ছেলের বইখাতা বুকে জড়িয়ে এখনো কাঁদেন ফাতেমা
পড়ার টেলিবেলে বইপত্র আর স্কুল ব্যাগটি আগের মতোই সাজানো আছে, কিন্তু নেই ছেলে মাহিন। তাই ঘরের দৈন্দিন কাজ শেষে ছেলের পড়ার টেবিলে বসে বইখাতা বুকে জড়িয়ে এখনো কেঁদে ওঠেন মা মমিন ফাতেমা। মাহিনের ছোট ভাই, বাবা ও পাশের বাসার মহিলারা এসে এ কান্না থামাতে হয়।
প্রতিদিন বিকেল বেলায় বাসার আঙিনায় খেলাধুলা শেষে চা পান করতো মাহিন। মনের অগোচরে এখনো মাঝে মাঝে ছেলের জন্য কাপে চা নেন ফাতেমা। কিন্তু প্রতিদিনের মতো মাহিন এখন আর আসে না। কারণ বন্ধুদের হতে খুন হয়ে সে না ফেরার দেশে চলে গেছে অনেকদিন আগেই।
গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ কলকাকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমতিয়াজ হাসান মাহিনকে (১৫) ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। সে হাটহাজারী সরকারহাট এলাকার মো. ইলিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় শাহেদ (১৫) নামে এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ।
পরিবারের অভিযোগ, মাহিনকে খুনের ঘটনায় তার দুই বন্ধু সাইফুর রহমান শাওন এবং মেহেরাব হোসেন রোহানকে আসামি না করে সাক্ষীতে রেখে হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
মামলা বিবরণ থেকে জানা গেছে, মাহিন সন্ধ্যায় তার বন্ধু শাওনের দোকানে যায়। সেখানে দুষ্টামির ছলে আরেক বন্ধু শাহেদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার। এক পর্যায়ে শাহেদ তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে মহিনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নগরীর ডবলমুরিং থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ছৈয়দ আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় শুধু মাত্র শাহেদকে আসামি করা হয়। ঘটনায় সাইফুর রহমান শাওন এবং মেহেরাব হোসেন রোহানকে সাক্ষী হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মাহিনের মা-বাবার অভিযোগ, এই দুইজনও ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
মাহিনের বাবা ইলিয়াছ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ঘর থেকে ডেকে নিয়েছিল শাওন ও রোহান। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা ডেকে নিয়ে দোকানে ওই ছেলেকে দিয়ে খুন করিয়েছে।’
মাহিনের মা মমিন ফাতেমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে শাওন ও রোহানের পূর্ব থেকে ঝগড়া ছিল। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারাই কৌশলে আমার ছেলেকে মারিয়েছে। আমার ছেলেকে ছুরিকাঘাত করার সময় তারা তো উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু তারা আমার ছেলেকে উদ্ধার করেনি। তাদের ইচ্ছায় আমার ছেলে খুন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় আমার ছেলের আসল খুনিদের আসামি না করে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ এ কাজ করেছে। কারণ হত্যাকাণ্ডের দিন মামলার কপিতে মাহিনের বাবার স্বাক্ষর নিয়েছেন থানার এসআই ছৈয়দ আলম। মামলায় কি লিখেছে আমরা কিছুই জানতাম না।’
এদিকে স্কুলছাত্র ইমতিয়াজ হাসান মাহিন নিহত হওয়ার ৬ মাস চললেও মামলা চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। তিন স্বাক্ষীর জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করা হয় ঘটনার পরদিনই। এখানে অপর স্বাক্ষী রয়েছেন মাহিনদের বাসার সামনের আমেরিকান হাসপাতালের দারোয়ান মো. শাহিন সরকার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপিলিটন পুলিশের ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মহি উদ্দিন সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঘটনায় আসামি শাহেদ গ্রেফতার আছে। অপর দুই বন্ধু খুন করেনি। তাই তাদের সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।’
মা-বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি বলেন, ‘মাহিনের বাবা মা অভিযোগ করতেই পারে। কিন্তু তদন্তে যাদের জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায় চার্জশিটে তাদের বাদ দেওয়া হবে না।’