পরিবহন শ্রমিকদের কাছে সারাদেশ জিম্মি!

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পরিবহন শ্রমিকদের কাছে সারাদেশ জিম্মি। ছবি: বার্তা২৪.কম

পরিবহন শ্রমিকদের কাছে সারাদেশ জিম্মি। ছবি: বার্তা২৪.কম

‘সকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতেও সঠিক সময়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস পায়নি। টার্মিনাল এসে দেখি প্রত্যেকটি কাউন্টার বন্ধ। শার্টারে তালা মারা। আজকে আর যাওয়া হবে না। বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। দাবি আদায়ের নামে বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা নৈরাজ্য করছে। আমি হতবাক, পরিবহন শ্রমিকদের কাছে সারাদেশ জিম্মি হয়ে পড়েছে। যার কারণে সঠিক সময়ে বাড়ি থেকে বের হয়েও গন্তব্যে যেতে পারছি না।’

ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সমসেরাবাদ এলাকার কলেজছাত্র আবদুজ্জাহের রাব্বি। ঢাকার উদ্দেশে রোববার (২৮ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু হতাশ হয়ে টার্মিনাল থেকে তাকে আবার বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা (দক্ষিণ) বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলন সরকার কিংবা জনগণের বিরুদ্ধে নয়। এ আন্দোলন পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে। চালকরাও ৫ লাখ টাকা দিতে পারবে না। ৫ লাখ টাকা দেয়ার সামর্থ্য থাকলে তারা আর গাড়ি চালাবে না। তখন তারা ব্যবসা বাণিজ্য করবে। এতে পরিবহন চালকদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৮ম শ্রেণি না করে ৫ম শ্রেণি পাশে চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবিলম্বে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও ধর্মঘট পালন করছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান করেছেন। সকাল ৬টা থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও লেগুনা বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করছে তারা। এতে দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।

এদিকে সকালে লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লাগামী সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। খোলা হয়নি কোনো বাস কাউন্টার। বাস না পেয়ে অনেক যাত্রী বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে শহরের দক্ষিণ তেমুহনী, উত্তর তেমুহনী ও ঝুমুর সিনেমা হল এলাকায় যাত্রীদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। জেলার অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস-ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়নি।

বাস চালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এ আন্দোলন করছি। আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশে সকল আন্দোলন যথার্থভাবে পালন করব।’

প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে শনিবার (২৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এতে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনের চালক জামিন পাবেন না বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে চালক অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হলে ৩০২ ধারায় ফাঁসির বিধান রাখা হয়।