নিউজিল্যান্ডের সমস্যার সমাধান এবং বাংলাদেশের সঙ্কটের শুরু!
বছরখানেক ধরে নিউজিল্যান্ডের বড় সমস্যার নাম ছিলো; ওপেনিং জুটি। জমতেই পারছিলো না কোন ম্যাচে তাদের এই জুটি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই পাওয়ার প্লে’র শুরুতেই ওপেনিং জুটির ‘পাওয়ার কাট!’
ওয়ানডের ব্যর্থতায় শুরুর ব্যাটসম্যানদের এই জমতে না পারার কারণকেই বড় সমস্যা হিসেবে খুঁজে বের করে নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশের বিপক্ষে চলতি সিরিজের আগে ভারতের কাছে ১-৪ ব্যবধানে হারা ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ছিলো এমনই বেহাল; ৫, ২৩, ১০, ১৪, ১৮!
ওপেনিং জুটিতে যে সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ হতে পারে-সেটা পেছনের এক বছরে দেখতেই পায়নি নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি আর কয়েক মাস। কিন্তু ওপেনিং জুটিতে আস্থার কোন লক্ষণই নেই! বড় বেশি দুঃশ্চিন্তায় ছিলো নিউজিল্যান্ড দলের বেহাল ওপেনিং জুটি নিয়ে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সেই সমস্যার সমাধান খুঁজে পেলো নিউজিল্যান্ড। সিরিজ জিতলো টানা দুই ম্যাচ জিতে। সেই সঙ্গে শুরুর দুই ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে পেলো বড় সংগ্রহ। নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচে কিউইদের ওপেনিং জুটিতে এলো ১০৩ রান। ক্রাইষ্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনিং জুটি তুলে নিলো ৪৫ রান। দুই ম্যাচেই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের পেশি ফুলানো রান।
এই সিরিজ জয়ের মধ্যে দিয়ে দারুণভাবে ফর্মে ফিরলেন ওপেনার মার্টিন গাপটিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজে নামার আগে পেছনের ছয় ম্যাচে গাপটিলের রান গড় ছিলো ১০.৩৩!
অথচ সেই তিনিই টানা দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকালেন। দুটোতেই ম্যাচ সেরা। বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটি নিয়ে এখন আর কোন দুঃশ্চিন্তাই নেই নিউজিল্যান্ডের। গাপটিলের সঙ্গে হেনরি নিকোলসই পারফেক্ট জুটি।
শুধু তাই নয়, ডেথ বোলিংয়ে লকি ফার্গুসনের মতো কার্যকর বোলারকেও খুঁজে পেয়েছে নিউজিল্যান্ড এই সিরিজে। শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, বোলিংয়েও অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে নিউজিল্যান্ড এই সিরিজে।
তবে নিউজিল্যান্ড এই সিরিজে নিজেদের অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজে পেলে বাংলাদেশের সমস্যা আরো বাড়ছে তো বাড়ছেই! বিশ্বকাপের আগেভাগে দলের অনেক জায়গায় যেসব ফাইন টিউনের প্রয়োজন ছিলো সেটা তো হচ্ছেই না, বরং মুল সুরই যে কেটে যেতে বসেছে!
দুই ম্যাচেই ওপেনিং জুটি নামতার ভঙ্গিতে ৫ রানে বিছিন্ন হয়েছে । উভয় ম্যাচে টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত সঞ্চয় যথাক্রমে ৪২ ও ৫২ ! ওপেনিং জুটিতে তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে লিটন দাস এখনো আস্থার প্রতীক হতে পারেননি। মিডল অর্ডারে কার কি ব্যাটিং পজিশন, সেটা এখনো সমাধাহীন। সৌম্য সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু তার ব্যাটিং আলোচনার চেয়ে সমালোচনাই বেশি শুনছে! উইকেটে সেট হয়েও একজন ব্যাটসম্যান কেন বারবার আউট হয়ে ফিরবেন?
সাম্প্রতিক সময়ে সাত নম্বর ব্যাটসম্যান নিয়ে এত বেশি বাক্য বিনিময় হয়েছে যে টপঅর্ডারের কাজ কি সেটাই যেন ভুলে বসেছে গোটা দল! সাত নম্বরে কে নামবেন, কে বেশি উপযুক্ত-এই খোঁজটাই যেন হয়ে পড়েছে একটা দলের প্রধান শিরোনাম!
আর তাই শুরুর ছয় ব্যাটসম্যানের প্রধান কাজ কি সেটাই যে ভুলে যেতে বসেছে গোটা দল। শুরুর ছয় ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে ম্যাচ জেতানোর মতো ব্যাটিং যদি না মিলে তবে সাত নম্বর ব্যাটসম্যান দলকে প্রতি ম্যাচে একাই হিমালয়ের চূড়ায় পৌছে দেবেন-এমন চিন্তাটা নেহাতই রক্ষণশীল ধাঁতের।
যা দিয়ে হয়তো কখনো সখনো আব্রু রক্ষা হবে, কিন্তু সবসময় ম্যাচ জেতা যাবে না!
নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যাটিং নিয়ে বেশি চিন্তায় পড়ে বোলিং শক্তিতে ভারসাম্য আনার কথা যেন ভুলেই গেলো বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে দলে পেস বোলার হিসেবে রুবেল হোসেনের কার্যকারিতা প্রমাণিত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলিং পরিকল্পনার অনেক বড় অংশ জুড়ে আছেন রুবেল হোসেন। অথচ সেই রুবেল এবারের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে নেই! বিশ্বকাপের আগেভাগের ম্যাচ গুলোতে নিজেকে আরো টগবগে করে তুলতে নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে বোলিং করাটা রুবেলের জন্য কার্যকর হতো।
নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ প্রথম দুটো ম্যাচে যেভাবে হেরেছে তাতে শুধু নিস্প্রভ ব্যাটিং নয়, বোলিংয়ের ধারও ভীষণ ভোঁতা প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্বকাপের আগেভাগে কোথায় ব্যাটে-বলে, একাদশে, টিম কম্বিনেশনে সব সমস্যার সমাধান এতদিনে হয়ে যাওয়া উচিত ছিলো; তা না, উল্টো এখন সব সমস্যার শুরুই হলো যেন!