কুকুরের উপর ক্যানসার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হবে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ, ছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হবে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ, ছবি: সংগৃহীত

ওষুধের মাধ্যমে যেভাবে ইনফেকশনকে প্রতিরোধ করা হয়, একইভাবে টিউমারকে প্রতিরোধ করার বিষয়টিকে প্রায় অসম্ভব বলে আখ্যায়িত করবে ক্যানসার কমিউনিটি।

ক্যানসারকে প্রতিরোধ করার বিষয়টি অনেকটা আশা জাগিয়ে আশাভঙ্গের মতো। তবে দশকের পর দশক এই মরণব্যাধি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর চিকিৎসক ও গবেষকেরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, ক্যানসার খুবই ‘পারসোনাল’ একটি রোগ।

বিজ্ঞাপন

এখানে পারসোনাল বলে বোঝানো হয়েছে, মানুষ ভেদে একেকজনের শরীরে মলিকিউলার লেভেল একেক রকমভাবে প্রকাশিত হয় এবং প্রতিটি টিউমার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যার ফলে খুব চতুরতার সাথে এই টিউমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে পারে।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইনোভেশনস ইন মেডিসিনের গবেষক, আবিষ্কারক ও ডিরেক্টর স্টেফেন জনস্টন কুকুরের উপর ক্যানসার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা সম্পর্কে বলেন, ‘এক্ষেত্রে যদি ১০ শতাংশ সম্ভবনাও থাকে, তবে কেন সেই চান্স আমরা নেবো না।’

বিজ্ঞাপন
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/22/1561183809519.jpg
স্টেফেন জনস্টন

 

সম্প্রতি তিনি শতাধিক কুকুরের উপর ক্যানসার ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক টেস্ট শুরু করেছেন। এই ট্রায়ালে দেখা হবে বয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান কুকুরদের মাঝে এই ভ্যাকসিন ক্যানসার দেখা দেওয়া থেকে অথবা ক্যানসার দেখা দেওয়ার সময় পেছাতে কার্যকর হয় কিনা। এখানে যদি সফলতা আসে তবে এই পরীক্ষামূলক কাজ থেকেই মানুষদের জন্য একই ধরণের ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে।

কেন কুকুর?

জনস্টন প্রথমে এই পরীক্ষাটি মানুষের উপরেই করতে চেয়েছিল। তবে খরচ ও অনুমতি সংক্রান্ত জতিলতায় তা আটকে যায়। পরবর্তীতে জনস্টন পশু চিকিৎসক ডো থ্যামের সাথে দেখা করেন, যিনি নিজেও একজন ক্যানসার সারভাইভর এবং স্টেট ইউনিভার্সিটির ফ্লিন্ট অ্যানিমেল ক্যানসার সেন্টারের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ বিভাগের ডিরেক্টর।

থ্যাম বলেন, ‘পূর্ণ বয়স্ক কুকুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো ক্যানসার। তাদের শরীরে খুব দ্রুত টিউমার বৃদ্ধি পায় এবং যার লক্ষণসমূহের সাথে মানুষের শারীরিক অবস্থার মিল পাওয়া যায়।’

তিনি জানান, বেশ কয়েক লেভেলে ক্যানিন ক্যানসার (কুকুরের ক্যানসার) ও মানুষের ক্যানসারের মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা একই বাতাস গ্রহণ করছি, একই পানি পান করছি, একই কেমিক্যালযুক্ত লনে হাঁটাহাঁটি করছি। এমনকি কুকুরও মানুষের মতো দীর্ঘজীবী প্রাণী নয়। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষকেরা আগামী ১০-৩০ বছরের মাঝেই ফলাফল পাবেন, এই ভ্যাকসিন কার্যকর হয় কিনা।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/22/1561183839463.jpg

যে কারণ থ্যাম ও জনস্টন একত্রে সিদ্ধান গ্রহণ করেন, যাকে তারা ক্যানিনের সব চাইতে বৃহৎ ইনটারভেনশন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে অভিহিত করছেন। এটাকে বলা হচ্ছে ‘ভ্যাকসিনেশন অ্যাগেন্সট ক্যানিন ক্যানসার স্টাডি’।

এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুইটি সম্ভাব্য ফলাফল পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন থ্যামিম। প্রথমত, ভ্যাকসিন প্রাপ্ত কুকুরদের মাঝে তুলনামূলক কম ক্যানসার দেখা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, ৯ বছর বয়সী যে কুকুরটির ১০ বছরে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা ছিল, তার ১২ বছর বয়সে ক্যানসার দেখা দেওয়া। সেক্ষেত্রে ক্যানসারকে পিছিয়ে দিয়ে আয়ুকাল বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি ঘটবে।

অবশ্যই তৃতীয় সম্ভবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটা হলো, এই ভ্যাকসিন একেবারেই কাজ না করা।

থ্যামিম দাবি করেছেন এই ভ্যাকসিনে ক্যানসারের জীবাণু থাকবে। ফলে গবেষণায় অংশ নেওয়া ভ্যাকসিন প্রাপ্ত কুকুররা ভ্যাকসিন পাওয়ার পর বেশ কয়েক বছর স্বাধীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে পারবে।