বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের এমন সমাপ্তি চায়নি কেউ
ফাইনালের মঞ্চ প্রস্তুতই ছিল। শিরোপা লড়াইয়ে দুই ফেভারিট বাংলাদেশ-লাওস। অজেয় এই দলের লড়াই দেখতে আগ্রহের কমতি ছিল না দর্শকদের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সর্বনাশ! শুক্রবার ছুটির দিনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দেখা হলো না ফাইনাল। বৃষ্টি, বজ্রপাত আতঙ্ক আর বৈরি আবহাওয়ার দাপটে ফাইনাল পণ্ড।
দুই ফাইনালিস্টকেই বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে আয়োজক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ফাইনালে কোন রিজার্ভ ডে না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
ফাইনাল দেখতে না পেরে হতাশ দর্শকরা। তেমনি হতাশ ফুটবলার, কর্মকর্তারাও। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই টুর্নামেন্টের এমন সমাপ্তি চায়নি কেউই!
টিকিট দেখিয়ে টাকা ফেরত
বৃষ্টির মধ্যেই শুক্রবার টিকিট কেটে গ্যালারিতে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। শেষ অব্দি বল মাঠে না গড়ানোতে হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। খেলা দেখতে না পেরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফুটবলপ্রেমীরা। এমন কী অনেকে গ্যালারির চেয়ারও ভাঙচুর করেন। বাংলাদেশ দলের বাস যখন স্টেডিয়াম থেকে বের হবে ঠিক তখনই বাস আটকে বিক্ষোভ করেন সেই দর্শকরা।
টিকিটের অর্থ ফেরত চান তারা। যদিও বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুশের্দী তাদের সুখবরই দিয়েছেন। যারা টিকিট মাঠে এসেছেন তাদের সবার টিকিটের অর্থ ফেরত দেয়া হবে। ক্রয়কৃত টিকিট দেখিয়ে টাকা ফেরত নিতে পারবেন তারা।
এরইমধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের করে ফুটবল ভক্তদের নির্ধারিত অর্থ ফেরত দিয়ে দিচ্ছে বাফুফে। রাজধানীর আরামবাগে বাফুফে ভবনে অনেকেই এসেছে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা বুঝে নিয়েছেন।
দুই দলের জন্য আলাদা ট্রফি
ফাইনাল ম্যাচে শিরোপা পাবে এক দেশ-এমনটা ভেবেই চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য ছিল একটি ট্রফি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার হতে পারল না বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের ফাইনাল। যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ-লাওস। কিন্তু শিরোপা তো একটি।
দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করার পর প্রশ্ন ওঠে- শিরোপা পাবেন কারা?
টুর্নামেন্ট কমিটি চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী প্রাথমিকভাবে জানান, ‘আমরা লটারি করে ট্রফি প্রদান করবো।’ তবে রাতেই পাল্টানো হয় সেই সিদ্ধান্ত। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ জানান, চ্যাম্পিয়ন দুই দলকে দুটি আলাদা ট্রফি দেয়া হবে।
বাফুফের এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কিভাবে বাংলাদেশ ও লাওস ট্রফি দুটি পাচ্ছে?
আবু নাঈম সোহাগ জানান, ‘বাংলাদেশে থাকা ট্রফিটি স্বাগতিকদের জন্য রেখে দাওয়া হবে। নতুন একটি ট্রফি তৈরির পর লন্ডন থেকেই লাওসের জন্য সেটি পাঠিয়ে দেয়া হবে।’ লন্ডনের ট্রফি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনকারমেন্টের কাছে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের ট্রফি তৈরি করা হয়। ৮ কেজি ওজনের এ ট্রফিটির উচ্চতা ২৭ ইঞ্চি।
প্রাইজমানি ফিফটি-ফিফটি
বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ছিল ২৫ হাজার মার্কিন ডলার। রানার্স-আপ দলের ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। এ অবস্থায় দুই দল চ্যাম্পিয়ন। রানার্স আপ কেউ নেই। বাফুফে জানিয়েছে, ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দুই দলের মধ্যে সমান ভাগ করে দেয়া হবে।
৬ জাতির এই আন্তর্জাতিক ফুটবলের দুই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ-লাওস পেয়েছে ২০ ডলার করে প্রাইজমানি!
সবার সিদ্ধান্তেই ম্যাচ বাতিল
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে এবারই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাফুফে। সফল এই আয়োজনের শেষটা ভাল হয়নি। বৈরি আবহাওয়ার জন্য বাতিল হয় ফাইনাল। বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী শুক্রবার ঘোষণায় বলেন, ‘ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় টুর্নামেন্ট কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাইনাল খেলাটি বাতিল করা হলো। দুই দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হচ্ছে।’
অথচ বাফুফের দাবী এই টুর্নামেন্টে এএফসির অনুমোদন রয়েছে। এএফসির নিয়ম জানাচ্ছে কোন ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবেন রেফারি ও ম্যাচ কমিশনার। এক্ষেত্রে সালাম মুর্শেদী জানান তারা নাকি ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ফাইনালে রিজার্ভ ডে না থাকাটা বিস্ময়ের জন্য দিয়েছে।
এই আয়োজনের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান কে স্পোর্টসের সিইও ফাহাদ করিম জানান, ‘দেখুন, টুর্নামেন্টের এমন সমাপ্তি অবশ্যই প্রত্যাশিত নয়। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পড়েছে খেলায়। সবাই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রার্থনারত। ঘর-বাড়ি ছেড়ে অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এ অবস্থায় খেলাটা শোভনীয় নয়। বাফুফে, স্পন্সর সবার সঙ্গেই এনিয়ে কথা হয়েছে। সবাই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।’
খেলতে চেয়েছিল লাওস!
ফাইনাল ম্যাচ সবার সিদ্ধান্ত নিয়েই বাতিল করা হয়েছে-এমন দাবী বাফুফের। ফল মেনে নিলেও ভিন্ন কথা শোনালেন ফাইনালিস্ট লাওসের ম্যানেজার গালদানশুক তুসিনবায়া। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘সংগতভাবেই ফুটবলারদের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কঠিন। খেলার উপযোগী পরিবেশ এখানে ছিল। কিন্তু আমাদের আয়োজকদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে।’
এর অর্থ খেলতে চেয়েছিল লাওস। পুরো টুর্নামেন্টে আক্রমণাত্মক খেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি। গ্রুপ পর্বে মঙ্গোলিয়াকে ৫-০ গোলে হারিয়ে শুরু। এরপর তাজিকিস্তানের বিপক্ষে পায় ৬-০ গোলের জয়। সেমি-ফাইনালে কিরগিজস্তানকে ৭-১ গোলে হারায় তারা।
বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে শুরু। তারপর কিরগিজস্তানকে ২-১ গোলে হারায়। সেমি-ফাইনালে মঙ্গোলিয়াকে ৩-০ গোলে হারায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আরো পড়ুন-