ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে উবার-সহজ-পাঠাও
ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার, সহজ ওপাঠাও রাইড কর্তৃপক্ষ। মূলত এই ৩টি অ্যাপ যাদের মোবাইলে রয়েছে তাদের সেইভ করে রাখা সব মোবাইল নাম্বার, এসএমএস ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যাদি গোপনে চুরি করে নিজেদের সার্ভারে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাঠাও, উবার ও সহজ রাইড অ্যাপস কর্তৃপক্ষ যদি ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে তাহলে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সংক্ষুব্ধ যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, তিন বছর আগে দেশে অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হয়। যা গত দেড় বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রাজধানীতে লাখেরও বেশি মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়ে যাত্রী টানছে। আর ৩০ হাজারের মতো প্রাইভেটকার ঢাকার ভেতরে অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী আনা নেওয়া করছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘যেসব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করছে তারা আইনের চোখে অপরাধী। তথ্য প্রযুক্তি আইনে তাদের বিরুদ্ধে সাজার বিধানও রয়েছে।’
এদিকে বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ নং ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য ব্যাক্তির মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, গুগল প্লে স্টোরের তথ্য মতে বাংলাদেশে পাঠাও অ্যাপ ১০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে। সে হিসেবে ১০ লাখ মোবাইল ফোনের তথ্য নিয়ে নিয়েছে পাঠাও। এরমধ্যে এসএমএসও রয়েছে। অনেকের এসএমএসে সংবেদনশীল তথ্যসহ গোপনীয় কথাবার্তা থাকে। এছাড়া ব্যাক্তির ব্যাংক একাউন্টসহ লেনদেনের তথ্যাদিও থাকে। এসব তথ্য এখন পাঠাও, উবার ও সহজ অ্যাপ প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে। ফলে তারা কাউকে দিয়ে বা নিজেরা ব্যবহারকারীদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। তবে এখনও কেউ এ ধরণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানা যায়নি।
বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বিশ্লেষক মুরাদ শুভ জানান, ব্যবহারকারীদের তথ্য নেওয়ার মাধ্যমে তাদের রুচিবোধ, আর্থিক অবস্থা, কখন কোথাও যাতায়াত এসব অনুমান করে মার্কেটিং পলিসি নির্ধারণ করতে পারে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। যার কাছে এসব তথ্য বেশি সে প্রতিযোগিতায় ততবেশি এগিয়ে থাকবে। কিন্তু অ্যাপ চালনোর জন্য এসব তথ্যের দরকার পড়ে না। এখন এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া একটি আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়।
তিনি আরো জানান, বিআরটিএ’র করা রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই। তবে সার্ভারের তথ্য বিআরটিএ যাতে দেখতে পারে সে বিধান রয়েছে।
কম্পিউটার সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি বিষয়ে পিএইচডিধারী রাগীব হাসান দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল অ্যাপ সিকিউরিটি এনালাইসিস নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘মাইক্রোফোন থেকে শুরু করে জাইরোস্কোপ, এক্সিলারোমিটার, জিপিএস, এসব দিয়ে যাবতীয় গোপনীয়তা জানা সম্ভব। আপনি কখন হাঁটেন, কখন ঘুমান, কার সাথে কথা বলেন, কোথায় কোথায় ঘুরছেন সব কিছু। এই তথ্যগুলো কারো কাছে গেলে তা দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এ কাজটাই করেছে পাঠাও।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাইভেসি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মোবাইল অ্যাপ ইন্সটলের সময় অনেক বিষয়ে পারমিশন চাওয়া হয়। প্রায় সবাই খেয়াল করেন না কী কী পারমিশন চাওয়া হচ্ছে। অনেক অ্যাপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পারমিশন নিয়ে রাখে, যাতে ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করা যায়।’
এদিকে, গ্রাহকের মোবাইলের ব্যাক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করেনি পাঠাও। প্রতিষ্ঠনটি জানিয়েছে, তারা যাত্রীদের তথ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের সাথে শেয়ার করে না। আর অ্যাপ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়া কোনো তথ্য নেয়া হয় না।
তবে এ বিষয়ে সহজ ও উবার কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।