শিক্ষিত জাতিই পারে দেশকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে তুলতে হবে। কারণ একটি শিক্ষিত জাতিগোষ্ঠীই পারে দেশটাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। আমরা সবসময় এটা চিন্তা করি- আজকের কথা না, আগামীতে আমাদের কী হবে? ২০২১ সালের মধ্যে দেশটাকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। আমাদের গ্র্যাজুয়েশন হয়ে গেছে। এই উন্নতিটাকে ধরে রাখতে হবে।
সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৮ এর ফলাফল প্রকাশ; ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জেএসসি, জেডিসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও ফলের পরিসংখ্যান হস্তান্তর; ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় অনুষ্ঠানে।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর শিক্ষাখাতে যে অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, সেটা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গেল। ১৯৯৬ সালে আমি যখন ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসি, তখন দেখলাম আমাদের স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৪৫ ভাগ। আমার খুব অবাক লাগলো যে, স্বাধনীতার এত বছর পরেও স্বাক্ষরতার হার এত কম! এমনকি অক্ষরজ্ঞানটাও সাধারণ মানুষের নাই। তখন আমরা একটা কর্মসূচি নিলাম যে আমরা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এ জন্য নিরক্ষরতামুক্ত প্রজেক্ট আলাদাভাবে পাশ করে সমস্ত জায়গায় এ উদ্যোগটা নিলাম যে সারাদেশের মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দেব। সেইসঙ্গে দল হিসেবেও আমরা আরেকটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম যে, আমাদের যে ছাত্র সংগঠন আছে ছাত্রলীগ, তাদেরকে একটা নির্দেশ দিলাম যে অন্তত একজন ছাত্র কমপক্ষে অন্তত পাঁচজনকে অক্ষরজ্ঞান দেবে। তাহলে সে সংগঠনে ভালো পদ পাবে এবং এ রিপোর্ট আমাকে জমা দিতে হবে। তারা কিন্তু ছুটির সময় বাড়ি গেলে, তাদের কাজ হচ্ছে তার এলাকায় যারা নিরক্ষর আছে তাদেরকে অক্ষরজ্ঞান দিতে হবে, সেই সাথে সাথে তাদের স্থানীয় স্কুলে ভলান্টিয়ারি সার্ভিস দেবে। এই কাজটা আমি তাদের দিলাম। এভাবে আমরা একটা উদ্যোগ নিলাম সমগ্র বাংলাদেশে। দেশ নিরক্ষরমুক্ত করার জন্য আমরা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থাও করলাম। এ জন্য আমরা এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও নিয়ে আসলাম। এর ফলাফল হলো- মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা স্বাক্ষরতার হার ৬৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হলাম। যার জন্য ইউনেস্কো আমাদের একটা পুরষ্কারও দিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা সব সময় উদ্যোগ নিয়েছি, আমাদের যে মৌলিক চাহিদাগুলো আছে তা পূরণ করা। আমাদের লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেটা গড়তে হলে আমি মনে করি শিক্ষাই পারে একটা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে। ক্ষুধামুক্ত করতে, দারিদ্রমুক্ত করতে একটা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী আমাদের প্রয়োজন । তাই আমরা শিক্ষাকে সবসময় গুরুত্ব দেই। আর এই শিক্ষাকে সবসময় আধুনিকপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। কারণ আমি ৯৬ সালে এসে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, আমাদের ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞান পড়ার দিকে ঝোঁক কম, তারা বিজ্ঞান পড়তে চাইত না। সেসময় আমি ১২টা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে আইন করে দিলাম এবং ৬টা বিশ্ববিদ্যালয় কাজও শুরু করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন কিন্তু সত্যিই ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখনকার ছেলেমেয়েরা ক্লাশ করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুমে। দৃশ্যমান কিছু দেখে একটা শেখা সে শেখাটা মনে থাকে। আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থাটা করব।
ডেল্টাপ্লান ২১০০ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভবিষ্যত কী হবে সেই পরিকল্পনটাও আমি জাতিকে দিয়ে গেলাম। আমি মনে করি একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে পরেই আমরা আমাদের অর্জনগুলো আরো দ্রুত করতে পারব এবং তার শুভ ফলটাও আমরা পাবো। ঠিক সময়মত পরীক্ষার নেওয়া, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা , বিনা পয়সায় বই বিতরণে মাধ্যমে শিক্ষারপ্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়ছে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যরা।
