ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায় রাজনৈতিক সংযোগ!
দেশে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতার হওয়া মাদক কারবারিদের মধ্যে অনেকেরই উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিচিতি শনাক্ত করা গিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই আবার রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের মূল ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মী। ক্ষেত্র বিশেষে স্থানীয় নেতাদের আত্মীয়স্বজন, ভাই, পুত্র ও সমর্থকরা মাদক ব্যবসা ও লেনদেনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক হয়েছে।
মাদকের সমস্যাটি দেশের যেসব এলাকায় প্রকট, সেখানকার বাস্তব চিত্র দেখে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র মনে করছেন যে, রাজনৈতিক সুবিধা ও ক্ষমতাকে অবৈধ মাদক ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। বিশেষত সীমান্তবর্তী এলাকায় মারাত্মক মাদক ইয়াবার চালান আনা-নেওয়া ও ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহল।
টেকনাফ, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর ইত্যাদি সীমান্ত এলাকায় অনেক ক্ষমতাসীন নেতাই 'মাদক সম্রাট' -এ পরিণত হয়েছেন। এসব এলাকায় বিভিন্ন বয়সী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাদকের ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা 'ওপেন সিক্রেট'। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রায়ই হুঁশিয়ারি ও সাড়াশি অভিযান পরিচলিত হলেও এসব এলাকায় 'ভয়ঙ্কর শক্তিশালী মাদকচক্র সিন্ডিকেট' নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানায়, 'মাদক ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্টতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু সীমান্ত এলাকা নয়, সীমান্ত থেকে বহুদূরের জেলা ও জনপদেও রাজনৈতিক পরিচিতি সম্পন্নরা ব্যাপকভাবে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।'
সূত্র জানায়, দেশের পূর্ব-মধ্যাঞ্চলীয় জেলা কিশোরগঞ্জে গত এক মাসে র্যাব, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার পিস ইয়াবা আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতির পুত্র, ভাতিজা, ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয়দানকারী নেতা ও কর্মী।
সূত্র আরও জানায়, 'ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত পথে আসা এসব মাদকের চালান রেল ও সড়কে জেলায় আসছে এবং অনেকগুলো মাদক সরবরাহ পয়েন্ট থেকে এগুলো বিপণন করা হচ্ছে, যার নেপথ্য নিয়ন্ত্রণকারীরা রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে।'
আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর কথা উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্র বার্তা২৪.কমকে জানায়, 'কিশোরগঞ্জে লাল ইয়াবার পাশাপাশি সাদা ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্ত থেকে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসব মাদকের চালান জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ও দুর্গম হাওর এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।'
'পরিস্থিতি কতটুকু ভয়াবহ তা প্রমাণিত হলো, জেলা কারাগারের বর্তমানে আটক প্রায় দেড় হাজারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মাদক মামলায় আটক আসামি', স্থানীয় প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে জানান।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, 'তৃণমূল ও স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মাদক ব্যবসায় জড়িত হওয়ার পরিণাম ভয়াবহ হবে। মাদকের চালান ও লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবহার অনেকাংশে বাড়বে এ কারণে। এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য আশু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।'
এদিকে, সম্প্রতি সীমান্ত এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মাদকের ব্যাপক চালান আটক হয়েছে। এসব কারণে আটক মাদক কারবারির মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ করেছে। জানিয়েছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও আত্মীয়তার তথ্য। এতে দলীয় ইমেজ ও ভাবমূর্তি বিনষ্টের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে মাদক ব্যবসার রাজনীতিকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা কঠোর হস্তে দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।