‘ও ভাই আমার জানাজা করবা না’
জীবন সায়াহ্নে মমতাজ বেগম। বয়স ৯০ বছর। মেয়ে শাহিনুর বেগমের সঙ্গে থাকেন লালবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায়। শাহিনুরের ঘরে ৪ মেয়ে এক ছেলে। ১৭ বছর আগে শাহিনুরের স্বামী আরেকজনের সঙ্গে সংসার বেঁধেছেন। আর শাহিনুরের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ছেলে নয়ন।
চকবাজারে এক কসমেটিকস কারখানায় কাজ করতেন নয়ন (২৪)। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে সবাইকে ছেড়ে নয়ন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কেড়ে নিয়েছে নয়নের প্রাণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নাতির ছবি হাতে নিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছেন আর বার বার মাটিতে লুটে পড়ছেন মমতাজ বেগম।
মমতাজ বেগম দুই একবার জ্ঞানও হারিয়ে ফেলছেন। বার বার বিলাপ করছেন- ‘ও ভাই তুমি কই গেলা, আমার জানাজা করবা না। আরে, আমার ভাইরে আইনা দাও’।
নাতী শোকে আহাজারি করতে করতে ৯০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বলে উঠেন, প্রতিদিন সাড়ে ১০ টায় কারখানা বন্ধ হলে চলে আসে। ভাই গায়ে জার্সি পড়েছিল আজ ভাই খেলা করবে। আমার ভাই কই, ভাইকে আইনা দাও।
এভাবেই কাঁদছেন মমজাজ বেগম। এ সময় তার বুকে নয়নের ছবি, একহাতে জড়িয়ে ধরছেন ভাই হারানো নাতনীদের। সঙ্গে রয়েছে তার মেয়ে নয়নের মা শাহিনুরও।
এই ছয়জন নারী আজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান,, যাদের অপেক্ষায় রয়েছে দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ ভবিষ্যৎ।
এর আগে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুন লাগে চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানসনে। ওই ভবনে থাকা কেমিক্যালের গোডাউন থাকার কারণেই মূলত আশপাশের ভবনগুলোতে আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পযর্ন্ত ৭০ জন অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।