চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন
নির্ঘুম রাত শেষে মিলছে প্রত্যাশিত টিকিট
আসমা আক্তার, পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। কর্মসূত্রে চট্টগ্রামের টেক্সাইল এলাকায় থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার (২১ মে) ইফতারের পরে তিনি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের আসেন অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের জন্য। কাউন্টারেই রাতের সাহরি করেন। রাত পেরিয়ে সকালে পান প্রত্যাশিত টিকিট। সারারাত নির্ঘুম কাটলেও টিকিট হাতে পেয়ে এক নিমিষেই ভুলে যান সব ক্লান্তি।
টিকিট হাতে পেয়ে চোখে-মুখে যেন আনন্দের ঝিলিক। আসমা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য গতকাল থেকে অপেক্ষা করে ছিলাম। এখন টিকিটি পেয়ে এতটা ভালো লাগছে বলার বাহিরে। পরিবারের সাথে ঈদ করতো পারব ভেবেই সব ক্লান্তি ভুলে গেছি।’
কথা বলতে বলতেই আসমা আক্তারের মুঠোফোনে কল আসে ময়মনসিংহ থেকে মেয়ে নওরিনের। মুঠোফোনের ওপাশ থেকে মেয়ের জিজ্ঞাসা, টিকিট পেয়েছেন কিনা। মাও জানালেন তৃপ্তির সুরে।
আসমা আক্তারের মতো এমন অসংখ্য মানুষ অগ্রিম টিকিটের নামে সোনার হরিণের আশায় ভোররাত থেকে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রেনের কাউন্টারে। পরিবার আর আত্মীয়স্বজনের সাথে ঈদ করতে তাদের এই দীর্ঘ অপেক্ষা। আর যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২২ মে) রেলস্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের জন্য কাউন্টারে অপেক্ষায় রয়েছেন টিকিট প্রত্যার্শীরা। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা পত্রিকা বিছিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। যখন টিকিট হাতে পাচ্ছেন খুশি মনে ফিরে যাচ্ছেন, কেউবা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে আনন্দ ব্যক্ত করছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ছয় হাজার সরাসরি কাউন্টার ও বাকি ছয় হাজার রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাপ থেকে সংগ্রহের সুবিধা থাকছে। প্রথমদিন ৩১ মে, দ্বিতীয় দিন ১ জুন, তৃতীয়দিন ২ জুন, চতুর্থ দিন ৩ জুনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
অপরদিকে ফেরত যাত্রীদের ২৯ মে ৭ জুন, ৩০ ও ৩১ মে যথাক্রমে ১ ও ২ জুনের টিকিট দেওয়া হবে। এছাড়া ১ ও ২ জুন ৮, ৯, ১০ ও ১১ জুনের ফিরতি টিকিট দেওয়া হবে। অগ্রিম ট্রেনগুলো প্রতিদিন সকাল ৭টায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সাড়ে ১২টায় মহানগর এক্সপ্রেস, দুপুর ৩টায় গোধূলী, বিকাল ৫টায় সোনার বাংলা চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে।
টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে কাউন্টার পরিদর্শনে আসেন রেলওয়ের পর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক হোসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, যাত্রীদের সুবিধার্থে কাউন্টার ছাড়াও রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাপে টিকিট সংগ্রহের সুবিধা থাকছে। চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য চাঁদপুর-১ ও চাঁদপুর-২ দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি টিকিট কালোবাজারী রোধ করার জন্য রেলওয়ের পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার (সিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেন নির্বিঘ্নে ছেড়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়া যাত্রাপথে প্রতিটি ট্রেন যেখানে অবস্থান করবে সেখানে আয়ত্তাধীন থানা বা ফাঁড়ির সদস্যরা সর্তক অবস্থানে থেকে সবকিছু মনিটরিং করবে।’