‘ছাপ্পর মারমো লৌকায়’
সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে: ভোটের কি অবস্থা, প্রশ্ন শেষ না হতেই ঝটপট জবাব, ‘কাই জেতে জিতুত, ছাপ্পর মামমো লৌকেত।’ কেন নৌকা? এবারও সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘হাসিনা আমার বোন।’
খুশি হিজড়ার এমন ঝটপট জবাবে গাড়ি ভর্তি লোকের সবার নজর তার দিকে। পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠে, ‘আমরা সব হিজড়া হাসিনা আপাক ভোট দেমো। হামার কাছে তিনিই সব। হামাক বাড়ি থাকি তাড়ি দিছে, হাসিনা আপাই একন হামার বোন, তিনিই আমার বাপ মাও। তার মার্কাত ভোট দিবেলই তো কোন্টে দিমো।’
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ) এই দুই বাসিন্দা আরও জানালেন সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যেয়ে নৌকা মার্কায় সিল দেবেন। যে যেখানে আছে, সবাই সকাল সকাল ভোট দেবেন। নৌকার বিরুদ্ধে কেউ ভেজাল করার চেষ্টা করলে প্রতিহত করারও চেষ্টা করবেন।
খুশি বলেন, আমরা নিমকহারাম নই। আমাদের জন্য কেউ কিছু করলে তার কথা আমরা সারাজীবন মনে রাখি। হাসিনা আপা আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে আমরা তাকে ভোট দেবো।
সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপমতে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে আনার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গাড়ি চালকসহ বিভিন্ন চাকরির ব্যবস্থা করেছে।
স্কুলগামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪ স্তরে (জনপ্রতি মাসিক প্রাথমিক ৩০০, মাধ্যমিক ৪৫০, উচ্চ মাধ্যমিক ৬০০ এবং উচ্চতর ১০০০ টাকা হারে) উপবৃত্তি প্রদান। ৫০ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল হিজড়াদের বিশেষ ভাতা জনপ্রতি মাসিক ৪০০ প্রদান; বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম হিজড়া জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় আনার চেষ্টা চলছে।
এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে পাইলট আকারে। বছর বছর এর পরিধি বাড়ছে। কর্মসূচি হিসেবে দেশের ৭টি জেলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নতুন ১৪টি জেলাসহ মোট ২১ জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, সিলেট।
২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ৫৮ লাখ,৭২ হাজার টাকা। আরও ১৪ জেলায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে এ কার্যক্রম ধীরে ধীরে দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হবে।