বিদ্যুৎ বিভ্রাট: জেনারেটর দিয়ে দিনের পর দিন সংসদ চালানো সম্ভব
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশন দিনের সব কার্যক্রম স্থগিত করে সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে মুলতবি করে দেন স্পিকারের আসনে বসা ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া।
সংসদের গণপূর্ত (বিদ্যুৎ) বিভাগের তথ্যমতে, জাতীয় গ্রীডে সমস্যার কারণেই ঘটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ মেশিনের দুটি ফিডার কাজ না করায় এ সমস্যা দেখা দেয়। পরে মেশিন ঠিক হলেও বিভ্রাটের ঝুঁকিতে সংযোগ দেওয়া হয়নি। তবে বিদ্যুৎ না থাকলেও চাইলে দিনের পর দিন জেনারেটর দিয়েই সংসদ চালানো সম্ভব।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৪টার পরে সংসদ ভবন এলাকার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। এসময় সংসদ ভবনের অধিকাংশ ব্লক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে জেনারেটর দিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে নির্ধারিত সময়ের ১০ মিনিট পর শুরু হয় অধিবেশন। মাগরিবের নামাজের আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলে তখন সভাপতিত্বকারী ডেপুটি স্পিকার দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করেন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংসদ ভবনের বিভিন্ন ব্লকে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করে।
পরে ডেপুটি স্পিকার বার্তা২৪.কমকে জানান, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা দেখা দেয়ায় জাতীয় সংসদ ভবনে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় সংসদে বিদ্যুৎ ছিল না। জেনারেটর দিয়ে কিছু সময় চলেছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় জেনারেটর দিয়ে অধিবেশন চালানো সম্ভব নয়। মাইকের সাউন্ডে সমস্যা হচ্ছিল, তাই স্থগিত করা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এমন ঘটনা বিরল। অতীতে এ রকম হয়েছে কিনা, মনে পড়ছে না। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হলে অধিবেশন কক্ষ এবং প্রয়োজনীয় কয়েকটি স্থানে জেনারেটরের মাধ্যমে কাজ চালানো হয়েছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের বিদ্যুতের মেশিনগুলো একেবারে নতুন। ডিপিডিসির গ্রীড ফেল করার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের জেনারেটর চালু হয়ে গেছে। মেশিনগুলো আমেরিকা অথবা ইউরোপ থেকে আনা। কোন চাইনিজ মেশিন নেই। ফলে মেশিনের সমস্যার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। লোডশেডিংয়ের কারণে এখানকার মেশিনের এক ও দুই নম্বর ফিডার কিছু সময়ের জন্য কাজ করছিল না। তবে দ্রুতই তা ঠিক করা হয়। আর আমাদের জেনারেটর দিয়েই সংসদ দিনের পর দিন চালু রাখা সম্ভব।
সংসদে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তিনি সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, কোথায় কি সমস্যা হলো, কেন হলো আর এটা যাতে কখনও না হয়, হলেও আমরা কি ব্যবস্থা নেবো সেগুলো আমাদের জানতে হবে। সংসদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সুতরাং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছি মেঘনা ঘাটের বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভোল্টেজ ড্রপ করেছে। যার রেকর্ড রয়েছে। সেখানে বিভ্রাটের ফলে আমাদের জেনারেটর চালু হয়ে যায়। এবং আমরা জেনারেটর দিয়ে আমি কাজ চালিয়েছি।
সংসদের বিদ্যুতের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ ভবনে বিদ্যুৎ চলে গেলেও দীর্ঘ সময় ব্যাকআপ দেয়া সম্ভব। মঙ্গলবারও সেটি করা হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন, সেখান জেনারেটর দিয়ে লাইন দেয়া হয়। মোট পাঁচটি জেনারেটরের মধ্যে অধিবেশনে বিঘ্ন এড়াতে সংসদের হাউজের জন্য একটি নির্দিষ্ট জেনারেটর আছে। প্রধানমন্ত্রী ও ভিআইপিদের জন্যও নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে আরও একটি জেনারেটর। জেনারেটরগুলোর একটিতে বিঘ্ন ঘটলে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে আরেকটি চালু হবে। আর বিদ্যুতের যে মেশিন রয়েছে তা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। বাংলাদেশের গ্রীডে সমস্যা না হলে এখানেও কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। কিন্তু মঙ্গলবার গ্রিড ফেল করায় এ সমস্যার মুখে পড়তে হয়। পরে একটি মেশিন চালু করা হয়, আরেকটি চালু করলেই হতো। স্পিকারের ফোন পেয়ে তার নির্শেদনা মোতাবেক কার্যক্রম চালিয়ে যায় বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরপরই সংসদ ভবনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ছুটে আসেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ জানান, সংসদে কেন বিদ্যুৎ ছিল না- সে ঘটনা তদন্তে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক অপারেশন এটিএম হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব ফয়জুল আমীনের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ বিভাগ পাঁচ সদস্যর আরেকটি কমিটি গঠন করেছে।
মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে দিনের কার্যসূচিতে প্রশ্নোত্তর ছাড়াও ছিল ৭১ বিধিতে জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তথ্য কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন উত্থাপন। স্থায়ী কমিটির বিল সম্পর্কিত রিপোর্ট উত্থাপনের মধ্যে ছিল জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি বিল, সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) বিল। এ ছাড়া ছিল হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বিল। এসব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ ছাড়াও সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাটের সাক্ষাৎ ছিল। তাও গণভবনে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা গেছে।