ওয়ানডে বলেই রঙিন আশায় বাংলাদেশ!

  • এম.এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাদা পোশাকের টেস্টে ক্রিকেটে ভীষণ ম্লান বাংলাদেশ। দুই টেস্টের সিরিজে একরত্তি লড়াইও হয়নি। দুটো টেস্ট ম্যাচই বাংলাদেশ হেরেছে তিনদিনের মধ্যেই। এর মধ্যে আবার নিজেদের সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউটের লজ্জাও রয়েছে। শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও বড় বিভ্রান্তিতে বাংলাদেশ দল। এমন গোলমেলে পরিস্থিতিতে ওয়ানডে সিরিজে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ২২ জুলাই রোববার রাত থেকে শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচ। গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বরিবার রাত সাড়ে সাতটায়।

টেস্ট সিরিজে হতাশা। পারফরমেন্সের ধস। চিড় ধরা মনোবল। এমন সব নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্য থেকে উঠে দাড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজে কি ঘুরে দাড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

বিজ্ঞাপন

সিরিজ শুরুর আগে এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। দলের বিশ্বাস-হ্যাঁ, পারবো। সম্ভব! আর এই বিশ্বাসের মুলমন্ত্রের যোগানদাতা আর কেউ নন স্বয়ং অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার উপস্থিতি মানেই নতুন যুদ্ধজয়ের নতুন শপথে বলীয়ন গোটা দল। মাশরাফি মানেই চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা। মাশরাফি মানেই লড়াই করে জেতার তাগিদ। অধিনায়ক মাশরাফি এবং ওয়ানডে ফরমেট-এই দুই উপাত্তই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

তিন ফরমেটের ক্রিকেটের মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেটই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কমফোর্ট জোন। ৫০ ওভারের ম্যাচেই নিজেদের সবচেয়ে ভালভাবে মেলে ধরতে পারে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে এই ফর্মের ক্রিকেটেই বাংলাদেশের পারফরমেন্স এবং রেকর্ডও ভাল। ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য যে টিম কম্বিনেশনের প্রয়োজন- সেই ধাঁতটা বেশ ভালভাবেই আয়ত্ত করে নিতে পেরেছে বাংলাদেশের এই দল। সেই সঙ্গে ‘তালিসমান অধিনায়ক’ হিসেবে মাশরাফির উপস্থিতি এই দ্বিমাত্রিক অনুপ্রেরণাই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের শক্তিমত্তার অন্যতম আঁধার।

বিজ্ঞাপন

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের বাকি সময়ে সেই রঙিন সুখটা আরেকবার ফিরিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ। স্বাচ্ছন্দে প্রত্যাবর্তনের আংশিক ঘোষণা অবশ্য ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দিয়েছে বাংলাদেশ।

 

-কিভাবে, কখন?

ওয়ানডে সিরিজের আগে জেতা একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচের স্কোরকার্ডেই যে লেখা সেই ঘোষণা! পুরোশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই সেই প্রস্তুতি ম্যাচে হারায় বাংলাদেশ। তাও আবার সেই ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের পুর্নশক্তির দল খেলেনি! মুশফিক রহিম ও লিটন দাসের ব্যাটে বড় রান। বোলিং পারফরমেন্স দেখিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ম্যাচসেরা হওয়া। পেসার রুবেল হোসেনের তিন উইকেট। রান তাড়ায় সুদক্ষ পরিকল্পনার ছাপ এঁকে ব্যাটিং করা। সব মিলিয়ে ৪ উইকেটে জয়ী সেই প্রস্তুতি ম্যাচটা বাংলাদেশকে প্রথম ওয়ানডের আগে বাড়তি টনিক যোগাচ্ছে।

প্রথম ম্যাচের একাদশ গঠন নিয়েও বাংলাদেশ খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নামছে না। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যক্তিগত রেকর্ড ভাল থাকলেও সম্ভবত এই ম্যাচে খেলা হচ্ছে না ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের। প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরমেন্সের সুবাদেই নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে দেখা যেতে পারে লিটন দাসকে। মিডলঅর্ডারে সাব্বির, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ থাকছেন। লোয়ার অর্ডারে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। স্পিন কোটায় মিরাজ। পেস বোলিংয়ে মাশারাফির নেতৃত্বে মুস্তাফিজ ও রুবেল হোসেন।

প্রস্তুতি ম্যাচের জয় বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস যোগালেও মুল ম্যাচে কিন্তু বাংলাদেশকে বাড়তি কিছু সতর্কতা অবশ্যই নিতে হবে। গায়ানা প্রভিন্স ষ্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডের উইকেট নিশ্চয়ই নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ীই তৈরি করবে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। এখানকার সাম্প্রতিক রেকর্ড জানাচ্ছে এই উইকেট আগে ব্যাটিং করা দল তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তাছাড়া শুধু মাঠ নয় আকাশের দিকেও এই ম্যাচে চোখ রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে-ম্যাচ শুরুর আগে গায়ানায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে রাত সাড়ে সাতটায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটা পিছিয়ে যেতে পারে। কার্টেল ওভারের কথা মাথায় রেখেও বাংলাদেশকে একাদশ সাজাতে হতে পারে।

সামনের বছরের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এই সিরিজকে দেখছে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। অভিজ্ঞ এবং তারুণ্যের সমন্বয়ে এই সিরিজের দল গড়েছে। দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে মারকুটো অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলকে। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে থাকছেন ক্রিস লুইস। এই তিনের একজনও যদি উইকেটে জমে যানÑতবে যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য বড় বিপদ! অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও মুলত এই তিনজনকেই বড় বাধা হিসেবে দেখছেন।

রঙিন পোষাকে রঙময় হয়ে উঠুক বাংলাদেশের পারফরমেন্স- সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সেই অপেক্ষায় ক্রিকেটামোদিরা।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম, লিটন, সাব্বির, মুশফিক (উইকেটকিপার), সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, মেহেদি মিরাজ, মাশরাফি (অধিনায়ক), রুবেল, মুস্তাফিজ।