পদ্মাপাড়ে মরা ইলিশ কুড়ানোর ধুম

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পদ্মাপাড়ে মরা ইলিশ কুড়ানোর ধুম/ছবি: বার্তা২৪

পদ্মাপাড়ে মরা ইলিশ কুড়ানোর ধুম/ছবি: বার্তা২৪

 

রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে এখন প্রতিদিনই ভেসে বেড়াচ্ছে শত শত মরা ইলিশ। সেই ইলিশ কুড়ানোর ধুম পড়েছে পদ্মাপারের শিশু-কিশোরদের। পদ্মা নদীর রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া থেকে পাংশা উপজেলার শিয়াল ডাঙ্গি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার নদীতে এই  চিত্র দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুনচী  এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে  জটলা বেঁধেছে অনেক লোক, তারা উৎসাহ নিয়ে দেখছে নদীতে ভেসে যাওয়া মরা ইলিশ কুড়ানো।

এ সময় ধুনচী এলাকার জেলে আলম হোসেনের ছেলে সিয়াম (১০) জানায়, পদ্মায় ইলিশ ধরলে পুলিশে ধরে নিয়ে যায় তাই তার বাবা বাড়িতেই বসে আছেন। এদিকে নদীতে শত শত  ইলিশ স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। আমি প্রতিদিন ওই মরা ইলিশ কুড়িয়ে বিক্রি করছি। গতকাল এভাবে ১৭ টি ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে বিক্রি করেছি।  সাড়ে ৮ শ টাকা পাইছি।

বিজ্ঞাপন

শুধু সিয়াম নয়, তার মতো আরো অনেক শিশু এখন মরা ইলিশ কুড়ানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ বিক্রি করে আবার কেউ খাওয়ার জন্য ইলিশ মাছ কুড়াচ্ছে।

ধুনচী এলাকার বাসিন্দা শাহিন মিয়া জানান, পদ্মা নদীতে এখনও শত শত জাল ফেলা আছে, যে জালগুলোতে ইলিশ মাছ ধরা পরে। তবে অভিযানের কারণে দিনের বেলায় জাল ফেলা থাকলেও  নদীতে জেলেরা  নামেন না। ওই জালের মরা মাছগুলো জাল থেকে ছুটে নদীতে ভাসছে। সেগুলোই বাচ্চারা কুড়াচ্ছে।

এদিকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলায়  ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারিভাবে ইলিশ মাছ শিকার করা, বিক্রি করা এমনকি পরিবহন করায়ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যে কারণে সরকারিভাবে প্রত্যেক জেলেকে ২০ কেজি করে চাল প্রণোদনা দেওয়ার কথা। তবে এই প্রণোদনা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন  অনেক জেলে।

সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অভিযানের পর ৩২ জন জেলেকে আটকের পাশাপাশি ৪৩ কেজি ইলিশ মাছ ও  ১ লাখ ৯৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।

আটক হওয়া রাজবাড়ীর জেলে সাইফুল ইসলাম জানান, মাছ ধরে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। সারা বছর পদ্মায় ইলিশ পাওয়া যায় না। যে কারণে নিষেধ থাকলেও আমরা ঝুঁকি নিয়ে ইলিশ ধরি। এখন পদ্মায় জাল ফেললেই প্রতিবারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যায়। সরকারিভাবে আমি কোন সাহায্য  সহযোগিতা পাইনি।

আটক হওয়া অপর জেলে নিয়ামত উল্লাহ জানান, আমি চাল পেয়েছি তবে ২০ কেজি নয় মাপার পরে হয়েছে ১৪ কেজি। ১৪ কেজি চালে কি সংসার চলে ? অন্য কিছু লাগে না ? ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়েই মাছ ধরতে যাই।

রাজবাড়ী জেলা মৎস কর্মকর্তা মজিনুর রহমান বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে  ইলিশ ধরায় নিশেধাজ্ঞা থাকায় নিয়মিত পদ্মা  নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। চলতি মৌসুমে রোববার পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে ৩৭৭ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। জব্দ করা হয়ে ১৮ লক্ষ ৭৭ হাজার মিটার কারেন্ট জাল যা আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে।

জেলেদের প্রণোদনার বিষয়ে এই কর্মকর্তা আরো জানান, এ বছর রাজবাড়ী জেলার কার্ডধারী ৪ হাজার ৬৪০ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের  কার্ড নেই তাদের কোন  সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি।