সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহে কচ্ছপ গতি



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পুরনো ছবি

পুরনো ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

কচ্ছপ গতিতে চলছে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ। যে কারণে মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার দ্রুত ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করলে বাজারে দুই ধরনের প্রভাব পড়তো। চাষিরা লাভবান হতেন এবং মিল মালিকরা বাজার থেকে ধান সংগ্রহ করতেন। ফলে প্রতিযোগিতা তৈরি হতো এবং প্রান্তিক চাষিরা ধানের দাম পেতেন।

অভিযোগ আছে, ধান-কাটা ও মাড়াই শেষ হতে চললেও অনেক উপজেলায় ধান সংগ্রহ শুরুই হয়নি। অথচ গত ২৫ এপ্রিলথেকে ধান-চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয় সরকার। ঘোষণার এক মাসে (২২ মে পর্যন্ত) মাত্র ২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহকর হয়েছে।

সরকার দ্রুততার সঙ্গে ধান-চাল ক্রয় শুরু করলে দু’ধরনের প্রভাব পড়তো বাজারে। একদিকে কিছু চাষি সরাসরি সরকারকে দিয়ে লাভবান হতে পারতো। অন্যদিকে মিল মালিকরা বাজারে নামতে বাধ্য হলে বাজারে প্রতিযোগিতার তৈরি হতো। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের সুযোগ কমে যেত। প্রান্তিক চাষিরা অনেকটা লাভবান হতো।

কিন্তু ধান-কাটা মাড়াই শেষ হতে চললেও অনেক উপজেলায় ধান সংগ্রহের কাজ শুরুই করতে পারেনি সরকার। অথচ সরকারিভাবে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করার ঘোষণা ছিল। ঘোষণা অনুযায়ী ১ মাস কাল অতিবাহিত হলেও (২২ মে পর্যন্ত) মাত্র ২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

খাদ্য অধিদফতরের (এমআইএসএন্ডএম বিভাগ) অতিরিক্ত পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, মৌসুমে সারা দেশের প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে (সর্বোচ্চ ৩ টন) দেড় লাখ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২২ মে পর্যন্ত ২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন সংগ্রহ করা হয়েছে। আর সাড়ে ১১ লাখ টন চালের বিপরীতে সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন।

ধান সংগ্রহের ধীরগতি প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে প্রকৃত চাষিদের তালিকা পেতে বিলম্ব হওয়ায় ধান সংগ্রহে বিলম্ব হয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে ধান-চাল সংগ্রহ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২০টি মনিটরিং টিম মাঠে নামানো হয়েছে। কোথাও কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইচ্ছা করে ধান-চাল ক্রয়ে বিলম্ব করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

খাদ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (সংগ্রহ) সাইফুল কবীর খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দের কোনো সংকট নেই। পুরোদমে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষি বিভাগ ইচ্ছা করেই কৃষদের তালিকা দিতে বিলম্ব করেছে। তাদের কাছেতো এটা রেডি থাকার কথা। তাদের ওয়েব সাইটেও এটা থাকা উচিত। কারণ আমরা ১০ টাকায় কৃষকদের অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছি। সেই তালিকাটা হালনাগাদ করলেই তো হয়। এখানে নিয়ম হচ্ছে তারা স্লিপ দেবে, সেভাবে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।’

ধানের দাম না পওয়ার প্রতিবাদে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজন কৃষক ধানক্ষেতে আগুন দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি।

বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করলে সাধারণত বাজার উর্ধমুখী হয়। কিন্তু এবার সেটা না হওয়ায় ফড়িয়ারা সুযোগ নিচ্ছে। সরকার ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করে।

চলনবিল এলাকায় আমিনুল ইসলাম নামের একজন চাষি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাওর ও চলনবিল অঞ্চলে এপ্রিলের শুরুতে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়। বন্যার সম্ভাবনা থাকায় ১০-১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শেষ হলেও কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারছেন না।’

বোরো ধান সংরক্ষণ করা খুবই কঠিন। আবার প্রান্তিক চাষিদের অর্থের প্রয়োজন। তাদেরকে ধান বিক্রি করেই মজুরি মেটাতে হয়। সে কারণে ধান ধরে রাখার সময় এবং সুযোগ অনেক প্রান্তিক কৃষকের থাকে না। তারা বাধ্য হন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে। তাই অনেকেই মনে করেন বোরো ধান এপ্রিলের শুরু থেকে সংগ্রহ শুরু করা জরুরি।

আবার মিল মালিকদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করার অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ। অনেক গোডাউনে ধানের পরিবর্তে চাল নেওয়া হচ্ছে। এতে হতাশ হচ্ছে চাষিরা।

এদিকে, লোকাল সাপ্লাই ডিপোর (এলএসডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষকদের  অভিযোগ, ডিপোতে ধান নিয়ে গেলেও বলা হয় আদ্রতা ঠিক নেই, গোড়াউনে জায়গা নেই। আবার অনেক সময় মিলারদের সঙ্গে যোগসাজসে টিআর কাবিখারচালানে কাগজ ট্রানজেকশন দেখানো হয়। অর্থাৎ মিলাররা প্রকল্প চেয়ারম্যানের কাগজ কিনে নেন কমদামে।এরপর সেই চালপ্রথমে বের করা দেখানো হয়, আবার পরক্ষণেই গুদামে লোড দেখানো হয়। প্রকৃত অর্থে চাল লোড-আনলোড করা হয় না।শুধু কাগজে কলমে বিতরণ ও ক্রয় দেখানো হয়। ফলে বাজারে প্রভাব কম পড়ে। কঠোর মনিটরিং ছাড়া এটা রোধ করা কঠিন।

চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার ৪৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এতে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকারিভাবে খাদ্য মজুদের সক্ষমতা রয়েছে মাত্র সাড়ে ২১ লাখ টন। বর্তমানে ১১ লাখ ৩১ হাজার টন চাল, ২ হাজার ৫৪৩ টন চাল ও ২ লাখ ৯৭ টন গম সরকারি গুদামগুলোতে মজুদ রয়েছে বলে খাদ্য অধিদফতর জানিয়েছে।

   

ব্ল্যাকে টিকেট কিনে বিপাকে ১৩ যাত্রী, কালোবাজারির নাম 'জসিম'



মাসুম বিল্লাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বুড়িমারী (লালমনিরহাট) থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন বুড়িমারী এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে দ্বিগুন দামে ঢাকার টিকিট কিনেও যাত্রীদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। হাতে টিকেট থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষের কাছে সাভ্যস্ত হতে হয়েছে বিনা টিকেটের অবৈধ যাত্রী হিসেবে। শুধু কি তাই? সিনেমার মতো যেন অভিনয় দেখতে থাকেন ট্রেনের অন্য যাত্রীরা। আর দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা পালন করে ক্যামেরাম্যান এবং সাংবাদিকের ভূমিকা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে এমনই হতাশাজনক এক ঘটনা ঘটেছে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেসে'। যাত্রীরা দ্বিগুন মূল্য দিয়ে টিকিট কিনেও পড়তে হয়েছে তোপের মুখে। এদিন ট্রেন সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নের কোনও সদত্তোর দিতে পারেনি পাঁচ টিকিটে থাকা ‘ঞ’ বগীর ১৩ যাত্রী। তাদের মধ্যে দুই সন্তানসহ যেন দুমরে-মুচরে গেছেন এক নারীও। কারণ তাদের টিকিটগুলো ছিল ব্ল্যাকে ক্রয় করা।

কিভাবে পেয়েছেন এসব টিকিট?  এমন প্রশ্নের উত্তরে যাত্রীদের মুখে ছিল একটিই নাম 'জসিম'। প্রশ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রেতা কে এই জসিম?

এদিন বুড়িমারী এক্সপ্রেসে নাটোর যাচ্ছিলেন বার্তা২৪.কমের গাইবান্ধার এই প্রতিবেদক। তিনি গাইবান্ধা রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। এদিন বুড়িমারী এক্সপ্রেস রাত ১০ টা ৫৬ মিনিটে গাইবান্ধা রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে বোনারপাড়া স্টেশনে প্রবেশ করে রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে। সেখান থেকে ‘ঞ’ বগিতে বেশ কিছু যাত্রী ওঠেন। ট্রেনে উঠেই এক নারী যাত্রীসহ চারজন যাত্রীর মধ্যে আসনে বসা নিয়ে বিবাদ বাধে। কারণ তাদের হাতে থাকা টিকিটের প্রত্যেকটি টিকিটই ছিল একই আসন নম্বর। মূলত কোনটা কার আসন সেটিই নিয়েই বিবাদের শুরু হয়। পরে উপস্থিত যাত্রীদের সহায়তায় বিষয়টির সমাধান হয় এবং ঞ- ৫, ৬, ৭ ও ১১ নম্বর আসনে বসেন বিবাদে ওই নারীসহ জড়ানো যাত্রীরা।

বিবাদ হওয়া চার যাত্রীর কাছে থাকা টিকিটে দেখা যায়, টিকিট দুটি ১৩ এপ্রিল একই তারিখে ক্রয় করা। যার একটিতে ঞ-৫,৬,৭, ও ১১ এই চারটি আসন এবং নারীর হাতের অপর টিকিটেও রয়েছে ঞ-৫ ও ৭ ও ১১ আসন নম্বর। ওই টিকিটে যাত্রীরা বোনারপাড়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাত্রা করবেন।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়; 

এদিন রাত ১ টার দিকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস যখন সান্তাহার-নাটোর স্টেশনের মাঝামাঝিতে তখন ট্রেনের এই ‘ঞ’ বগিতে আসেন টিকিট কালেক্টর 'টিটিই' গোলাম হাফিজ রিজু। এসময় টিকিট চেক করার এক পর্যায়ে বিতর্কিত এই দুটি টিকিটসহ একই ধরণের আর পাঁচটি টিকিট দেখতে পান তিনি। যা দেখে ওই সব টিকিটের যাত্রীদের সাথে চটে যান টিকিট কালেক্টর। রাগান্বিত হয়ে কোথায় আর কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে এসব টিকিট এমন প্রশ্নে দুই সন্তানসহ ঢাকাগামী এক নারী ছাড়া যাত্রী ১১ যাত্রীই বলেন একটিই নাম জসিম। তারা বোনারপাড়ার জসিমের থেকে দ্বিগুন দামে ক্রয় করেছেন এসব টিকিট। এসময় টিটিই'র সাথে থাকা পুলিশ সদস্য তাদের ছবি ও কথা ভিডিও রেকর্ড করতে থাকেন। এদিন শত আপত্তি সত্ত্বেও ওই নারীরও ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করেন দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এ সময় ওই নারী চরম বিব্রতবোধ করে কাপড়ে ভিতরে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন।

এদিনের ব্ল্যাকে ক্রয় করা টিকিটগুলো বিশ্লেষন করে দেখা যায়, একই তারিখে ক্রয় করা ওই সব টিকিটে আসন সংখ্যা ছিল ১৩ টি। যার দুটি টিকেট ৮ যাত্রী, একটিতে ২ যাত্রী এবং অপর দুটি টিকিটে আসন সংখ্যা ৭ টি দেওয়া থাকলেও যাত্রী ৩ জন। টিকিট ক্রয়ে যে এনআইডি, মোবাইল নম্বর, এবং যাদের নামে ক্রয় করা হয়েছে তাদেরকে যাত্রীদের কেউই চেনেন না। শুধু তাই নয়, তাদের মধ্যে পাঁচ যাত্রীর কেউ কাউকেই চেনেন না!

১৩ যাত্রীর হাতে থাকা পাঁচ টিকিটের একটিতে দেখা যায়, ১৩ এপ্রিল তারিখে ক্রয় করা। ক্রয়কারীর নাম মো.আব্দুর রাজ্জাক বেরারি। টিকিটে এনআইডি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ৮৬৭...৬৮৪ এবং মোবাইল নম্বর ০১৩০......৬৩৩ ।

এছাড়া আরেকটি টিকিটে দেখা যায় টিকিট ক্রয় কারীর নাম হাওয়া আকতার হাসি। যেখানে এনআইডি নম্বর ৩৩১...৩৭৯, আর মোবাই নম্বর ব্যবহার হয়েছে ০১৭০...৫৮১। 

ওইসব টিকিটে যাত্রীদের মধ্যে একজন শাহিন (৫৫)। তার বাড়ি বোনারপাড়ায়। তিনি ফার্নিচারের ব্যবসা করেন, জরুরী কাজে ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি। তার কাছে থাকা টিকিটের আসন নম্বর ঞ-৫, ৬, ৭ ও ১১। টিকিট দেওয়ার সময় তাকে বলা হয়েছে তার আসন নম্বর ঞ-৭। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে অপর তিনটি আসন কার? এছাড়া তার এই টিকিটে ক্রয়কারীর নাম দেখাচ্ছে আব্দুর রাজ্জাক বেরারি।

এ সময় জানতে চাইলে যাত্রী শাহিন বলেন, ‘কয়েকদিন চেষ্টা করেও টিকিট পাইনি। পরে জসিমের থেকে বাধ্য হয়ে দ্বিগুন দামে টিকিট কিনেছি। কিছু করার নাই সবখানেই একই অবস্থা। যেতে হবে তো!’

আপনার হাতের টিকিটে আব্দুর রাজ্জাক কে? এনআইডি আর এই মোবাইল নম্বরইবা কার? এমন প্রশ্নের যাত্রীর সরল উত্তর, মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি আর আব্দুর রাজ্জাক কে আমি জানিনা।

এছাড়া যাত্রীদের মধ্যে ওই নারীর বাড়ি সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার শিমুলতাইর গ্রামে। মেয়ে মাহমুদা (১১) ও ছেলে মামুন (৬) কে সাথে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন তিনি। তার হাতের টিকিটে আসন নম্বর ছিল ঞ-৫, ৭, ও ১১ নম্বর। ওই নারীর দাবি তাকে বলা হয়েছে তার আসন নম্বর ৫ ও ৭। তাহলে কোচের ১১ নম্বর আসনের যাত্রী কে?

এ সময় জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ঢাকা যাওয়ার জন্য আমার স্বামী দুটি টিকিট ১৭০০ টাকা দিয়ে কিনেছে। স্টেশন থেকে নয়। তবে, কার থেকে কিনেছে তা জানা নেই ওই নারীর। তিনি বলেন, টিকিট থাকার পরেও এমন ঘটনা খুব কষ্টের। এসময় পুলিশের নেওয়া ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিবে কি না-এমন প্রশ্ন করে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন তিনি।

ব্লাকে টিকিট ক্রয় করা আরেক যাত্রীর নাম শাকিল (২৩) । তবে, শাকিলের কাছে একটি নয় রয়েছে দুটি টিকিট। ওই দুই টিকিটের ৮টি আসনে ঢাকা যাচ্ছেন তারা আট যুবক।

শাকিলের হাতে থাকা দুটি টিকিটই কাউন্টার থেকে প্রিন্ট করা। যার মধ্যে ১, ৪,২৮ ও ৩০ নম্বরের ৪ টি আসনের একটি টিকিটে যাত্রীর নাম দেখাচ্ছে হাওয়া বেগম।  

হাওয়া বেগম কে? শাকিলের কাছে টিটিই'র এমন প্রশ্নে শাকিল বলেন, চিনিনা। তাহলে তার নামের টিকিটটি তোমার হাতে এলো কিভাবে? শাকিল বলেন, বোনারপাড়ার জসিম ভাইয়ের থেকে প্রতিটি টিকিট ৮০০ টাকা করে কিনেছি। এসময় জসিমের নাম শুনে ক্ষিপ্ত হন টিটিই। এসময় টিটিই সহ ট্রেন সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি এসব কালোবাজারিতে টিকিট ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে বোনারপাড়া স্টেশনের বর্তমান স্টেশন মাস্টার খলিলও জড়িত আছে বলে অভিযোগ তোলেন।

এ সময় জানতে চাইলে টিকিট কালেক্টর গোলাম হাফিজ রিজু বার্ত২৪.কমকে বলেন, এই ঞ বগীর পাঁচটি টিকিটে থাকা ১৩ যাত্রীর প্রত্যেকেই ব্ল্যাকে টিকিট কিনেছেন। বিধি মোতাবেক তারা প্রত্যকেই অবৈধ যাত্রী। কেননা, তাদের কাছে থাকা টিকিট ক্রয়ে যে এনআইডি ব্যবহার করা হয়েছে সেই নামের বা সেই এনআইডিধারীর সাথে যাত্রীদের কোন মিল নেই । তাদের সবগুলো টিকিট ব্ল্যাকে পাওয়া। নিয়ম অনুযায়ী এসব যাত্রীদের এখন জরিমানাসহ টিকিট ক্রয় করতে হবে। যদিও তিনি তা করেন নি।

কে এই জসিম?

সেদিনের একটি বগীর ১৩ যাত্রীর কাছে ব্ল্যাকে টিকেট বিক্রেতা কে এই জসিম? তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেছে দৈনিক বাংলার গাইবান্ধার এই প্রতিবেদক। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে,

সাঘাটা উপজেলার রাঘবপুর গ্রামের বীর মুক্তযোদ্ধা মৃত হায়দার আলীর ছেলে 'জসিম'। তিনি এক সময় বোনারপাড়া স্টেশনে ব্যবসা করতেন। জসিম ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর টিকিট কালোবাজারে বিক্রির সময় বোনারপাড়া থেকে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশ। সে সময় তার (জসিম) কাছ থেকে ট্রেনের চারটি টিকিট উদ্ধার করা হয়। পরে একই তারিখে রেলওয়ে পুলিশ বাদি হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে তাকে কারাগার পাঠানো হয়। যার মামলা নম্বর-২। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জসিম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, "এখন টিকিট সব অনলাইনে, আর টিকিটে আমার নাম বা আমার নম্বর (এনআইডি-মোবাইল) নাই। বোনারপাড়াতে মানুষকে ভালবেসে কিছু করতে যায়া (গিয়ে) আমার নামে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। তারপর থেকে আমি অনেকটাই দূরে।

এ সময় তিনি বলেন, বোনারপাড়া স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে সবাই এই ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত তারাই এসব টিকিট বিক্রি করে যদি কোনো সমেস্যা হয়, তারা আমার (জসিম) নামটা তাদেরকে বলতে বলে দেয়।

এ সময় তিনি আরো বলেন, ট্রেনে সেদিনের ঘটনা আমি শুনেছি, যাত্রীরা নাকি আমার নাম বলেছে। আপনিও নাকি সেদিন ট্রেনে ছিলেন আমি জানি।

বোনারপাড়া রেলওয়ে ষ্টেশনের ষ্টেশন মাস্টার খলিল মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, টিকিট কালোবাজরীর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জিআরপি এবং আরএমপি পুলিশের। তারা কী করে? টিকিট এখন শতভাগ অনলাইনে। যদি কেউ আমার কথা বলে থাকে তা মিথ্যা বলেছে। আমি জসিমকে সেরকমভাবে চিনিওনা। 

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন,' অভিযুক্ত জসিমকে ২০১৯ সালে কালোবাজারে টিকিট বিক্রিকালে হাতেনাতে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় রেলওয়ে পুলিশ। এই অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (লালমনিরহাট) আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে শতভাগ টিকিট এখন অনলাইনে।

তিনি বলেন, অনেক সময় সিন্টিকেটেরা এক সিটের টিকিট একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ট্রেনে থাকা সংশ্লিষ্টরা যাদের টিকিটের সাথে নাম বা এনআইডির মিল পায় তাদেরকে ওই সীটে বসিয়ে দেয় এবং অন্যজনকে জরিমানাসহ নতুন টিকিট করে দেওয়া হয়।

তবে, ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইন করা সত্ত্বেও এখনো শতভাগ কালোবাজারী নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, একজন কৃষক যখন কোনো দোকানে টিকিট নিতে যান, আর সেই দোকানদার যদি সিন্ডিকেট হয় তাহলে তার আইডি দিয়েই ওরা চারটি টিকিট ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে থাকে।

এ সময় ষ্টেশনের আশেপাশে টিকিট কালোবাজারী থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ষ্টেশনের আশেপাশে চিপায়-চাপায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারীর একটি সিন্ডিকেট আছে। যারা টিকিট কেনে তারাও বিষয়টি জানেন। বিষয়টি একটি ফৌজদারী অপরাধ।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহাত আহমেদ মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিষয়টি জানলাম; অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশ কালোবাজারী নির্মূলে শতভাগ চেষ্টা করছে, তৎপর রয়েছে। টিকিট সিন্ডিকেট ধরতে রেলওয়ে পুলিশের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।’

 

;

রামপালে ট্রাক-ভ্যানের সংঘর্ষ, নিহত ৩



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট
রামপালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

রামপালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

  • Font increase
  • Font Decrease

বাগেরহাটের রামপালে ট্রাক ও যাত্রীবাহী ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ভ্যানচালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

শনিবার ( ২৭ এপ্রিল) সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের চেয়ারম্যানের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মো. সাইদ মোড়ল (৪৫), মো. আজাদ (৩৫) ও ভ্যানচালক মো. মনি (৪৫)। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামপাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৌমেন দাস।

তিনি বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ফলে ভ্যানের যাত্রী মো. সাইদ মোড়ল (৪৫), পিতা-মোঃ রেজ্জাক মোড়ল, সাং-ঝনঝনিয়া, থানা- রামপাল, জেলা-বাগেরহাট ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং অপর যাত্রী মো. আজাদ (৩৫), পিতা-ইকলাচ মোড়ল, সাং-ঝনঝনিয়া ও ভ্যান চালক মো. মনি (৪৫), পিতা-মকবুল হোসেন, সাং-কুমলাই গাববুনিয়া, উভয় থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট গুরুত্বর আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধারপূর্বক দ্রুত রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

রামপাল ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ মো. মশিউর রহমান জানান, সংবাদ পেয়ে রামপাল থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। ঘাতক চালককে আটক করে পুলিশ হেফাজটে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ট্রাকটি রামপাল থানা পুলিশ জব্দ করেছে। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। মরদেহ ময়না তদন্তের পর দাফন করা হবে ।

;

মুজিবনগরে দুই চেয়ারম‌্যান প্রার্থীর সমর্থক‌দের সংঘ‌র্ষ, আহত ১৩



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
মুজিবনগররে দুই চেয়ারম‌্যান প্রার্থীর সমর্থক‌দের সংঘ‌র্ষ, আহত ১৩

মুজিবনগররে দুই চেয়ারম‌্যান প্রার্থীর সমর্থক‌দের সংঘ‌র্ষ, আহত ১৩

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুরের মুজিবনগরে দুই চেয়ারম‌্যান প্রার্থীর সমর্থক‌দের সংঘ‌র্ষে ১৩ জন আহত হ‌য়ে‌ছেন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টার দিকে মু‌জিবনগর উপ‌জেলার মহাজনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- রফিকুল ইসলাম তোতার কাপ পিরিচ সমর্থক ইসলাম শেখ (৬০), রমজান (২৬), শাজাহান ( ২৫), আব্দুর ছাত্তার (৫৫), আনারুল (৫০), পিতা লোকমান শেখ । এদের সবার বা‌ড়ি মহাজনপুর গ্রামে।

অপর দিকে আমাম হোসেন মিলুর আনারস প্রতীকের আহতরা হলেন- সোহরাব হোসেন কালু (৪৮), সাইদ (২২) , সাহাবুদ্দীন (৫২), রাসেল (২২) , হাবিবুর (২২), উজ্জল (৩৩), মেহেরাব (২২), রমজান (১১)। এদেরও বা‌ড়ি মজাজনপুর গ্রা‌মে।

আহতদের সবাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশে নিয়ে যায়। আহত ইসলাম হোসেনের মাথায় বাঁশের আঘাত গুরুতর হওয়ায় মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসা উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে‌ছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ত‌বে এলাকায় পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুজিবনগরের মহাজনপুর বাজারে মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী উপ‌জেলা আওয়ামী লী‌গের সভাপ‌তি রফিকুল ইসলাম তোতা ও সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলুর সমর্থক‌দের ম‌ধ্যে উত্তেজনা ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। দুই প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস পাশাপাশি হওয়ায় প্রচারণাকে কেন্দ্র করে এ উত্তেজনা শুরু হয়।

এক পর্যা‌য়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় এবং আমাম হোসেন মিলু গ্রুপের লোকজন রফিকুল ইসলাম তোতার কাপ পিরিচের অফিসের চেয়ার ভাঙচুর করে। এতে উভয় প‌ক্ষের ম‌ধ্যে সংঘ‌র্ষে আহত হয় ১৩ জন। খবর পে‌য়ে মুজিবনগর থানা ও কোমরপুর পুলিশ ক্যাম্পে মি‌লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে মু‌জিবনগর থানা।

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার দত্ত জানান, প‌রি‌স্থি‌তি নিয়‌ন্ত্রেণে যা যা করণীয় তাই করা হ‌চ্ছে।

;

বৃষ্টির আশায় পল্লবিতে ইসতিসকারের নামাজ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টি প্রার্থনা করে রাজধানীর মিরপুর পল্লবিতে ইসতিসকারের নামাজ আদায় হয়েছে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় পল্লবি ১২ সেকশনের ডি ব্লক ঈদগাহ মাঠে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

মাদ্রাসা দারুর রাসাদ এর উদ্যোগে এ নামাজে ইমাম ছিলেন বাইতুল আজমত জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল হালিম।

এর আগে ভোর থেকে ওই মাঠে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। প্রায় দুই হাজার মানুষ অংশ নেয় এ ইসতিসকারের নামাজে।

;