মুমিন সরল ও ভদ্র হয়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন সরল ও ভদ্র হয়, ছবি: সংগৃহীত

মুমিন সরল ও ভদ্র হয়, ছবি: সংগৃহীত

মানুষের ভালো-মন্দ পরিচয় নির্ভর করে সুন্দর আচরণের ওপর। ইসলামে সুন্দর আচরণের বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলাম মনে করে, মানুষের জীবনে সুন্দর আচরণ, সৌজন্যবোধ শিক্ষা ও অনুসরণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

কোরআন ও হাদিসে সুন্দর আচরণ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এক হাদিসে তো বলা হয়েছে, মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

কোরআনে কারিমের দৃষ্টিতে সুন্দর আচরণ
কোরআনে কারিমে সুন্দর আচরণের ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে। এখানে সুন্দর আচরণ সম্পের্কে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো-

এক. আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।’ -সূরা আলে ইমরান: ১৫৯

বিজ্ঞাপন

দুই. আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনদের জন্য আপনি আপনার ডানা অবনমিত করুন অর্থাৎ কোমল আচরণ করুন।’ -সূরা হিজর: ৮৮

তিন. কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ জানাবে প্রতিউত্তরে তুমি তাকে তার চাইতে সুন্দর ধরনের সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও।’ –সূরা আন নিসা: ৮৬

চার. আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলবে।’ -সূরা আল বাকারা: ৮৩

পাঁচ. মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়।’ -সূরা নাহল: ১২৫

ছয়. কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, দরিদ্র, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং যারা তোমাদের অধিকারে এসেছে, সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ -সূরা আন নিসা: ৩৬

সাত. কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয়ই তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত সমান হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলো মন্দ কাজ সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়।’ -সূরা বনি ইসরাইল: ৩৭-৩৮

আট. স্বয়ং হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উত্তম নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম মডেল। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি উত্তম নৈতিক চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ -সূরা আল কালাম: ৪

নয়. মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সঙ্গে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে- সালাম।’ -সূরা আল ফুরকান: ৬৩

হাদিসের দৃষ্টিতে সুন্দর আচরণ
পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিসেও সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে এবং দয়া, সহানুভূতি ও কোমলভাবে কথা বলতে বলা হয়েছে।

এক. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘উত্তম কথা বা ভালো কথাও একটি সদকা।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

দুই. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি কখনও অভিশাপকারী, তিরস্কারকারী হতে পারে না। অশ্লীল বাক্যব্যয়ী ও অহেতুক বাক্যব্যয়ীও হয় না।’ –সুনানে তিরমিজি

তিন. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সদকা বা দান-খয়রাত মানুষকে শোচনীয় মৃত্যু হতে রক্ষা করে আর সুন্দর আচরণ আয়ুবর্ধক হয়। সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন।’

চার. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

পাঁচ. ‘যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকেও সম্পূর্ণ রূপে বঞ্চিত।’ –সহিহ মুসলিম

ছয়. রাসূল (সা.) বলেন, ‘মুমিন হয় উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ অর্থাৎ সে বদমেজাজি, বিদ্বেষভাবাপন্ন ও মানুষের সঙ্গে রুক্ষ আচরণকারী হয় না। এটা মুমিনের শান নয়। মুসলমান তো অন্যের সঙ্গে নম্র আচরণ করবে, রুক্ষ আচরণ করবে না।

সাত. রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল।’ -সহিহ মুসলিম

আট. রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি।’ –সুনানে আবু দাউদ

নয়. নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সদকার সওয়াব হয়ে যায়।’ –সুনানে তিরমিজি

দশ. রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সর্বোত্তম ঈমানদার হচ্ছে ওই লোক, যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সে লোকগুলো সর্বোত্তম যারা তাদের স্ত্রী-পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণে অভ্যস্ত।’ –সুনানে তিরমিজি

এগারো. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নেক আমল তো হচ্ছে- উত্তম চরিত্র।’ –সহিহ মুসলিম

বারো. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম নৈতিক চরিত্র ও আচার-ব্যবহারের ন্যায় নেকির পাল্লা ভারী করতে আর দ্বিতীয় কোনো আমল নেই। আর আল্লাহ অশ্রাব্য গালমন্দ ও কটূকথা বলে এমন ব্যক্তিকে খুবই ঘৃণা করেন।’ –সুনানে তিরমিজি

তেরো. হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ হলেন নম্র ও দয়ার্দ্র, তিনি প্রতিটি কাজে নম্রতা ও দয়ার্দ্রতা প্রদর্শন পছন্দ করেন।’ -সুনানে ইবনে মাজা

চৌদ্দ. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়।’ -সুনানে আবু দাউদ