মানুষের বিভিন্ন স্বভাব প্রসঙ্গে আল্লাহর বর্ণনা

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের বিভিন্ন স্বভাব প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনের নানা জায়গায় বর্ণনা দিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

মানুষের বিভিন্ন স্বভাব প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনের নানা জায়গায় বর্ণনা দিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের অনেক স্থানে আল্লাহতায়ালা নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ওইসব বর্ণনায় মানুষে অভ্যাস সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

অবয়ব ও প্রকৃতি: মানুষের অবয়ব ও প্রকৃতি প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে শ্রেষ্ঠতম অবয়বে।’ -সূরা তীন: ৪

বিজ্ঞাপন

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল।’ -সূরা নিসা: ২৮

শিক্ষা: আল্লাহতায়ালা মানুষকে ‘শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ –সূরা আলাক: ৫

বিজ্ঞাপন

কুচিন্তা: কিন্তু মানুষের মন কুচিন্তায় পূর্ণ। এটা আল্লাহ বলছেন এভাবে, ‘তার (মানুষের) অন্তরের কুচিন্তা সম্বন্ধে আমি অবহিত।’ -সূরা কাফ: ১৬

মানুষের সৃষ্টি: মানুষ তার সৃষ্টি সম্পর্কে জেনেও না জানার ভান করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ চান মানুষ একটু বোঝার চেষ্টা করুক, কী থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ -সূরা তারিক: ৫

অন্যত্র আল্লাহ বলছেন, ‘মানুষ কি দেখে না, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি।’ -সূরা ইয়াসিন: ৭৭

মানুষের প্রতি আল্লাহর চাওয়া: অনেক আশা ও গর্ব করে আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টির শুরুতে ফেরেশতারা আতঙ্কিত হয়ে আল্লাহকে বলেছিল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে?’ মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে ফেরেশতাদের এই আশঙ্কা প্রসঙ্গে আল্লাহ ছোট্ট একটি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।’ -সূরা বাকারা: ৩০

অবশ্য এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালার দু’টি শর্ত ছিলো মানুষের প্রতি। প্রতিপালক মানুষকে বলেছিলেন, তোমরা ১. আমার ইবাদত করবে আর ২. আমার কোনো শরিক করবে না। -সূরা নূর: ৫৫

এ দুটি বিষয়ে আল্লাহতায়ালা খুব স্পর্শকাতর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এরপর যারা এসব বিষয়ে অকৃতজ্ঞ হবে, তারা সত্যত্যাগী বলে পরিগণিত হবে।’ -সূরা নূর: ৫৫

মতভেদ মানুষের বৈশিষ্ট্য: মতভেদ করা মানুষের বৈশিষ্ট্য এটা আল্লাহতায়ালা জানতেন, মানুষ এসব ব্যাপারে খুব মতভেদ করবে। তিনি এটা বলেছেন এভাবে, ‘তোমার প্রতিপালক ইচ্ছে করলে সব মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন; কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে।’ -সূরা হুদ: ১১৮

আর এ জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত মানুষকে একটিমাত্র জাতি হিসেবে রাখেননি। যদিও মানুষ ছিল একই জাতি। -সূরা মুমিনুন: ৫২,

মানুষ তর্কপ্রিয়: মানুষ সৃষ্টির পর আল্লাহতায়ালার একটি বড় পর্যবেক্ষণ হলো, মানুষ খুব তর্ক করে। অথবা তর্কপ্রবণ এক মাখলুক হল- মানুষ। আল্লাহতায়ালা এটা খেদের সঙ্গে বলেছেন এভাবে, ‘সে (মানুষ) প্রকাশ্যে তর্ক করে। আমার (আল্লাহর) ক্ষমতা সম্বন্ধে অদ্ভুত কথা বানায়।’ -সূরা ইয়াসিন: ৭৮

কোরআনের অন্যত্র আল্লাহি বলেছেন, ‘তিনি (আল্লাহ) শুক্র থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন অথচ দেখো সে প্রকাশ্যে তর্ক করে।’ -সূরা নাহল: ৪

আবার ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক করে। তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথের নির্দেশনা।’ –সূরা লোকমান: ২০

মানুষ উদাসীন চরিত্রের: মানুষ উদাসীন চরিত্রের এবং অজ্ঞতায়পূর্ণ তাদের জীবন। এটা মানুষের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন বিপদ-আপদ ও পরীক্ষায় মানুষের এই উদাসীনতা ধরা পড়ে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মানুষের এই উদাসীন চরিত্রের কথাও তুলে ধরেছেন, ‘মানুষ সৃষ্টির চেয়ে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করা তো আরও কঠিন। অবশ্য বেশিরভাগ মানুষ এটা জানে না।’ -সূরা মুমিন: ৫৭

কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ তো নিজের ওপর বড় জুলুম করে থাকে, আর সে বড়ই অজ্ঞ।’ -সূরা আহজাব: ৭২

সীমালঙ্ঘন করা মানুষের স্বভাব: সীমালঙ্ঘন করা ও বিভ্রান্ত হওয়া মানুষের স্বভাব। আর আল্লাহতায়ালা এবং তার সৃষ্টি সম্পর্কে মানুষের উদাসীনতার কারণেই মানুষ বিভ্রান্ত হয়। সেজন্য আল্লাহ জিজ্ঞেস করছেন, ‘হে মানুষ! কিসে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাকে বিভ্রান্ত করে রাখল?’ -সূরা ইনফিতার: ৬

কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘মানুষ বরাবরই সীমালঙ্ঘন করে। কারণ মানুষ মনে করে, সে অভাবমুক্ত।’ -সূরা আলাক: ৬-৭

মানুষ খুব সন্দেহপ্রবণ: মানুষ খুব সন্দেহবাদী চরিত্রের। মানুষ সবকিছুতেই তার সন্দেহ প্রকাশ করে। সেটা স্রষ্টা কিংবা সৃষ্টি যা-ই হোক, মানুষের সন্দেহবাদী মন মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘তিনিই তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর একটা কাল নির্দিষ্ট করেছেন। আর একটা নির্ধারিত সময়সীমা আছে, যা তিনিই জানেন। তবু তোমরা সন্দেহ করো।’ -সূরা আনআম: ২

মানুষ অস্থির ও তাড়াহুড়া প্রবণ: মানুষ খুব অস্থির ও তাড়াহুড়া প্রবণ। আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে মানুষ স্বভাবগতভাবে অস্থির এবং তাড়াহুড়া খুব পছন্দ করে। এ বিষয়টিও পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বিবৃত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ যেভাবে ভালো চায় সেভাবে মন্দও চায়। মানুষ তো খুব দ্রুততা ও তাড়াহুড়া প্রিয়।’ –সূর বনি ইসরাইল: ১১

কোরআনে কারিমে আরও বলা হয়েছে, ‘মানুষ তো সৃষ্টিই হয়েছে ভীরুরূপে অথবা স্বভাবগতভাবেই মানুষ অস্থির।’ -সূরা মাআরিজ: ১৯

মানুষ কৃপণ ও অপব্যয়ী: কৃপণতা ও অপব্যয়ী চরিত্র মানুষের স্বভাবগত। কারণ, মানুষ মনে করে; জীবনে যা সে কামাই করেছে, নিজের গুণেই তা সে করতে পেরেছে। ফলে সে খরচ করতে চায় না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। শয়তানও মানুষকে ভবিষ্যতের ভয় দেখায়। ফলে মানুষ সম্পদ জমা করতে থাকে এবং সঞ্চয়ের পাহাড় গড়ে তোলে। আল্লাহতায়ালা মানুষের এই ‘কার্পণ্য’ বৈশিষ্ট্যকেও পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘মানুষ তো বড়ই কৃপণ।’ -সূরা বনি ইসরাইল: ১৩০

কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘… যে (মানুষ) মুখ ফিরিয়ে নেয় আর দান করে সামান্যই, সে তো পাষাণ হৃদয়ের (মানুষ)।’ -সূরা নাজম: ৩৩-৩৪

অপব্যয় প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘যে (সব মানুষ) অপব্যয় করে, তারা তো শয়তানেরই ভাই। -সূরা বনি ইসরাইল: ২৬