‘আমার আব্বা ঘুমাই রয়ছে, ডাক দিয়ো না’
চকবাজার এলাকার ওয়াহিদ ম্যানশনের পাশে ব্যাগ তৈরির দোকান ছিল মো.আলী হোসেনের (৭০)। দোকানে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডে আলী হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। আলী হোসেনের লাশ ঢামেক এর মর্গে দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছেন, ‘আমার আব্বারে আমি আর দেখতে পারমু না, এইটা কেমনে হয়গো। আমার আব্বা ঘুমাই রয়ছে, আব্বারে কেউ তোমরা ডাক দিয়ো না।‘
এভাবেই কেউ বাবা, কেই ভাই, কেই সন্তান হারানোর বেদনায় আহাজারি করছেন। তাদের মধ্যে কেউ স্বজনের মরদেহ শনাক্ত করতে পারলেও অনেকেই সেটি পারছেন না। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে প্রিয়জনের সেই মরদেহ শনাক্ত করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা। স্বজনদের এমন আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
দেখা যায়, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় প্রিয়জনদের নিহত হওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন পরিবারের লোকজন ও আত্মীরা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনদের এমন আহাজারিতে এক হৃদয়ে বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে ঢামেকের মর্গ এলাকায়।
বুধবার রাত ১০টার দিকে ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে চা পান করতে গিয়ে নিখোঁজ হন মো.জয়নাল আবেদীন বাবু (৫৭)। বাবাকে খুঁজতে মর্গে এসেছেন জয়নাল আবেদীন বাবুর মেয়ে নাসিমা আক্তার। বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আব্বা চা খাইতে গিয়েছিল ঐখানে। এর পর থেকে আব্বারে আর খুঁজে পাচ্ছি না। ফোনও বন্ধ পাচ্ছি। আশেপাশের লোকজন বলছেন বাবা পুড়ে মারা গেছেন। তাই মর্গে আসলাম খুঁজতে।’
এদিকে, যাদের লাশ ইতোমধ্যে শনাক্ত করা শেষ হয়ে গেছে তাদের লাশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বজনরা। কাঠের কফিন নিয়ে সারিবদ্ধভাবে স্বজনরা অপেক্ষা করছেন আর চোখের পানি ফেলছেন নীরবে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার মো.ইমরুল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত আমাদের হাতে ৬৭টি লাশ এসেছে। এর মধ্যে ৩৪ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে এবং দুই জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এদিকে রাজধানীর চকবাজারের ওয়াহিদ ম্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনের নিহত হওয়ার ঘটিনা নিশ্চিত করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। আর এ ঘটনায় ৪২ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।