বিলুপ্তির পথে উড়ুন-ঢেঁকি
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য উড়ুন-ঢেঁকি। আধুনিকায়নের যুগে অনেকটাই কমে গেছে এসবের ব্যবহার। ধান,গম, ভুট্টা ভাঙা, মসলা পেষা, বিভিন্ন দানা জাতীয় শস্য ভাঙানোর জন্য উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এক সসময় জনপ্রিয় ছিল ঢেঁকি ও উড়ুন। কিন্তু প্রযুক্তিরর অগ্রগতিতে এখন তা বিলুপ্তপ্রায়।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া ঘেষা ইন্দিরারপাড় এলাকার সাদের আলী দীর্ঘদিন ধরে উড়ুন, ঢেঁকি তৈরি করে হাট-বাজারে বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
তিনি জানান, মাঝেমধ্যে দু-একটি উড়ুনের ক্রেতা আসে। আর ঢেঁকির ক্রেতা নাই। বর্তমানে একটি উড়ুন এক হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে বিক্রি হয়। এখন মানুষ মেশিনের সাহায্যে দ্রুত সময়ে সবকিছু ভাঙতে পারে। তাই আগের মতো উড়ুন আর ঢেঁকির কদর নাই।
কাঠের গুঁড়িতে গর্ত করে তৈরি করা এই বস্তুটিকে অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন; উড়ুন, করাল, উলকি ইত্যাদি। ধান থেকে তুষ (খোসা) ছড়িয়ে চাউল, হলুদ, মরিচ ও বিভিন্ন মসলা গুঁড়া করা। ডাল ভাঙা, চাউল, গম ভেঙে আটা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ঢেঁকি পায়ে ভর দিয়ে, আর উড়ুন এর জন্য একটি গাইন (গ্রামের ভাষা) দিয়ে আঘাত করলে ধান বা অন্যান্য শস্য সামগ্রী সহজে ভেঙে যায়।
গ্রামের কিছু বাড়িতে এখনও উড়ুন-ঢেঁকির ব্যবহার দেখা যায়। নবান্নের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে গেলে ঢেঁকি বা উড়ুন ব্যবহার করেই আটা তৈরি করেন অনেকে। তাছাড়াও গ্রামাঞ্চলের বিয়েবাড়ি, কুলখানির মত অনুষ্ঠানে মশলা পিষতে দেখা যায়।
উড়ুন-ঢেঁকি'র বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলম জানান, ঢেঁকি ও উড়ুন এক সময় ছিল ধনী আভিজাত্যের প্রতীক। এখন বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি আসার ফলে এসব প্রচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।