বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যয়বহুল: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। আলাপ-আলোচনা কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে আপসযোগ্য মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা গেলে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় ছাড়াই মানুষ যথাযথ প্রতিকার পাবে। আমরা ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনসমূহ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।'
রোববার (২৮ এপ্রিল) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিগত ১০ বছরে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। একই সময়ে এই কার্যক্রমের আওতায় মোট এক হাজার ৬৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে আদালতগুলোতে অসংখ্য মামলা দায়ের হওয়ায় এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে আপসযোগ্য মামলাগুলোও মধ্যস্থতার অভাবে দীর্ঘসময় পর নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে মামলাগুলোর নিষ্পত্তিকে উৎসাহিত করছে।'
জাতীয় আইনগত সহায়তা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, '২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১। আমরা সরকার গঠন করার পরপরই যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নেই তথা সার্বিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেই, পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়, বিশেষ করে যারা অসহায় দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত বিচারপ্রার্থী সেই জনগণের ন্যায় বিচার পাওয়ার পথ সুগম করার লক্ষ্যে আমরা আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০ প্রণয়ন করি। এরপর দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে যেটা হয়, ২০০১-এ সরকার পরিবর্তন হয়। আমাদের সমস্ত উদ্যোগটাই মুখ থুবড়ে পড়ে।'
তিনি বলেন, '২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ এ আমরা সরকার গঠন করি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে আবার উদ্যোগ নেই। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অফিস স্থাপনাসমূহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া, সকল জেলা উপজেলা পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক অঞ্চলে চৌকি আদালত ও শ্রম আদালতে আইনগত সহায়তা দিতে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টেও অসহায় দুস্থ বিচারপ্রার্থীগণ যাতে সরকারি আইনগত সুবিধা পান তার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সেই সেবা তারা পাচ্ছেন।'
সরকারপ্রধান জানান, লিগ্যাল এইড অফিস মাত্র চারবছরে প্রি কেস ও পোস্ট কেস মিলিয়ে ১৭হাজার ৯২৯টি এডিআর বা আপস মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে ১৬ হাজার ৫১৩ জন বিচারপ্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে আপস মীমাংসার সুফল ভোগ করেছেন। লিগ্যাল এইড অফিসারের মধ্যস্থতায় আপস মীমাংসার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে মোট ১৮ কোটি ৪৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৩২৬ টাকা আদায় করে দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'গ্রামের অসহায় অনেক মানুষই গ্রাম্য সালিশ কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সালিশকারী কিংবা মীমাংসাকারীদের অনেকেরই আইনকানুন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় প্রায়শই আমরা দেখি, নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে এ সেবা বাস্তবায়নের উদ্দেশে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এবং আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যেন তার অধিকার সম্পর্কে জানতে পারে সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। এর ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণ মামলার জটের কবল থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে।'
এসিড দগ্ধ নারী পুরুষ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী ও শিশু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী সহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন বা নানাবিধ সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম যেকোনো নাগরিকের সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’টি পালন করে আসছে সরকার। অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সকলের জন্য ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করাই এর লক্ষ্য।