ভোলা সাইক্লোন: ট্রাঙ্কে ঢুকে বেঁচে গিয়েছিলেন ফাতেমা
‘সারাদিনের ঝড়িতে (বৃষ্টি) ঘরের তন বাইরতে হারি ন। ঝড়ির কারণে ঠাণ্ডাও আছিলো। খেতা (কাঁথা) গাত (গায়ে) দিয়ে হুতি রইছি। দুরিয়া (দুপুর বেলা) মুরি (মুড়ি) খাইছি আঁই, মা আর আব্বা। হাঁজের লগে বাতাইস শুরু অইছে। হরে আবার বেঁকে হুতি ঘুম গেছি। ইয়ার হরে (এরপর) অনেক রাইত তুফান শুরু অইলে আঁঙ্গো ঘুম ভাঙি যায়।
আচমকা ঘরের মধ্যে হানি ঢুকতে দেয় আঁরে আর চাচতো ভাই-বোইন ছোগারে(৬ জন) ট্রাংকের মধ্যে ঢুকাই রাইখছে। ইয়ার লাই (যার কারণে) আমরা বাঁচি গেছি, আঁঙ্গো কিছু অয় নাই। কিন্তু খুব ডর লাইগছে। মনে অয়ছে ট্রাংকসহ ঢুবি যাইয়াম। হরের দিন ভ্যানে (সকালে) মানুষ, গরু, ছাগল হানির(পানি) হোতে (স্রোতে) ভাইসতে দেখছি। অনেকের বাড়ি-ঘর, ধান-চাল গাঁঙ্গের (নদীর) হোতে নিয়া গেছে। রাস্তা-ঘাট বইলতে কিচ্ছু আছিল না। সব বিলের মত অই গেছে’।
সোমবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে দেখা হয় কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি গ্রামের ৫৮ বছরের বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। জানতে চাইলে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের মহাপ্রলয়ংকারী ‘ভোলা সাইক্লোন’র তাণ্ডবের ঘটনাটি তিনি এভাবে বর্ণনা করেন। তিনি ওই এলাকার জেলে ইদ্রিস আলীর স্ত্রী।
ওইদিনের সাইক্লোনে তার কোনো আত্মীয় স্বজন হারায়নি। তবে ওই ঘুর্ণিঝড়ে তাণ্ডবে তাদের বাড়ি-ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসের তীব্র স্রোতে ভাসিয়ে নিয়েছে তাদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী। ফাতেমা বেগম ওই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। যিনি দেখেছেন পানিতে ডুবে অকালে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়া হাজার হাজার মানুষকে। নদীর পানিতে ভাসতে দেখেছে তাদের লাশ।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকারী ‘ভোলা সাইক্লোন’কে ২০১৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের আবহাওয়া সংস্থা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় বলে ঘোষণা করেছে। ওইদিন সরকারি হিসেবে ৫ লাখ হলেও তবে বেসরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুসারে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান তখন। ওই দিনে নিহত মানুষদের স্মরণ, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাণঘাতী দুর্যোগে সচেতনতা, উপকূলের সমস্যা, সম্ভাবনার কথা সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল এনে উপকূল সুরক্ষার জন্য দিনটিকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে ‘উপকূল দিবস বাস্তবায়ন কমিটি’।
এ দাবিতে সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।