‘হাসিনা ঠিকে সাহায্য দেয়, কিন্তুক হামরা পাইনা’
রংপুর:‘সরকার হামার তিস্তা নদীক ঠিক কইরব্যার জনতে ২২৬ কোটি টাকা দিচে। কিন্তুক নদীতো এ্যলাও ঠিক হওচে না। বান হইলেই হামার দুঃখ কষ্ট নিয়্যা সবার মাথা ব্যথা। পরে আর কায়ো আইসে না। কত দিন পানিত থাকমো। কোনো দিন হামার তিস্তা নদী ঠিক হইবে?’
বার্তা২৪.কমের সঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের বিনবিনাচর এলাকার আবুল মিয়া।
তার মতো কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক পরিবার গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণের জন্য মাইকিং করে বলা হয়েছে।
এদিকে আলমবিদিতর ইউনিয়নের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ, নোহালী, লক্ষ্মীটারী, মর্ণেয়া ও গজঘন্টা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখন পানিতে ডুবে আছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে আকস্মিক পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার অনন্ত ৩০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়েছে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ। বিপাকে পড়েছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের কচুয়া, মিনারবাজার, নোহালীর চর, বাঘধহরা চর, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চড় ইছলি, লক্ষজয়রাম ওঝা, কোলকোন্দ ইউনিয়নের কোলকোন্দ, সাউদপাড়া, শংকরদহ চর, বিনবিনা, চর ইশরকুল, মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলাল চর, তালপট্টি, মর্ণেয়ারচর ও গঙ্গাচড়ার গান্নারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকা এখন আকস্মিক বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকায় সাধারণ মানুষের জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের শংকরদহ চরের পানিবন্দী রহিমা বেগম বলেন, ‘এতো কষ্ট করে সংসার চালাই, সেই সংসার হামার বানোত ভাসি যাবার নাগছে। খাওয়া দাওয়া নাই। গরু- ছাগল আর ছাওয়া পোয়াক নিয়া খুব বিপদোত আচি।’
মর্ণেয়ার চরের ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করি বানের পানিত হামার ঘর-বাড়ি ডুবিচে। আস্তা-ঘাট থাকি স্কুল-মাদরাসা চাইরো পাকে পানি আর পানি। এই দুকের দিনোত হামার পাশোত কায়ো নাই বাহে। বানভাসি মাইনষের জনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিকে সাহায্য দেয়, কিন্তুক হামরা পাইনা। একমুঠ সাহায্য দেয়ার মানুষ হামার গঙ্গাচড়াত নাই।’
অন্যদিকে সাউদপাড়া এলাকার আব্বাস, আব্দুল্লাহ ও গফুর মিয়া বলেন, ‘হামার কষ্ট না হয় যেমন তেমন। কিন্তুক গবাদি পশুগুলো নিয়্যা বেশি সমস্যাত আচি।’
গেল দুই দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, ভারতের বেশ কয়েকটি স্থানে ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেক এলাকার পানি সরে যেতে শুরু করেছে।
এদিকে পানিবন্দী মানুষদের মধ্যে সরকারি সাহায্য বিতরণের কথা জানতে গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।