বাংলাদেশেও সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছে, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় হামলার যে ঘটনা ঘটলো, তাতে আমরা বাংলাদেশের কয়েকজনকে হারিয়েছি। অনেকগুলো শিশুও মারা যায়। আমাদের জায়ানকে হারাতে হয়েছে এই জঙ্গি সন্ত্রাসের কারণে। বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটানোর যথেষ্ট চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা সংস্থা যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো- এই ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত থাকবে? কে কোথায় এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত, সেটা শুধু গোয়েন্দা সংস্থার কাছেই জানাতে হবে। দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। কেননা আমরা দেশে শান্তি চাই। শান্তি দিতে পারে উন্নতি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এখানে দেখেছি অগ্নিসংযোগ, জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা। এই বিএনপি জামায়াত তারা আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, বাস কিনেছি বিআরটিসির সেগুলা পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস ট্রেন লঞ্চ এমন কিছু নেই যেটা অগ্নিসন্ত্রাসের কবলে পড়ে নি। আর সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবন। ছোট শিশু নারী পুরুষ, বাবা দেখেছে চোখের সামনে শিশু পুড়ে যাচ্ছে, স্বামী দেখেছে চোখের সামনে স্ত্রী পুড়ে যাচ্ছে, স্ত্রী দেখেছে চোখের সামনে স্বামী পুড়ে যাচ্ছে এইরকম ভয়াবহ চিত্র আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। কিন্তু আমরা চাই না এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটুক। তাই আমি দেশবাসী সকলকে আহ্বান জানাই আগুন সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে হবে।
শ্রীলঙ্কায় হামলায় নাতি জায়ান চৌধুরীকে হারানোর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আট বছরের একটা ছেলে জায়ান চৌধুরী। তাকে আমি হারিয়েছি। আমাদের পরিবারে ১৫ আগস্ট ঘটনায় আমি আর রেহেনা বাইরে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি, আমাদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই, সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন মেজ ফুফুর বাড়িতে যখন আক্রমণ করে তখন তার ছেলে, ছেলের বউকে হত্যা করে। শেখ ফজলুল হক মণি ও আরজু মণি। আর জায়ান হচ্ছে শেখ ফজলুল হক মণির ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের প্রথম সন্তান। তাকেও এভাবে আজকে জীবন দিতে হতে হলো। কোনো শিশুর এ ধরনের মৃত্যু আমরা চাই না।
এসময়, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমি জানি না এ ধরনের যারা হত্যাকাণ্ড চালায় তারা কী পায়? কি লাভ তাদের হয়? মানুষের ঘৃণা ছাড়া, অভিশাপ ছাড়া আর কিছু তারা পায় না। আর ইসলাম ধর্মের নাম নিয়ে যারা সন্ত্রাস করে, জঙ্গিবাদ চালায় তারা আমাদের পবিত্র ধর্মটাকে কলুষিত করছে, পবিত্র ধর্মটার বদনাম করছে বিশ্বব্যাপী। তারা ইসলামের কোনো ভালো কাজ করছে না। ইসলাম ধর্মকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করে ধর্মের ক্ষতি করে দিচ্ছে। যে ধর্ম সবথেকে বড় মানবতার ধর্ম, যে ধর্ম সবথেকে বড় শান্তির ধর্ম সে ধর্মের নামে তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে। কাজেই এই ধরনের কাজে যারা সম্পৃক্ত তাদের বিরত থাকতে হবে।
এজন্য সকল অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, বাংলাদেশের জনগণ এবং মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিন যারা আছেন বা ধর্মীয় শিক্ষাগুরু, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী যারা প্রত্যেককে আমরা বলব যার যার আওতায় যে ধরনের শিশু কিশোর, যুবক, ছাত্র যারা আছে বা সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধরনের একটা প্রবণতা দেখা দেয় সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে সবাইকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আর আগামী শুক্রবারের দিন আমি চাই প্রত্যেক মসজিদে আমাদের জায়ান চৌধুরী মারা গেল, কয়েকদিন আগে নিউজজিল্যান্ডে মসজিদে হামলায় অনেকে মারা গেল, সেখানে আমাদের বাংলাদেশিরাও ছিল, এরপর শ্রীলঙ্কার হামলা, আমি চাই সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক মসজিদে শুক্রবার যেন তাদের নামে দোয়া কামনা করা হয়। সেই সঙ্গে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের সঙ্গে ধর্ম ও মানবতার জন্য ক্ষতিকারক সে বিষয়টা তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজীবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন।