বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ। ফাইল ছবি।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ। ফাইল ছবি।

নড়াইল: ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ (৫ সেপ্টেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। জেলা প্রশাসন ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের আয়োজনে নূর মোহাম্মদ নগরে দিনটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে ছিল- কোরআন খানি, র‌্যালি, শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সশস্ত্র সালাম প্রদর্শন, মাজার জিয়ারত, আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক শেখ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার (মহিখোলা) বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র বাবা মো. আমানত শেখ ও মা মোসা. জেন্নাতা খানমের আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু ডানপিটে নূর মোহাম্মদ লেখাপড়া শিখে বেশিদূর এগোতে পারেননি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে।
এরপর ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/05/1536134181738.jpg

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ৮ নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগদান করেন। ৭১ এর ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামে সম্মুখ যুদ্ধে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সঙ্গী ছিল আরও ৪ জন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। পাকবাহিনী টের পেয়ে বিপদজনক অবস্থার মুখে টহলদারি মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। তাদের এই পরিকল্পনা বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন।

শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। মারাত্মক আহত হলেন সঙ্গী নান্নু মিয়া। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হানাদারদের মর্টার শেল মারাত্মকভাবে জখম করে নূর মোহাম্মাদকে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহি মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায়ন্ত না পেয়ে তারাও তাই করলেন, কিন্তু একটি এসএলআর রেখে যান মারাত্মক আহত কমান্ডারের কাছে। নূর মোহাম্মদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও এসএলআর নিয়ে শেষবারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের ওপর এবং সেখানেই তিনি শহীদ হন। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোপের মধ্যে এই বীরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার দেহ ছিল ক্ষতবিক্ষত, চোখ দুটি উপড়ে ফেলেছিল নরপিশাচেরা।

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ সঙ্গী সৈনিকদের প্রতি যে ভালোবাসা প্রদর্শন করেছিলেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত বুঝেও দেশের জন্য আবারো হানাদারদের শেষ করে দিতে একাই ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করার চেষ্টা চালিয়ে দেশপ্রেমের যে প্রমাণ রেখেছেন তার কোনো তুলনা নেই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এদেশের মাটিতে নূর মোহাম্মদের রক্তের গন্ধ পাওয়া যাবে। যতদিন এ জাতি থাকবে ততদিন নূর মোহাম্মদ শেখের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।