কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ে বাধা পলিথিন আর ভাঙা নৌযান
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কর্ণফুলীর নাব্যতা ফেরাতে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রায় ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান এই প্রকল্পের বড় বাধা কর্ণফুলীর তলদেশে পলিথিন, পাথর আর ভাঙা নৌযান। এ অবস্থায় ড্রেজিং করতে না পেরে কাজ বন্ধ রেখে চীন থেকে আরো অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিন আনা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, ই-ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চায়না হারবার নামে দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় সদরঘাট থেকে উজানের দিকে বাকলিয়ার হামিদচর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা খনন করে ৪৩ লাখ ঘনমিটার পলি ও মাটি তোলার কথা রয়েছে। এ মাটি দিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে হামিদচর এলাকায় বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গা ভরাট করা হবে। এছাড়া সদরঘাট এলাকায় ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটি নির্মাণের কথা রয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলীতে পাঁচ মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচল করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তারা।
চীন থেকে আনা সাকশন ড্রেজার দিয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে প্রতি ঘণ্টায় খনন করা যাবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘনমিটার মাটি। বর্তমানে খননকাজে নিয়োজিত ছোট তিনটি ড্রেজারের পাশাপাশি নতুন আসা ৩১ ইঞ্চি ব্যাসের ড্রেজারটি শিগগিরই কাজ শুরু করবে। এতে মন্থর হয়ে পড়া ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজে গতি আসবে বলে আশা করছেন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, কর্ণফুলি ড্রেজিংয়ে পলিথিন, পাথর আর ভাঙা নৌযানের অংশ বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা দূর করার জন্য আরো আধুনিক ড্রেজার মেশিন আনা হয়েছে চীন থেকে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চার বছর সময় লাগবে। কর্ণফুলী নদী নিয়েও সরকারের মহাপরিকল্পনা আছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, প্রায় কয়েক সপ্তাহ আগে চীন থেকে সাকশন ড্রেজারটি এসেছে। এটি এখন প্রকল্প এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে রয়েছে। খনন শুরু করার জন্য এর পাইপ সংযোজনের কাজ চলছে। কর্ণফুলীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিনের কারণে বর্তমানে খননকাজে নিয়োজিত ড্রেজারগুলো বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন সাকশন ড্রেজারটি দিয়ে কাজ শুরুর পর সে সমস্যা আর থাকবে না।
ওমর ফারুক জানান, সচরাচর খনন প্রকল্পে যেসব ড্রেজার ব্যবহার করা হয় সেগুলো ২০, ২২ ও ২৬ ইঞ্চি ব্যাসের। এসব ড্রেজার দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা সম্ভব। ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের জন্য আনা সাকশন ড্রেজারটির ব্যাস ৩১ ইঞ্চি। এটি দিয়ে ঘণ্টায় সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ঘনমিটার মাটি তোলা যাবে।
তিনি বলেন, ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্পে কর্ণফুলী থেকে খননকৃত মাটি আশপাশে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। এসব মাটি ফেলতে হবে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। সাধারণ ড্রেজার দিয়ে তা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, খননকাজের জন্য গত বছর নভেম্বরেই চীন থেকে অধিক শক্তিসম্পন্ন এ ‘সাকশন ড্রেজার’ আসার কথা ছিল। সময়মতো তা না আসায় অনেকটা মন্থর হয়ে পড়ে খননকাজের গতি। ফলে এই সময়ের মধ্যে কাজের যতটা অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ শতাংশ অগ্রগতি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ।