চট্টগ্রাম বন্দর: আজ থেকে অপারেশনে নতুন তিন গ্যান্ট্রি ক্রেন
এক জাহাজে কনটেইনার উঠানামায় কাজ করবে তিন গ্যান্ট্রি ক্রেন
১৩ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠানামায় আজ (সোমবার) থেকে চালু হচ্ছে নতুন আরো তিনটি কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন। ২০০৫ সালে চারটি কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গ্যান্ট্রি ক্রেন যুগের সূচনা হয়েছিল। গত আগস্টে চীন থেকে আনা তিন গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করতে প্রায় দেড় মাস সময় নেয়ার পর আজ থেকে পুরোদমে চালু হচ্ছে এই তিন গ্যান্ট্রি ক্রেন। প্রতিটি গ্যান্ট্রি ক্রেন বছরে একলাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করার সক্ষমতা রাখে।
নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো সম্পর্কে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বলেন, ‘এগুলো ১৫ সারি পর্যন্ত কনটেইনার উঠা-নামা করাতে পারবে। বর্তমানে বন্দরে থাকা গ্যান্ট্রি ক্রেনগুলো ১৩ সারি পর্যন্ত যেতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’
বন্দরের জাহাজ জট কমাতে কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহাজ থেকে যাতে দ্রুত কনটেইনার উঠানো ও নামানো যায় সেজন্য নতুন তিনটি গ্যান্ট্রি ক্রেন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) তিন নম্বর বার্থে যুক্ত করা হয়েছে। একটি জাহাজে কাজ করবে এই তিন গ্যান্ট্রি ক্রেন। একইসাথে বন্দরে গিয়ারলেস জাহাজ ( যেসব জাহাজের নিজস্ব ক্রেন নেই) আনার বিষয়ে শিপিং কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
গিয়ারলেস জাহাজের বিষয়ে জানা যায়, যেসব বন্দরের জেটিতে নিজস্ব ক্রেন রয়েছে সেসব বন্দরে গিয়ারলেস জাহাজ ভিড়ে থাকে। আর গিয়ারলেস জাহাজ গিয়ারড জাহাজের তুলনায় গড়ে ৩০০ কনটেইনার বেশি পরিবহন করতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের শুধু সিসিটি ( চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল) ছাড়া সব জেটিতে গিয়ারড জাহাজ ভিড়ে থাকে। এখন এনসিটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হওয়ায় গিয়ারলেস জাহাজ বেশি আনার দিয়ে জোর দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গ্যান্ট্রি ক্রেনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) নজমুল হক বলেন, আগামী শুক্রবার আরো তিনটি গ্যান্ট্রি ক্রেন চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ার কথা রয়েছে। গত আগস্টে চীন থেকে আসা তিনটির ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আগামী বছরের মার্চে আরো চারটি আসার কথা রয়েছে।
জানা যায়, ২৩৮ কোটি ৬১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় ৪০ টন ধারণ ক্ষমতার চারটি ‘কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন’ চীন থেকে আনা হবে। চীনের সাংহাই জেনহুয়া হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি এসব গ্যান্ট্রি ক্রেন সরবরাহ করবে। এছাড়া চলতি বছরের ছয়টি ( গত আগস্টে তিনটি ও আগামী শুক্রবার তিনটি) গ্যান্ট্রি ক্রেন ৩৪৫ কোটি টাকায় চীনের একই প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করেছে সরকার।
বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, কনেটেইনার উঠানামায় সবচেয়ে কার্যকর ইকুইপমেন্ট হলো কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন। চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫টি কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেনের প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ৪টি। এই ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণে প্রায় দুই বছর অচল ছিল দুটি। ২০০৫ সালে জাপানের মিতসুবিসি থেকে নেয়া এসব গ্যান্ট্রি ক্রেনের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩০ সালে। বন্দরের বহরে নতুন যন্ত্রপাতি যুক্ত না হলে আগামীতে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে অশনি সঙ্কেত দেখা দিতে পারে। যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত না থাকার কারণে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণে সময়ও বেশি লাগছে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল।
বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠন চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়ে যাচ্ছে। এই বাড়তি কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ইকুইপমেন্টের পাশাপাশি নতুন নতুন ইয়ার্ড চালু করতে হবে। এখন কিউ গ্যান্ট্রি ক্রেন আসছে তা সুখবর, তবে এগুলো দ্রুত বন্দরে অপারেশনাল কাজে লাগাতে হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৪ সালে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২১৯, ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ এবং ২০১৭ সালে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭টি একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। চলতি বছর গত আগস্ট পর্যন্ত ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৮১ টি একক কনটেইনার হ্যান্ডেল করে চট্টগ্রাম বন্দর।