ধূমপান বন্ধে প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা
তামাক সেবনের কারণে তলিয়ে যেতে বসেছে দেশের তরুণ সমাজ। আশঙ্কাজনক হারে এ সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন। অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত হয়ে পড়লেও সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে এ ব্যাপারে তামাক উৎপাদন এবং তামাক আইনের কড়াকড়ির দাবি জানিয়েছে বক্তারা। একই সঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে ধূমপানকারীদের জরিমান বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সচেতনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কনফারেন্স হলে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাল অ্যাকশন (ইফসা) ও ঢাকা আশিয়ান মিশন যৌথভাবে এর আয়োজন করে। এতে ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস সহযোগিতা করে।
বৈঠকে পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক মো. শরীফুর রহমান, হোটেল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাবিবুর রহমান, রেস্টুরেন্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হান্নান বক্তব্য দেন।
বক্তারা হোটেল ও রেস্তোরাঁর সামনে ভ্রাম্যমাণ সিগারেটের দোকান অপসারণ, ট্রেড লাইসেন্সে প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সর্তকর্তা এবং সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধের নিশ্চিয়তা চান। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষরাও সময় চেয়েছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত দেশের পরিণত হতে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রশিক্ষিত, উদ্যমী তরুণ সমাজ বির্নিমাণে কাজ করছে। দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যে সকল কর্মকর্তা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তাদের বিরুদ্ধে সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পূর্বে অধিক পরিমাণে তামাক চাষ হলেও এ সংখ্যা কমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কৃষকদের অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছি। বিভিন্ন হোটেল মালিকদের বলব আপনারা একটি নির্দিষ্ট জোনে ধূমপানের ব্যবস্থা করেন। যাতে করে অন্য কাউকে এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয়।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘পরিবারে পিতা সন্তানের সামনে সিগারেট পান করছেন। ছোট শিশুদের বুকে নিয়ে সিগারেট পানের জন্য অনকে শিশু মারা যায়। অনেককে আইসিউতে ভর্তি হতে হয়। সরকারের গৃহীত বাজেটে ১০ শতাংশ আয়ের উৎস আসে তামাক চাষ থেকে। এ ক্ষেত্রে যদি তামাক চাষ হ্রাস করার সম্ভব না হয় তাহলে জরিমানা করে এটি বন্ধ করা যাবে না।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী সামসুদ্দোহা বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা সিটি করপোরেশন অফিসকে ধূমপান মুক্ত ঘোষণা করেছি। বিভিন্ন হোটেল এবং স্থাপনার সামনে ভ্রাম্যমাণ টঙ দোকানগুলো উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। একই সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীদের অন্য পেশায় চাকরি করার জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের প্রতিটি অফিসে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রকাশ্য ধূমপান না করতে। আর কক্সবাজারের চকরিয়ায় তামাক চাষ হলেও এখন তা উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। কেবল আইন প্রয়োগ করে এটিকে বন্ধ করা সম্ভব নয়, সচেতনতার মাধ্যমে কমিয়ে আনতে হবে। যাতে করে আমাদের আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।’