নিমতলীর পর চুড়িহাট্টা, এভাবে আর কত?
২০১০ সালের ৩ জুন। পুরান ঢাকার নিমতলীতে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়ে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। অল্পক্ষণের মধ্যেই সেই আগুন ভয়াবহ রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। ইতিহাসের স্মরনীয় সেই অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মধ্যেই আগুন ছড়ায় আশেপাশের বেশ কয়েকটি ভবনেও!
সেবারও স্থানীয় গুদামে থাকা কেমিক্যাল পণ্যের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে যেন চোখের নিমিষেই। যে ভবনগুলোতে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল সেগুলোর একটিতে চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। যেখানে আনন্দের বাদ্যবাজনা ছিল, সেখানে শুরু হলো কান্নার রোল আর বাঁচার আকুতি। ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ চিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছিল নিমতলীর আকাশ-বাতাস। তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ততক্ষণে ঝড়ে যায় ১১৯টি প্রাণ।
মর্মান্তিক ওই অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে বিভিন্ন সময় কেমিক্যাল কারখানা সরানোর দাবিতে সামাজিক আন্দোলন হয়েছে। সেখানকার কেমিক্যালের গুদাম আবারো নতুন কোনো আতঙ্কের কারণ হতে পারে বলে একাধিকবার সচেতনও করেছে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো।
ঝুঁকিপূর্ণ গুদামগুলো সরাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা সময় নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কেমিক্যাল পণ্যের ৮০০ গুদামের তালিকা তৈরি করে সেসব কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগও নেয় সরকার। কিন্তু সেসব উদ্যোগ আটকে আছে কাগজ-পত্রে।
এভাবে দীর্ঘ আট বছরেও পুরান ঢাকা থেকে সরেনি ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা। এমনকি অনেক মালিকই বেশি ভাড়ার লোভে কেমিক্যালের গুদাম হিসেবেই বাসা ভাড়া দিয়েছেন। ফলে নিমতলীর ওই অগ্নিকাণ্ডের পরও কেমিক্যালের কারখানা আর গুদামের সংখ্যা পুরান ঢাকায় তো কমেইনি, বরং বেড়েছে নির্বিঘ্নে।
নিমতলীর ট্রাজেডির প্রায় আট বছর পর আজ তৈরি হলো আরেক চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে, তা এখনও সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও এটা স্পষ্ট যে, এবারও অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার কারণ কেমিক্যালের গুদামই।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত চকবাজারের চুড়িহাট্টার দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অন্তত ৭০ জন। আহত অর্ধশতাধিক। তারা ঢাকা মেডিকেলের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তবে অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, স্বজনের মরদেহ এখনও অনেকেই শনাক্ত করতে পারেননি। সেজন্য করতে হচ্ছে ডিএনএ পরীক্ষা। আর পুড়ে যাওয়া ভবনের ভেতরে আরও মরদেহ কিংবা মানুষের কয়লা মিলবে কিনা তা হয়তো এখন সময়ই বলে দেবে।