হেলমেটে অনীহা, বাড়ছে দুর্ঘটনা

  • মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডে, মেহেরপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল দুটি ভেঙে যায়/ ছবি: বার্তা২৪

মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল দুটি ভেঙে যায়/ ছবি: বার্তা২৪

সড়ক দুর্ঘটনায় এক সপ্তাহে মেহেরপুরে চারজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনজন এবং লেগুনা দুর্ঘটনায় আরেকজন নিহত হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, হেলমেট ব্যবহার না করার কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল ২৯ জানুয়ারি মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার ফতাইপুর নামক স্থানে দু’টি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমল হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন। আহত হন দুই মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীসহ তিন জন। দু’টি মোটরসাইকেলের চালক ও দুই আরোহীর কারো মাথায় হেলমেট ছিল না। ফলে আহত তিনজনই মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনার এক দিন পর ৩১ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে লেগুনা থেকে নামতে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান সহগলপুর গ্রামের রেবেকা খাতুন (৫৫) নামের এক নারী। অসুস্থ নাতিকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি নিজেই লাশ হয়ে ফেরেন। রেবেকার মৃত্যুর দু’ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের সদর উপজেলার পাটকেলপোতা তেলপাম্পের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়াডাঙ্গার বোয়ালমারী গ্রামের মাও. লুৎফর রহমান নিহত হন। বাঁশের শলি বোঝাই একটি অবৈধ যান রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত লুৎফর রহমানের মাথায়ও হেলমেট ছিল না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/05/1549313657489.jpg

এদিকে ২ ফেব্রুয়ারি সকালে গাংনী শহরের র‌্যাব ক্যাম্পের সামনের সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দুই ছাত্র। হেলমেট বিহীন অবস্থায় মোটরসাইকেলে থাকায় দু’জনেরই মাথায় গুরুতর আঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। দুপুরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আহত কলেজ ছাত্র আক্তারুজ্জামান (২০)। ওই মোটরসাইকেল আরোহী হারুন অর রশিদ হারুর (২২) অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় ছাত্র আন্দোলনের পর নিরাপদ সড়কের বিষয়ে জেলা উপজেলা পর্যায়েও পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোরতা অবলম্বন করা হয়। হেলমেট ব্যবহারে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালায় পুলিশ। এর অংশ হিসেবে মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে মোটরসাইকেল মালিকদের মাঝে হেলমেট বিতরণ করে জেলা পুলিশ। পুলিশের কঠোরতার কারণে মোটরসাইকেল চালকদের মাঝে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু শতভাগ মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা হেলমেট ব্যবহার করছেন না। বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলেদের মধ্যেমোটর সাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহারের ঘটনা খুবই কম।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. এমকে রেজা বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়ে হাসপাতালে আসেন তাদের বেশিরভাগের মাথায় আঘাত থাকে। হেলমেট মাথায় থাকা লোকজনের আঘাতের পরিমাণ কম হয় এবং বেশিরভাগই বেঁচে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে যে দু’জন মারা গেছেন তাদের দু’জনেরই মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল।’

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শেখ জাহিদুল ইসলাম (পিপিএম) বলেন, ‘হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে তা নয়। বিষয়টি হচ্ছে- হেলমেট থাকলে মৃত্যুঝুঁকি কম থাকে। দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলেও তাদেরকে হয়তো বাঁচানো যেত। আমরা মোটরসাইকেলের বিষয়ে কঠোর। কিন্তু মোটরসাইকেল ধরলেই বিভিন্ন ব্যক্তির সুপারিশের কারণে স্বাভাবিক কাজর্ক ব্যহত হচ্ছে। তাই হেলমেট ব্যবহার ও দুর্ঘটনা এড়াতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিজ্ঞাপন