ঢাকায় মশা মারতে বরাদ্দ ৪৭ কোটি, তবুও থামছে না উৎপাত
মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। আর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা মশার উৎপাত বন্ধ করতে না পেরে বিপাকে আছেন। জানা গেছে, মশা নিধনে প্রতিবছর বাজেট বাড়ানো হলেও রাজধানীতে মশার উৎপাত বাড়ছেই। দফায় দফায় বিশেষ কর্মসূচি পালন, স্বাস্থ্য বার্তা বাসায় পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু করে কি-না করছেন তারা। তবুও যেন কমছে না মশা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১১ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়াও বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বরে ভুগছেন মোট ৩ হাজার ৭১২ জন। পাশাপাশি গত বছরের শুরু থেকে চলতি বছরের শুরুর কয়েকমাস পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রভাব ছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই যোগ হয়েছে ডেঙ্গুর উপদ্রব। সবকিছু বিবেচনা করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশন ভালোভাবেই মাঠে নেমেছে। তার ধারাবাহিকতায় বাজেটেও এসেছে পরিবর্তন।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ এ মশা মারতে বরাদ্দ রেখেছে ২০ কোটি টাকা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বরাদ্দ রেখেছে ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের পরও কমছে না মশার উপদ্রব।
নগরবাসীর অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে সারা বছরই ফগার মেশিন দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। ড্রেনগুলোতেও ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো তেমন কাজে আসছে না।
রাজধানীর জিগাতলার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রভাষক মোস্তফা মারুফ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘দু’একদিন পর পর ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছেটানো হলেও তাতে কাজ হয় না। মশা তো মরেই না বরং শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ হয়। রাত-দিন সবসময় মশার উত্যক্তে অতিষ্ঠ জীবন। সাথে রোগ জীবাণু তো আছেই।’
এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাউদ্দিন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘গত ২৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫টি অঞ্চলের ৫৭টি ওয়ার্ডে মশা মারতে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়। পাশাপাশি একটি জরিপও করা হয়েছে। জরিপে ডিএসসিসি এলাকায় গড়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িতে। এখন পর্যন্ত দুটি বিশেষ কর্মসূচিতে ৫৭টি দলের মাধ্যমে প্রায় ৩৩ হাজার বাড়িতে গিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে।’
একই কথা জানালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে ওষুধ প্রয়োগ থেকে শুরু করে, নগরবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া আর যা যা করার তার সবই আমরা করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসাধীন রোগীদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অর্পনা দাশ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘সম্প্রতি হাসপাতালে সব ধরনের জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাছাড়া মশা যে শুধু ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক তা না। মশা থেকে নানা ধরনের রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
তবে নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মশা মারতে প্রতিবছর যে বাজেট রাখা হয় সেটার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই, সমস্যার সহজ সমাধান করা সম্ভব।’