কেএসআরএম'র বিরুদ্ধে রেলের জমি দখল ও পাহাড় কাটার অভিযোগ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়, ছবি: বার্তা২৪

স্কেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়, ছবি: বার্তা২৪

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রেলের জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) লিমিটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে। রেলের নিজস্ব সম্পত্তি ৫৩ ফুট ভেতর পর্যন্ত এ দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তাদের এক জরিপে প্রমাণ মিলেছে।

এ নিয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। চট্টগ্রামে সরকারি দলের এক প্রভাবশালী সাংসদের হস্তক্ষেপের কারণে রেল কর্মকর্তারা পুরো ব্যাপারটি নিয়েই অস্বস্তিতে আছেন। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফারুক আহমদ ফোন কল রিসিভ করেননি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ওই এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদফতর পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছে রড তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম-কে। বনায়ন প্রকল্পে যাওয়ার 'আম্বিয়া ঢালা' রাস্তাটি কয়েক মাস আগে মানুষ চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয় কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/12/1552388789433.jpg

বিজ্ঞাপন

এতে করে দেশের অপর শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের মালিকানাধীন বিলুপ্ত প্রজাতির গাছের বনায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পিএইচপি গ্রুপ ১৫ বছর ধরেই এই বনায়ন প্রকল্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে ৫০ প্রজাতির লক্ষাধিক বিরল বৃক্ষ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কেভেটর দিয়ে পুরো পাহাড় কেটে সাবাড় করছে কেএসআরএম। কোবেলকো স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ভূমি সমতল করে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড় কাটার পাশাপাশি রেলের কাছ থেকে লিজে নেওয়া পিএইচপির জমিতে অবৈধভাবে গত বছর বাঁশের বেড়া দিয়ে দখলের অপচেষ্টা করে কেএসআরএম গ্রুপ।

এ নিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান দুই শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধভাবে নির্মিত বাঁশের সীমানা তুলে নিতে বাধ্য হয় কেএসআরএম গ্রুপ।

এখন কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সীমানা প্রাচীর তৈরি করায় পিএইচপি ফ্যামিলির ভেতরেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা নিজেদের জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। ওই এলাকায় রয়েছে পিএইচপি ফ্যামিলির মালিকানাধীন দেশের প্রথম কাঁচ তৈরির কারখানাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প স্থাপনা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/12/1552388824589.jpg

পিএইচপির মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ) অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা সরকারের নিয়মকানুন মেনেই শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বনায়ন করছি। কেএসআরএম’র এরকম আগ্রাসী মনোভাবের কারণে আমাদের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হবে। এ কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের রাজস্ব আয়। আমরা চাই না অকারণে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হোক। শান্তি বজায় রাখার জন্য আমরা সংযত ও সতর্ক আছি।'

কাঁচ, ঢেউটিন, বিটুমিন, রড, অ্যালুমিনিয়াম, এগ্রো, রাবার, ইনস্যুরেন্স, টেক্সটাইল, পাওয়ার, পেট্রোরিফাইনারি, শিপইয়ার্ড, প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট, কোল্ডস্টোরেজ, অ্যাভিয়েশন, শিক্ষা ও মিডিয়াসহ ২২ ধরনের ব্যবসায় প্রতি বছর আনুমানিক ৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন করেন পিএইচপি ফ্যামিলি।

রড সিমেন্ট সুমদ্রগামী জাহাজসহ বেশ কয়েক ধরনের ব্যবসায় কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে কেএসআরএম গ্রুপের। হঠাৎ করে তাদের এই আগ্রাসী ভূমিকার নিন্দা জানিয়েছেন সচেতন মহল। একই সঙ্গে নেপথ্যে থাকা সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তারা মন্তব্য করেছেন এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।

অবৈধ পাহাড় কাটা ও রেলের জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রসঙ্গে কেএসআরএমের পরিচালক সারোয়ার জাহান বলেন, 'আমি আসলে সরাসরি ইনভলব (যুক্ত) না। শিপিং সাইট দেখি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবো না। অন্য কারো সঙ্গে কথা বলেন।'

এ সময় অন্য কারো নম্বর কিংবা কথা বলতে সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করলে চেষ্টা করবেন বলে এড়িয়ে যান তিনি।