরা ইংরেজি নববর্ষের ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। ওখানে পৌঁছানোর পরপরই দীপ্ত খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে এক দুঃসহ সময় গিয়েছিল, যেমন ওদের জন্য চিয়াংমাইতে, তেমনি আমাদের নিজ বাসায়। দুইদিনের মধ্যে ওরা ফিরে এলো ব্যাংককে। সে এক বিরাট ইতিহাস।

ব্লু টেম্পলের অভ্যন্তরে প্রদীপ কুমার দত্তের সেলফোনে ফ্রেমবন্দি হচ্ছেন লেখক

ব্যাংকক থেকে চিয়াংমাই যেতে আকাশপথে লাগে ষাট মিনিটের কিছু বেশি। হোটেল আগেই বুকিং দেয়া ছিল। গোল্ডেন ট্রায়াংগেল, হোয়াইট টেম্পল, ব্লু টেম্পল মিলে একটা ট্যুরের বুকিংও দেয়া ছিল। এগুলো অবশ্য মাম্পির ডিপার্টমেন্ট। ওই গুগল ঘেঁটে কয়েকটা ট্যুর কোম্পানির ট্যুর প্ল্যান দেখে কনফার্ম করে নিল। যাওয়ার তারিখ ছিল ২২ মার্চ। শুক্রবার।  দীপ্ত অফিস করে ওখান থেকেই এয়ারপোর্টে চলে যাবে। আমরা বাসা থেকে চারটা নাগাদ বের হবো। কুড়ি তারিখে পি কে ডি হৈচৈ শুরু করে দিল। চিয়াংমাই তো একবার গিয়েছি। আবার যাওয়ার কী হলো? চব্বিশ তারিখ আমার ওয়েবিনার আছে। ঠিক সময়মতো যদি পৌঁছাতে না পারি তাহলে কী হবে? 

দীপ্ত জানাল টিকেট হয়ে গেছে। আর তোমার প্রোগ্রামের অনেক আগেই পৌঁছে যাব বাসায়। এই কথায় নটরাজ হতে গিয়েও হতে পারল না পি কে ডি। নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছে গেলাম চিয়াং মাই’তে। হোটেলে যেতে যেতে মাম্পি পি’কে ডিকে বলছিল বাবা আগামীকাল সকালে ব্রেকফাস্ট করে আমি আর আপনি বের হয়ে যাব। ওদিকে একটা মন্দির আছে। অনেকগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। মা পারবেন না ( আহা বধূ মাতা এত্তো ভালো! দারুণ হবে। ব্রেকফাস্ট সেরে আর এক রাউন্ড ঘুমিয়ে নেয়া যাবে)। দীপ্ত রয়ে গেল হোটেলে। তবে প্রথমদিনের আরাম বধূমাতা তুলে নিল পরের দিন সকাল সাড়ে ছয়টায় ট্যুর বুক করে। কেমন লাগে বলুন তো? 

রাতেই রিসেপশনে বলে রাখল সাথে ক্যারি করার মতো কিছু খাবার যেন আমাদের জন্য তৈরি করে রাখে। কেননা ব্রেকফাস্ট করার সময় পাওয়া যাবে না। জীবনে মনে হয় এই প্রথম সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম কোনোরকম ন্যাকামি ছাড়া বা গাল না ফুলিয়ে। নিজেই অবাক হলাম। স্নানটান সেরে পুরো তৈরি। পি কে ডি’কে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। গোল্ডেন ট্রায়াংগেল এবং হোয়াইট টেম্পল আগেই দেখা ছিল। ব্লু টেম্পলের নামই শুনিনি। গাড়ি ডেকে আমরা ট্যুর কোম্পানির অফিসে গেলাম। বেশ ঝকঝকে দুটো গ্রে কালারের গাড়ি দেখলাম দাঁড়ানো। শুনলাম আমরা ছাড়াও আরও দুজন যাবে এই গাড়িতে। কেমন হবে সহযাত্রী কে জানে?

ট্যুর কোম্পানি আমাদের নাম ঠিকানা পাসপোর্ট নাম্বার লিখে রাখল। শেষ পর্যন্ত বাকি দুজন এলো না৷ এর আগেই আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি দেখেই ভোরে ওঠার কষ্ট নিমেষে কেটে গেল৷ আর ভিতরে উঠে বসার পর তো মনে হলো আহা জীবন কী সুন্দর! দশ সিট বিশিষ্ট Hiace Microbus আমাদের দেশে যেমন দেখা যায়। এতবড়ো গাড়িতে আমরা চারজন। এখানে সব গাড়িই ঝাঁ চকচকে। কোনো গাড়ি দেখলাম না গায়ে দাগ বা থোবড়ানো দেহ নিয়ে। সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলেন ট্যুর গাইড। ভদ্রমহিলার বয়স পঞ্চাশও হতে পারে,আবার ষাটও হতে পারে। মঙ্গোলীয় বর্ণের মানুষদের এই এক সুবিধে। বয়স বোঝার উপায় নেই।

প্রথমেই দু'হাত জোড় করে নমষ্কার জানালেন থাই সিস্টেমে এবং বয়স ভেদে দু'হাত জোড় করে কোথায় আঙুল রাখতে হয় ...  আর মন্দিরে গৌতম বুদ্ধকে কীভাবে প্রণাম করতে হয় তার নিয়মও বিস্তারিত বললেন। গাড়ি ছুটে চলল নখের পিঠের মতো মসৃণ রাস্তা দিয়ে। আমার তো অস্বস্তিই লাগছিল গর্ত নেই, স্পিড ব্রেকারে ড্রাইভারের অসতর্কতার জন্য গাড়ি লাফিয়ে উঠছে না...  আমাদের মাথা ঠুকে যাচ্ছে না বা হার্ড ব্রেক করতে হচ্ছে না ...  এ কেমন দেশ! এই দেশের ইঞ্জিনিয়াররা কোথায় পড়াশোনা করেছে? কী পড়েছে ওরা? ধ্যাত্তেরিকা! কোনো মানে হয় এমন রাস্তা বানানোর? ঠিকাদাররাও কেমন পানসে টাইপের। সব কাজ ঠিকঠাক মতো করে রেখেছে! 

এখানে তৈরি হয় মহামতি গৌতম বুদ্ধের মূর্তিসহ নানা নন্দন সামগ্রী
 

ঘন্টা খানেক পরে থামলাম একটা জায়গায়। ওখানে হট স্প্রিং রয়েছে। সকালে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম। ও হ্যাঁ, আমাদের বাড়বকুন্ডে একটা মিহি বেগে নেমে আসা উষ্ণ প্রস্রবণ আছে কিন্তু। আমাদের আগে অনেক ট্যুরিস্ট ওখানে পৌঁছে গেছেন। আর সবাই জুতো খুলে গরম জলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে? আমরাও জুতো ছেড়ে ওখানে পা ডোবাতে বসে পড়লাম। আর আমার খুব ভালো লাগে গরম জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে। ভাইরে ঠ্যাকায় পড়ে রে। ঠ্যাকায় পড়ে। এমনি এমনি এমন রাজসখ জন্মায়নি। পায়ের আঙুলে ক্র্যাম্পে প্রায় কষ্ট পাই। এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে...  বেশ কিছুক্ষণ গরম জলের তাপ নিয়ে চনমনে মুড নিয়ে উঠলাম। ট্যুর গাইড পা মোছার জন্য টিস্যু পেপার এগিয়ে দিলেন।

গরম পা নিয়ে মনে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব নিয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এবারের যাত্রা হোয়াইট টেম্পলের দিকে। হোয়াইট টেম্পল বা বাংলায় সাদা মন্দির, এই মন্দিরকে থাই ভাষায় বলা হয় 'ওয়াট রং খুন '। এটা চিয়াং রাই প্রদেশে অবস্থিত। চিয়াং মাই থেকে এর দূরত্ব ১৮৫ কিলোমিটার। উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে যেতে দু'ঘন্টা সময় নিল। এই সাদা মন্দিরে অনেক বছর আগে এসেছিলাম। সূর্যের আলোয় পুরো মন্দির চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল।

এবারে ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখলাম কীভাবে মন্দিরের স্ট্রাকচার বানানো হয়। কয়েকটি ছবি দিচ্ছি। সাদা সিমেন্ট দিয়ে পাতলা কাঠের ওপর ডিজাইন অনুযায়ী স্ট্রাকচার বানিয়ে নেয়। কাঠের পিছনে কয়েকটি জায়গায় এক ইঞ্চি করে কেটে রাখে। যখন সিমেন্ট শুকিয়ে যায় তখন ঐ কাঠের কাটা জায়গার ওপর চাপ দিয়ে সিমেন্টের স্ট্রাকচার আলাদা করে নেয়। (ক্রমশঃ)

লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক 

;

সাজেদুর রহমান শাফায়েত ঘুরে দেখতে চায় দুনিয়া



বেলায়েত হুসাইন
ভ্রমণপিপাসু তরুণ সাজেদুর রহমান শাফায়েত, ছবি : সংগৃহীত

ভ্রমণপিপাসু তরুণ সাজেদুর রহমান শাফায়েত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্রমণপিপাসু তরুণ সাজেদুর রহমান শাফায়েত। জন্ম চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানায় রহিমানগরের সাত বাড়িয়া গ্রামে। সে ছোট থাকতেই ঢাকায় চলে আসে তার পরিবার। সেই থেকে ঢাকায় থাকা হচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, তার বাবাও ঘুরতে বেশ পছন্দ করেন, সেই অভ্যাসটা শাফায়েত পেয়েছেন। ভ্রমণ তার বেশ প্রিয়, পড়াশোনার পাশাপাশি বেড়ানোটা তার নেশা। ভ্রমণের নেশা থেকেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে চলেছেন বাংলাদেশি এই তরুণ।

পাহাড় তার বেশ প্রিয়, তাই অবসর পেলেই ছুঁটে যান খোলা আকাশের নীচে পাহাড়ের বুকে; যেখানে গেলে ছোঁয়া পাওয়া যায় মেঘেদের। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত তাজিংডং থেকে নিয়ে কেওকারাডং, মেরাইথং ও বান্দরবানের থানচিসহ আরও বহু জায়গা ঘুরে দেখেছেন।

ট্রেইলও করেছে বহু জায়গা। হরিণমারা ট্রেইল, হামহাম ঝর্ণা, বাঁশবাড়িয়া বিলাসী ট্রেইল, মধুখাইয়া ট্রেইল, বোয়ালিয়া ট্রেইল, ছোটো কমলদেহ ট্রেইল, বড় কমলদেহ ট্রেইল, মেলখুম ট্রেইলসহ আরও অনেকগুলো- যেগুলো নেট দুনিয়ায় খুব কমই দেখা যায়, সেসব জায়গাগুলোতেও বেশ ট্রেইল করেছেন।

দেখেছেন নানারকমের ঝর্ণা, আরও গিয়েছেন বহু জায়গায়। যেমন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, খুলনা, ভোলা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, বান্দরবান, নাটোর, যশোর, ঝিনাইদহ, বরিশাল, সিলেট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, ফেনী ও কুমিল্লাহসহ আরও অনেকগুলো জেলা ঘুরে দেখেছেন এই তরুণ।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখনও তার ভ্রমণ করা হয়নি, তবে তার ইচ্ছা দেশের বাইরে ভ্রমণে। সেক্ষেত্রে প্রথম গন্তব্য হবে বায়তুল্লাহ। প্রাণভরে দেখা মক্কা-মদিনার অলি-গলি, যে মাটির পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাসের নানা উপাদান।

শাফায়েতের ফেইসবুকে একটা পেইজ আছে, নাম ট্রাভেল বাই শাফায়েত। সেখানে সে ভ্রমণের স্মৃতিগুলো শেয়ার করে বন্ধুদের সঙ্গে। ভ্রমণের পাশাপাশি সাজেদুর রহমান শাফায়েত ব্যবসা করেন। লিবাসুস সুন্নাহ নামে রয়েছে তার একটি পাঞ্জাবির ব্র্যান্ড, সঙ্গে রয়েছে ইলেভেন নামে আরও একটি ব্র্যান্ড। এগুলো সব তার স্বপ্নের ব্র্যান্ড, অনলাইন এক্টিভিস্ট শাফায়েতের বেশ পরিচিতি রয়েছে।

ভ্রমণ আর নিজের ব্র্যান্ডগুলো সামলে বাবার ব্যবসাও দেখাশোনা করেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলার পর মনে হবে, মানুষটি জন্ম নিয়েছেন শুধুই ঘুরাঘুরির জন্য। তার মন-মানসিকতা সবকিছুতেই ভ্রমণের নেশা। তার ঝুঁলিতে রয়েছে ভ্রমণকালীন সময়ের নানা রোমাঞ্চকর গল্প। জয়ের নেশায় ভ্রমণের কষ্ট জয় করা এই তরুণের জীবনে সব থেকে সেরা ট্রেইল ছিলো- নিষিদ্ধ আন্ধারমানিক। যেটা বান্দরবানে অবস্থিত। যেখানে ছিলো না কোনো নেটওয়ার্ক না ছিলো কোনো ইঞ্জিন চালিত গাড়ি। পাহাড় আর জিরি পথ সেখানে। ভ্রমণপিপাসু এই মানুষটির জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে যাক বহুদূর। শাফায়েত ঘুরে দেখতে চায় দুনিয়া নিজের চোখে।

;

ইবনে বতুতার উক্তির প্রতিচ্ছবি দুসাই রিসোর্ট!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মৌলভীবাজার থেকে ফিরে: ইবনে বতুতার সেই বিখ্যাত উক্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে- ‘দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’! ইবনে বতুতা বাঙলাকে ‘ধনসম্পদে পরিপূর্ণ নরক’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

‘দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ এলাকায় অবস্থানকালে বারবার ইবনে বতুতার সেই বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়েছে। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরা নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকেই।

মৌলভীবাজারে অবস্থিত পাঁচতারকা মানের দুসাই রিসোর্ট বলতে গেলে এককাঠি সরেস! কতকগুলো টিলার সমন্বয়ে গড়া রিসোর্টটির নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক ডিজাইনের স্থাপনা মুদ্ধতায় মেড়ানো। পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে নানান উপভোগ্য উপাদান।

নিরিবিলি পরিবেশ, পাখির কলতান বাহারি বৃক্ষরাজি, সত্যিই মোহনীয় করে তুলেছে রিসোর্টটি! কিন্তু সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে যারপর নাই হতাশ ভ্রমণ পিপাসুরা! ক্ষেত্র বিশেষে তিন-তারকার চেয়েও খারাপ সেবার মান। আর স্টাফদের আচরণ এবং শব্দচয়ন বলাই বাহুল্য!

১৮ ফেব্রুয়ারি (২০২৪) রাত ৯টায় যখন রুমে ঢুকছি, পিছু পিছু হাজির রুম সার্ভিসের লোক। তার হাতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সাইজের কাগজ। বললেন, এখানে স্বাক্ষর দিয়ে দিতে হবে। হাতে নিয়ে দেখি, তাতে রুমের মধ্যে থাকা টাওয়েলের সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। অনেকটা চুক্তিনামার মতোই কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া-

- চেক আউটের সময় টাওয়েল বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন অবস্থানকারী অতিথি

টাওয়েল হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই কাগজে।

আমাদের দলে প্রায় ৪০ জনের মতো সদস্য ছিলেন। প্রায় সবাই খুবই বিরক্তি প্রকাশ করলেন। এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী খানিকটা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘দুনিয়ার আর কোথাও কোনো হোটেলে এমন দেখিনি’!

হোটেল বয়টি জবাব দিলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই! কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে, আমরা শুধু হুকুমের গোলাম’! রুম সার্ভিসের ছেলেটি নাছোড়বান্দা, স্বাক্ষর না নিয়ে ছাড়লেন না। ফজলে রাব্বী খানিকটা মজা করার জন্য বললেন, ‘আপনারা কোথায় টাওয়েল রেখেছেন এনে দেখান; তারপর আমি স্বাক্ষর দেবো। না দেখে তো স্বাক্ষর দিতে পারি না’! তখন হোটেল বয়টি বাথরুম থেকে টাওয়াল এনে দেখিয়ে স্বাক্ষর নেন।

বিষয়টি নিয়ে একচোট হাস্যরস হয়ে গেল। একজন তো টিপ্পনি কেটে বললেন, ‘ভাই, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে কী লাভ হবে! স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তখন কেউ অস্বীকার করলে, আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবেন’।

বিষয়টি নিয়ে এজিএম (ফুড অ্যান্ড বেভারেজ) নাজিম সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি প্রথমে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলেন। এখানে নানান ধরনের লোকজন আসে তো, তাই!

ভদ্রলোকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশের বাইরে বিশাল অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। এবার তার কাছে প্রশ্ন ছিল, বিশ্বের আর কোনো হোটেলে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় কিনা! জবাবে বললেন, আমার জানামতে কোথাও নেই। এখানে মালিকপক্ষ মনে করেছে, তাই বিষয়টি রেখেছে। আমাদের কিছুই করার নেই!

দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার স্বপ্না চক্রবর্তী ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার জিন্নাতুন নূর সিনথিয়া ছিলেন সেই ট্যুরের সহযাত্রী।

সিনথিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওদের স্টাফদের ম্যানার শেখানো উচিত।

কথিত 'পাঁচতারকা' মানের 'দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা'-র জরাজীর্ণ ছাদ 

স্বপ্না চক্রবর্তীর ব্যাগে রুমের চাবিটি পাওয়া না গেলে স্টাফদের সাহায্য নিয়ে তালাটি ভাঙা হয়। রুমের তালা ভেঙে নিয়ে নিচে গিয়ে সে কী হাসাহাসি তাদের! একজন আরেকজনের সঙ্গে চর্চা শুরু করে দেন। তাদের সেই তাচ্ছিল্য কথাবার্তা রুম থেকেই কানে আসছিল। একবার মনে হয়ে, নিচে গিয়ে কষে থাপ্পড় দেওয়া উচিত!

সিনথিয়া বললেন, রুম থেকে খাবার অর্ডার দিতে যাবো। তাদের যে শব্দ চয়ন, কোনো পাঁচতারকা হোটেলের সঙ্গে যায় না! তাদের কথাবার্তায় কোনোরকম সৌজন্যতাবোধ পাইনি। রুমের মধ্যে যে আয়না রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা উচিত। এখানে সেটি অনুপস্থিত।

বাথরুমের স্পেস কোনোভাবেই পাঁচতারকা কোয়ালিটির নয়। কমোডে বসলে কনুই ঠেকে যাবে বেসিনের ফিটিংসে!

পাঁচতারকা মানের হোটেলের কমোডে দুই কনুই পর্যন্ত ফ্রি আর গোসলের সময় দুই হাত প্রসারিত করার মতো পর্যাপ্ত স্পেস থাকতে হবে। যদি কমোডো বসে কনুই পর্যন্ত ফ্রি স্পেস এবং গোসলে দুই হাত প্রসারিত না করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, তাহলে সেটিকে ‘পাঁচতারকা’ সনদ দেওয়া হয় না।

লাগেজ পেতে অনেককেই অপেক্ষা করতে হয়। লাগেজ রুমে দিয়ে যাওয়ার কথা।

লাগেজ না-পেয়ে ২০ মিনিট পরে ফোন করলে রিসিপশন থেকে উত্তর এলো- ‘একটু সময় লাগতেই পারে। এতে অস্থির হওয়ার কিছু নেই’!

পরদিনও লাগেজের ক্ষেত্রে একই ধরনের অভিজ্ঞতা শিকার হতে হলো, কাউকে কাউকে। দুপুর পৌঁনে ১২টার সময় চেক আউটের পর বলা হলো, ‘আপনি লাগেজ রেখে যান। আমরা রিসিপশনে পৌঁছে দেবো’।

দেড়টার দিকেও লাগেজ পৌঁছার নাম নেই। রিসিপশনে বলেও কাজ না হওয়ায় কেউ কেউ ফিরে গিয়ে লাগেজ নিয়ে এলেন। রিসিপশন ও কক্ষগুলো ভিন্ন ভিন্ন টিলায় হওয়ায় এগুলো টেনে নেওয়া কিছু কষ্টকর। গলফকারে যাত্রী ও তাদের লাগেজ আনা নেওয়া করা হয় এক টিলা থেকে অন্য টিলায়।

মনে হলো, দেখি তো অন্য ভ্রমণকারীরা কেমন রিভিউ দিয়েছেন, নাকি আমার কপালেই মন্দ ছিল।

কথিত 'পাঁচতারকা' মানের 'দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা'-র সোফা! গা ঘিন ঘিন করা নোংরা সোফা

মো. মোতাল্লেব নামের একজন গুগলে রিভিউয়ে লিখেছেন- তাদের সার্ভিসগুলো খুবই বাজে! খুবই খারাপ! যে আকারে হোটেলটা আছে, সেই আকারে কোনো সার্ভিস পাওয়া যায় না! অনেক টাকা নেয়, সেই টাকা অনুযায়ী খাবার-দাবার একদম বাজে! খাবারের ভেতরে কোনো সুস্বাদু না। এই হোটেলের স্টাফ যারা আছে, তারা একবারও ভালো খাবার দেয় না। রুমে অন্ততপক্ষে এক জোড়া স্যান্ডেল থাকা দরকার…’

সেই রিভিউয়ে কর্তৃপক্ষ যে রিপ্লাই দিয়েছে, তাতে আরও বেশি অবাকই হতে হলো। লেখা হয়েছে- আপনার হোটেলের অতিথি হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। তবে আপনার নামের একজন অতিথির ড্রাইভার আমাদের রেকর্ডে রয়েছে। আমরা অতিথি ড্রাইভারের মন্তব্যকে আমলে নিই না!

কী সাংঘাতিক! একজন ড্রাইভারকে তারা মানুষ হিসেবেই গণ্য করছেন না!

লুৎফুন নাহার লিখেছেন- রিসোর্টটা ভালো। রিসিপশনের কর্মচারীদের আচরণ খুবই খারাপ! গেস্টদের সঙ্গে বাচ্চা দেখলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। ছোট বাচ্চাদের জন্য আলাদা পেমেন্ট দিতে হয়। পছন্দের রুম চাইলে তারা দেয় অন্য রুম।

ডা. মো. আহসান হাবিব লিখেছেন- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালো দেখার মতো কিন্তু রুম থেকে টাকা চুরি হয়, যেটা মেনে নেওয়া যায় না! তাই যারা দুসাইতে যাবেন, একটু চিন্তা করে যাবেন অথবা টাকা-পয়সা বাসায় রেখে যাবেন! খুবই জঘন্য অভিজ্ঞতা হইয়াছে দুসাইতে বেড়াতে এসে… জঘন্য, জঘন্য…!

আরেকজন লিখেছেন- সিলেট অঞ্চলে একটি চমৎকার সম্পত্তি (অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকায়)। পরিবেশ ভালো। খুব স্বাভাবিক। বুফে আইটেম সীমিত (দ্য প্যালেস, গ্র্যান্ড সুলতানের মতো কাছাকাছি অন্যান্য সম্পত্তির তুলনায়)। পুলের মধ্যে নোংরা জল এবং পোকামাকড় পাওয়া গেছে। আরো সতর্ক হওয়া দরকার। স্টাফ এবং এক্সিকিউটিভদের আরো শিখতে হবে। ভালো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। দাম প্রত্যাশার সাথে মেলে না। আমরা উপভোগ করেছি, শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে। ব্যবস্থাপনার অনেক উন্নতি প্রয়োজন। আবার দেখার আশা করি এবং উন্নতি আশা করছি।

খাবারের দাম নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে। দামও আবার বেশ চড়া। রুমে থাকা খাবারের মূল্য তালিকার ওপর কাগজ কেটে নতুন মূল্য বসানো হয়েছে। বারবিকিউ চিকেন অ্যান্ড চিজ আগে ছিল ৬৬০ টাকা। তার ওপরে কাগজ কেটে ৭৯৫ টাকা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি খাবারের ওপরেই এভাবে নতুন দরের ট্যাগ বসানো। সঙ্গে দিতে হবে, ২০ শতাংশ সারচার্জ, ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে মানুষ কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করেন। শুধু পরিবেশে উপভোগ্য হলেই পেট ভরে না; পরিবেশের পাশাপাশি প্রয়োজন মানসম্মত ও আন্তরিক সেবা। সেখানে ঘাটতি হলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেন।

দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করতে হলে সেবার মান বাড়ানো জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন ভ্রমণকারীরা।

;