একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার জীবনযুদ্ধ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক/ ছবি: বার্তা২৪.কম

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক/ ছবি: বার্তা২৪.কম

আজিজুল হক, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। বীরত্বের সাথে লড়েছেন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। ছিনিয়ে এনেছেন বিজয়। এখনো শরীরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন যুদ্ধে আহত হওয়ার চিহ্ন। ভূষিত হয়েছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার খেতাবে। কিন্তু জীবনযুদ্ধে তাকে লড়তে হয়েছে রিক্সার প্যাডেলের সাথে, চালাতে হয়েছে পানের দোকান।বর্তমানে সেই সুযোগও নেই, বেকার জীবন কাটাচ্ছেন আজিজুল।

বাঁচবেন কি মরবেন, যুদ্ধ বিজয়ের পর কী হবে, বিজয়ের পর প্রাপ্তি কী হবে, তা নিয়ে কখনোও ভাবেননি বলে জানান এ মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তার কাছে এখন মনে হচ্ছে ১৯৭১ সালের সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে জীবন যুদ্ধ অনেক কঠিন।

বিজ্ঞাপন

একাত্তরে দেশকে স্বাধীন করলেও জীবনযুদ্ধ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও শহরের ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এ মুক্তিযোদ্ধার বাসায় বার্তা২৪কে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলেন আজিজুল হক।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/15/1544883023790.gif

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশকে পাক হানাদার মুক্ত করতে যুদ্ধে যান আজিজুল হক। বাবা আলিমউদ্দিন ও মা সুরতন বেওয়া তাদের একমাত্র সন্তানকে ছাড়তে না চাওয়ায় পালিয়ে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

রণাঙ্গানে যাওয়ার আগে ২৯ দিন ভারতের মাটিকুন্ডা থুবড়াবাড়ি ক্যাম্পে কমান্ডার মোহাম্মদ সাইফুল্লার নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ নেন আজিজুল। এরপর সেখান থেকে পানিঘাটা ক্যাম্পে, সেখান থেকেই কমান্ডার সাইফুল্লার নেতৃত্বে কয়েক দলে ভাগ হয়ে যান।

এরপর ৭ নম্বর সেক্টর থেকে আজিজুল হকসহ ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় যুদ্ধে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকে ২ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

পাক হানাদার বাহিনীকে ধাওয়া দিলে ঠাকুরগাঁও ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরে ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

দিনাজপুরের চোখাই দিঘি ও ঘুঘু ডাঙ্গায় শত্রু পক্ষের ছোড়া বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয়েছিলেন তিনি। তবুও যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তবে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দারিদ্র্যের কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। ভাতার অল্প টাকা দিয়েই চলে সংসার।

যুদ্ধের পর থেকে শহরের ঘোষপাড়া মহল্লায় তার বাবার রেখে যাওয়া বসত ভিটায় বসবাস করে আসছেন। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও চিকিৎসার খরচ যোগানোর সামর্থ্য নেই মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের।

লেখাপড়া না করতে পেরে তার বড় ছেলে সুজন (২০) এখন শহরের একটি স্টুডিওতে কর্মচারীর কাজ করছেন। আর ছোট ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (১৪) শহরের কোকিল স্কুলে পড়ছে। টাকার অভাবে মেয়ে নাছরিন আক্তারকে বিয়ে দিতে পারছেন না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/15/1544883066994.gif

মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল বার্তা২৪কে বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেও আজ আমি অবহেলিত। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলেও জীবন যুদ্ধ এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের দেওয়া ভাতা পেলেও সংসার চালাতে আমাকে রিক্সা চালানো, পান দোকান চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, যাতে আমার জন্য কিছু একটা করে দেন। যাতে জীবনটা ভালো করে চালাতে পারি।’

তিনি জানান, ২০১৩ সালে বাড়ি নির্মাণের জন্য বরাদ্দের কথা বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অপরদিকে তার বাবার রেখে যাওয়া ৪০ শতাংশ জমির ১১ শতাংশ জমিই জবরদখল করে রেখেছেন এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। এ বিষয়ে অনুরোধ করার পরও সেই জমি উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন বা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড।

ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর বলেন, ‘আজিজুল হক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাকে কারো সহানুভূতি চাইতে দেখিনি। দেশের জন্য যুদ্ধ করাটা যেমন সে সম্মানের মনে করেছে, তেমনি জীবিকার তাগিদে রিক্সা চালানোর মত কাজকেও সে ছোট করে দেখেনি।’