এখন পরিবার নিয়ে রাস্তার পাশে থাকি
নড়াইল:‘প্রায় ২০ বছর ধরে এই নদী ভাঙছে। আমি নিজেই ৯ বার আমার বাড়ি সরিয়েছি। এভাবে বাড়ি ভেঙে সরাতে সরাতে আজ আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন আমি সিএন্ডবিতে (রাস্তার পাশে) কোনো রকমে ঘর তুলে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছি।’
বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন নদী ভাঙনের স্বীকার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের জিন্নাত শেখ।
লোহাগড়া উপজেলার শিয়রবর গ্রামের রওশন শিকদার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি চার বার মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে। এ বছর নদী যেভাবে ভাঙছে তাতে মনে হয় বাড়ি আবারো সরাতে হবে। নদীতে ভাঙনের কারণে আমার মতো অনেকে সব হারিয়ে পথে বসেছে।’
মূলত নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ৬ গ্রামের মানুষ মধুমতী নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মধুমতী নদীর ভাঙন ইতোমধ্যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক বাড়ি ঘর। ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শতাধিক ঘর-বাড়ি। এছাড়া ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান ক্ষতিগ্রস্তদের।
জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার মহিষাহপাড়া, মঙ্গলহাটা, করফা, আতোষপাড়া, শিয়রবর ও ঘাঁঘাঁ গ্রামে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে শতাধিক পরিবার। বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছে হাসান মুন্সী, আতিয়ার মোল্যা, দেলোয়ার, ভাষাণ মোল্যা, রাজ্জাক, আক্তার, আক্কাস, মিন্টু মোল্যা, ইকবাল হোসেনের বাড়ি।
কোটাকোল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা বিএম মনিরুজ্জামান বলেন,‘ভাঙন রোধে এ ইউনিয়নে মধুমতীর তীরে বস্তা ফেলতে এসেছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দাবি অবিলম্বে ভাঙন রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে অসহায় গৃহহীন মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এমএম আরাফাত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তারা যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় সে বিষয়েও তাগিদ দেয়া হচ্ছে।’
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘আমরা শিয়রবর বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু মহিষাহপাড়া, মঙ্গলহাটা, করফা, আতোষপাড়া এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার না থাকায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’