রোহিঙ্গা সংকট সত্ত্বেও রাখাইনে বিনিয়োগে আকৃষ্ট মালয়েশিয়া
'মালয়েশিয়া কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তবে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের এই গণহত্যায় চুপ-ও থাকতে পারে না,' মাসখানেক আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এমন মন্তব্যই করেছিলেন।
শুধু তাই নয়; তিনি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অথবা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।'
এদিকে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা জানান, উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট সত্ত্বেও তারা মিয়ানমারের কৃষিক্ষেত্র এবং অন্যান্য শিল্পে আকৃষ্ট হয়েছেন।
এরই মধ্যে মিয়ানমারে দশম বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বলছে, তারা মিয়ানমারে প্রযুক্তি, নির্মাণ, উৎপাদন, এবং পরিষেবার মতো খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
৩০ আগস্ট ইয়াঙ্গুনে উইন্ডহাম গ্র্যান্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ইভেন্ট চলাকালীন মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার বিজনেস চেম্বারের (এমএমবিসি) সভাপতি গিলবার্ট লি এ কথা জানিয়ে বলেন, এসব ছাড়াও কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া।
লি বলেন, আমি ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মিয়ানমারে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগই এই দুর্দান্ত সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত নন।
আমাদের লক্ষ্য মালয়েশিয়ার পক্ষে মিয়ানমারে ব্যবসায়ের সুযোগগুলো সম্পর্কে আরও জানার এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানো।
এই অনুষ্ঠান মিয়ানমারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা ও সহায়তা করার জন্য দু’দেশের ব্যবসায়ীদের একত্রিত করেছে।
মালয়েশিয়ার শতাধিক সংস্থা এবং দেড় শতাধিক উদ্যোক্তা এ সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন। উপস্থিত দুই তৃতীয়াংশের জন্য এটি ছিল তাদের প্রথম মিয়ানমার সফর।
লি বলেন, ইয়াঙ্গুন সফর করার পরে সেখানকার আসল পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা বুঝতে পারবেন। যে সংবাদগুলো তারা শুনেছেন, তা থেকে আসল পরিস্থিতি যে আলাদা, সেটি তারা বুঝতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
মালয়েশিয়ার ব্যবসা যদি মিয়ানমারে বেশি দিন স্থায়ী হয়, তাহলে উভয় দেশের মধ্যে আরও চুক্তি হতে পারে।
এর ফলস্বরূপ, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে ব্যবসায়ের মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন।
বর্তমানে, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারে মানসম্পন্ন কসমেটিকস, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং নির্মাণ সামগ্রী তৈরি করছে এবং তারা পরিষেবা খাতের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিজাইন শিল্পও পরিচালনা করছে।
মিয়ানমারে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত জাহেরি বাহারিম বলেছেন, এইসব খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে মিয়ানমারে আজিয়াটা বারজায়া, ইএনআরএ, মে ব্যাংক, মুহিববাহ ইঞ্জিনিয়ারিং, নিসান টান চং, পেট্রোনাস এবং টেক্সচেমসহ অনেক মালয়েশিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আমরা মিয়ানমারের এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মপরিধি আরও বিস্তার করার আশাবাদী।
গত কয়েক মাস ধরে এমএমবিসি, মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে বিনিয়োগের অন্যতম পছন্দের জায়গা হিসেবে মিয়ানমারকে সক্রিয়ভাবে প্রচার করেছে। মালয়েশিয়া নিয়ে মিয়ানমারে অসংখ্য রোডশো এই প্রচারে সহযোগিতা করেছে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন আবদুল্লাহ গত এপ্রিলে মিয়ানমার সফর করেছেন এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।
মালয়েশিয়ার সংস্থাগুলো তেল ও গ্যাস, উৎপাদন, পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ, হোটেল ও পর্যটন, রিয়েল এস্টেট, কৃষি, প্রাণিসম্পদ এবং মৎস্য খাতে বিনিয়োগ করেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাইয়ের শেষ অবধি বিনিয়োগ ও সংস্থা প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য থেকে দেখা গেছে, মালয়েশিয়া ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।