বৃষ্টি আইনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট ৯১
এই ম্যাচের প্রথম ওভারটা খুব দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে; তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার।
কি ভয়াবহ শুরুটাই না হল!
প্রথম বলেই আউট তামিম ইকবাল। ম্যাচের প্রথম বলেই তামিমের মনে হল উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কা হাঁকাই। তামিমের তাড়াহুড়ো দেখে স্পিনার অ্যাসলে নার্স বলটা একটু টেনে শর্ট করলেন। ব্যাটে-বলে লাগাতেই পারলেন না তামিম। উইকেটকিপার দিনেশ রামদিন সহজ ভঙ্গিতেই স্ট্যাম্পড করলেন। শূন্য রানে ফিরলেন তামিম, ম্যাচের প্রথম বলে। স্কোরবোর্ডেও রান তখন শূন্য।
ভাবছেন সমস্যা শেষ!
আরে না, সবে যে শুরু! সেই ওভারের চতুর্থ বলে এবার সৌম্য সরকার আউট। হ্যাঁ, এটাও ছিল সৌম্যর খেলা ম্যাচের একমাত্র বল! ফুললেন্থে পড়া বলে জায়গায় দাড়িয়ে সৌম্য সরকার কি করতে চাইলেন ঠিক বোঝা গেল না। শুধু জানা গেল সৌম্য বোল্ড!
‘এ’দলের হয়ে সৌম্য সরকারের এই সময়টায় আয়ারল্যান্ডে খেলার কথা ছিল। সেই দলে তিনি ছিলেনও। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজে টিম ম্যানেজমেন্টের এসওএস পেয়ে নির্বাচকরা তাকে সেখানে পাঠান। সৌম্য সেখানে গিয়ে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার তো করতে পারলেনই না,উল্টো বিপদের মাত্রা আরো বাড়ালেন।
স্কোরবোর্ডে জমা মাত্র ৫। দুই ওপেনার তামিম ও সৌম্য ফিরে এসেছেন ডাগআউটে। এমন কঠিনতর পরিস্থিতিতে পড়া ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২০ ওভার শেষে ১৪৩ রানের স্কোর গড়তে পেরেছে; তাতেই যে অনেক বড় স্বস্তি!
বাংলাদেশ ইনিংস শেষে বৃস্টি নামে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে। ম্যাচ গড়ায় কার্টেল ওভারে। বৃস্টি আইনে নতুন টার্গেট অনুযায়ী ম্যাচ জিততে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হবে ১১ ওভারে ৯১ রান।
খুব কি কঠিন টার্গেট?
ফিরি বাংলাদেশের ইনিংসে।
দুই ওপেনার শূন্য রানে আউট। এমন ম্যাচের প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানকে ব্যাট হাতে নামতে হয়। লিটন দাসকে সঙ্গী করে সাকিব যথারীতি তার স্বভাবসুলভ স্টাইলে পাল্টা আক্রমণের ব্যাটিং শুরু করেন। আন্দ্রে রাসেলের এক ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জানিয়ে দেন এই উইকেটে রান আছে। শুধু ব্যাটিংটা করতে জানতে হবে!
তবে একটু বেশি আক্রমনাত্মক হতে গিয়ে লিটন দাস এই ম্যাচে বড়কিছু করার ভাল একটা সুযোগ খুঁইয়ে এলেন। কিমো পলের শর্ট বলে একটু আগেভাগে শট খেলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। ঠিক তার পরের বলেই সাকিবও আউট। বাউন্ডারি লাইনে জাগলিংয়ের ভঙ্গিতে সাকিবের ক্যাচটা ধরেন কেশরিক উইলিয়ামস!
কে জানতে এই ম্যাচে সেটাই উইলিয়ামসের অ্যাকশনের শুরু! নিজের ৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসার ২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বোলার।
পাওয়ার প্লে তখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশ শুরুর চার উইকেট হারিয়ে ৪৩ রানে ধুঁকছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ; মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। প্রায় ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টেনে তোলেন দুই সিনিয়র। নিয়মিত ভঙ্গিতে উইকেট হারালেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ড সচল রাখেন। তাতেই শুরুর ১০ ওভারে রান উঠে ৯৫। কিন্তু এই শুরুর সঙ্গে শেষের যে দারুণ অমিল!
শেষের ১০ ওভারে বাংলাদেশ মাত্র ৪৮ রান যোগ করে! যা টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট ধাঁতের সঙ্গে মোটেও মানাসই নয়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে চড়েই এই ম্যাচে বাংলাদেশের স্কোর সামনে বাড়ছিল। কিন্তু কেশরিক উইলিয়ামসের একটা স্লোয়ার রিড করতে না পারায় মাহমুদউল্লাহর ২৭ বলের ইনিংসটা থেমে যায় ৩৫ রানে।
মুলত এই ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে চলাও সেখানেই থেমে পড়ে।
বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ১৪৩ রানের সঞ্চয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অতিরিক্ত রানের সহায়তাও কম নয়। সবমিলিয়ে এই ম্যাচে অতিরিক্ত ১২ রান দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে আবার ১০টিই ওয়াইড!
চরম বাজে শুরু। দায়িত্বহীন ব্যাটিং। এবং মন্দা রানে শেষ। টস হারা ম্যাচে ১৪৩ রানের প্রথম টি-টুয়েন্টির ব্যাটিং বিশ্লেষণকে এভাবেই ব্যাখা করতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৪৩/৯ (২০ ওভারে, লিটন ২৪, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫, আরিফুল ১৫, মেহেদি ১১, উইলিয়ামস ৪/২৮, নার্স ২/৬, পল ২/২৪)।