চট্টগ্রামে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
পুরনো ছবি

পুরনো ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মংলা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) আবহাওয়া অফিস থেকে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'ঢাকা, চট্টগ্রাম, মংলা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭৯ দশমিক ৪ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।'

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের প্রায় সব স্থানেই ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সাগরে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে টানা ভারি বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত লোকজনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিতে আসা লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানিও মজুদ রাখা হয়েছে।

   

তীব্র গরমে বেনাপোল বন্দরে পঁচছে আমদানিকৃত আলু



আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
তীব্র গরমে বেনাপোল বন্দরে পঁচছে আমদানিকৃত আলু

তীব্র গরমে বেনাপোল বন্দরে পঁচছে আমদানিকৃত আলু

  • Font increase
  • Font Decrease

বেনাপোল বন্দরে তীব্র গরমে ভারত থেকে আমদানিকৃত আলু ট্রাকে পঁচতে শুরু করেছে। সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৬ ট্রাকে ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়। তবে আমদানিকৃত আলু ২০০ কিলোমিটার দূরে থেকে লোড করে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে ৬ দিন লেগে যায়। এতে তীব্র গরমে ট্রাকে থাকা আলু পঁচে রস পড়তে দেখা যায়।

আলুর আমদানি কারক বাংলাদেশে ইন্টিগেটেড ফুডস এন্ড বেভারেজ। ৩২ ট্রাক আলুর চালানটি যাবে রংপুরে।

এদিকে বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আলু আমদানি বাড়লেও বাজারে দিন দিন বাড়ছে দাম। গতবছর এ সময়ে যে আলু ২২ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হয়েছে এখন তার মূল্য ৫০ টাকা দাড়িয়েছে। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে আলু আমদানি বাড়লেও কোন সুবিধা পাচ্ছেনা অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। এদিকে প্রচন্ড গরমে ট্রাকে থাকা আলু পঁচতে শুরু করেছে। তবে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্মকর্তারা বলছেন দ্রুত যাতে পণ্য চালানটি খালাস হয় তার সহযোগীতা করছেন তারা।

জানা যায়, দেশে প্রতিবছর আলুর চাহিদা ১ কোটি মেট্রিক টনের মত। আর চাহিদার বিপরীতে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে দেশে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১২ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও মজুদ করতে ব্যবসায়ীরা সারা বছর কমবেশি আলু আমদানি করে থাকে। বৈশ্বিক মন্দায় গেল বছর যখন দেশে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ে তখন পাল্লা দিয়ে আলুর দাম বেড়ে দাড়ায় কেজিতে ৮০ টাকা। এতে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়াতে গতবছরের ৩০ অক্টোবর নানান শর্ত দিয়ে বেসসরকারি ভাবে আলু আমদানির অনুমতি দেয়।

পরবর্তীতে ২ নভেম্বর থেকে শুরু হয় আলু আমদানি। বেনাপোল সহ দেশে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বাড়ছে আলুর আমদানি। তবে ভরা মৌসুম ও আমদানি বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছেনা ক্রেতারা। ব্যবসায়ী সিন্ডকেট দিন দিন বাড়াচ্ছে আলুর দাম। এতে ক্ষোভ সাধারণ ক্রেতাদের। এদিকে ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে আলু আমদানি আর আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ ৬ দিন লেগে যাওয়ায় বেনাপোল বন্দরে ট্রাকে আলু পঁচতে দেখা যায়।

আলুবাহী ট্রাক চালকেরা জানান, তারা ভারতীয় ট্রাক থেকে আলু খালাস করে রংপুর নিয়ে যাবেন। কিন্তু গরমে বন্দরেই আলু ট্রাকে পঁচতে শুরু করেছে। দ্রুত খালাস না হলে আরও নষ্ট হবে।

বেনাপোল বাজারের আলু বিক্রেতা সাইদুর রহমান জানান, বাজারে আলুর সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছেনা। বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।

সাধারণ আলু ক্রেতারা জানান, ভারত থেকে আলু আমদানি হলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম কমছেনা। বাজারে কারো কোন তদারকি নেই।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্মকর্তা হেমন্তু কুমার সরকার জানান, ভারত থেকে ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। এসব আলু মান পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসে সহযোগীতা করা হচ্ছে।

;

হাতীবান্ধায় বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ আদায়



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাট জেলার প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, প্রখর রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এর থেকে মুক্তি পেতে ও বৃষ্টির আশায় হাতীবান্ধা উপজেলা বড়খাতায় বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইস্তিখারা) আদায় করেছেন এলাকাবাসী। 

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ব্যবসায়ীদের আয়োজনে উপজেলার বড়খাতা হাই স্কুল মাঠে খোলা আকাশের নিচে এ বিশেষ নামাজে বিভিন্ন এলাকার মুসল্লীগণ অংশগ্রহণ করেন। 

এ বিশেষ নামাজ আদায় শেষে অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ কারী মাওলানা মুফতি নাজমুল হুদা সাদী,খতিব নুরানি জামে মসজিদ, বড়খাতা।

নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লী আহসান হাবিব লাভলু বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় মরতে শুরু করেছে কৃষকের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, আল্লাহ যেন বৃষ্টি দেন তাই নামাজ পড়েছি।

নূরানি জামে মসজিদের খতিব হাফেজ কারী মাওলানা মুফতি নাজমুল হুদাসাদী বার্তা ২৪. কমকে বলেন, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে কষ্টে আছে গাছপালাসহ প্রাণীকূল। সে কারণে বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়েছি।

;

আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে নোঙর করেছে এম ভি আবদুল্লাহ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশের পণ্যবাহী জাহাজ এম ভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে নোঙর করেছে।

সোমবার রাত ১০টার দিকে আল-হামরিয়া বন্দরের জেটিতে জাহাজটি নোঙর করে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) এ খবর জানায়।

জাহাজটি বন্দরে নোঙর করার সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কেএসআরএম গ্রুপের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কেএসআরএম গ্রুপের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একটি দল নাবিকদের বরণ করে নেন। এর আগে রোববার জাহাজটি বহির্নোঙরের ‘বি অ্যাংকরেজ’ এলাকায় নোঙর করে।

জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আল-হামরিয়া বন্দরের জেটিতে জাহাজটি ভেড়ানো হয়।

তিনি জানান, নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কয়লা খালাসের কাজ শুরু হবে। দুইজন নাবিক ফ্লাইটে দেশে আসবেন। বাকি ২১ জন ওই জাহাজেই দেশে ফিরবেন।

জাহাজটিতে বোঝাই করা পণ্যসামগ্রী (কয়লা) পর্যবেক্ষণ করে ক্যাপ্টেন বলেছেন, এতে অ্যালার্মিং কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ জন নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ছিনতাই করে। এসময় জাহাজটি দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে অবস্থান করছিল।

১৪ এপ্রিল ভোররাতে জাহাজটি জলদস্যু মুক্ত হয়। এ সময় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি থেকে বোটে নেমে যান। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধ জাহাজের পাহারায় এমভি আবদুল্লাহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হয়। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তখন জাহাজের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া, ডেকে হাইপ্রেসার ফায়ার হোস বসানো হয়, যাতে জলদস্যুরা ফের হামলা করলে উচ্চচাপে পানি ছিটানো যায়।

 

;

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা, মিথ্যা অভিযোগে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে ব্যাপক দায়মুক্তির কড়া সমালোচনা করেছে দেশটি।

জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি এমন অজুহাতে মিথ্যা অভিযোগসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে এসব কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এবং শ্রমের সিনিয়র ব্যুরো অফিসার রবার্ট গিলক্রিস্ট মানবাধিকার অনুশীলনের ৪৮তম বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন এবং মুখপাত্র ম্যাট মিলার।

রবার্ট গিলক্রিস্ট বলেন, মানবাধিকার রিপোর্ট নামে পরিচিত এই কংগ্রেসের নির্দেশিত প্রতিবেদনটি ১৯৯৭ সাল থেকে ডিআরএল ব্যুরোর একটি প্রধান প্রচেষ্টা। মানবাধিকার প্রত্যেকের জন্য; এই প্রতিবেদনটি এই সর্বজনীন অধিকারের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করার একটি উপায়।

যদিও মানবাধিকার সর্বজনীন তবুও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষাকারীরা এবং সুশীল সমাজের নেতারা প্রায়ই সকলের জীবন উন্নত করার জন্য বড় ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। বিশেষত যারা নারী ও শিশুর সুরক্ষা, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকার, এলজিবিটিকিউ প্লাস এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিয়ে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য চাপ দেয়ায় প্রায়শই হুমকি এবং হয়রানি, গ্রেফতার এবং সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হয়৷ বিশ্বজুড়ে সাহসী ব্যক্তিরা যারা অন্যদের মানবাধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তাদের নিজের জীবন এবং স্বাধীনতাকে ঝুঁকিপূর্ণ করেন তাদের গভীর ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তারা বলেছেন, বাংলাদেশে সরকারের মারাত্মক দুর্নীতি আছে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা রয়েছে। দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর ওপর আছে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ অথবা হয়রানি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, নিষ্ঠুর নির্যাতন, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তি দেওয়া হয়। রয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বন্দি ও আটকের অভিযান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই বছরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসনকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বাংলাদেশের হাসপাতালে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে ২০০৮ সালের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে তাকে জেলখানা থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালে সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করে গৃহবন্দি করা হয়। রাজনৈতিক বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও দেশের ভিতরকার আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার তথ্য প্রমাণে ঘাটতি আছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, তাকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক ছক সাজানো হয়েছে। পক্ষান্তরে প্রসিকিউটররা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করেছেন।

এই রিপোর্টে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার দিকেও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংবিধান সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়ার সদস্যসহ সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু সরকার এই অধিকারে ঘন ঘন হস্তক্ষেপ করেছে। এক্ষত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সীমাবদ্ধতা আছে। সরকারের হয়রানি অথবা প্রতিশোধ নেয়ার ভয়ে সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্র মিডিয়ার সদস্যরা ও ব্লগাররা নিজেরাই সেন্সর করেছেন। এতে তুলে ধরা হয়েছে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র, বিচারের ক্ষেত্রে হয়রানি, খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারসহ নানা রকম নিষ্পেষণের কথা। উল্লেখ্য, প্রতি বছর সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সময় গত রাতে এই রিপোর্ট প্রকাশ হয়। তাতে বাংলাদেশ অধ্যায়ে আরও বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মিডিয়ার স্বাধীনতায় মারাত্মক বিধিনিষেধ আছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে আছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অথবা সহিংসতার হুমকি। সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয় ও সেন্সরশিপ করা হয়। ইন্টারনেট স্বাধীনতায় আছে মারাত্মক বিধিনিষেধ। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অথবা স্বাধীন সমাবেশের ক্ষেত্রেও আছে বড় রকমের হস্তক্ষেপ। আছে সংগঠন, অর্থায়ন ও বেসরকারি এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আছে নিবর্তনমূলক আইন। মুক্তভাবে চলাচলে আছে বিধিনিষেধ।

রিপোর্টে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সদস্যদের শনাক্তে বা শাস্তি দিতে সরকার বিশ্বাসযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। 

এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেসব যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছে তার বিচার করার জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেই আদালত শাস্তি দিয়েই যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে মৃত্যুদণ্ড। অনেক পর্যবেক্ষক এই প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দেখেন। কারণ, আদালত বিশেষত বাছাই করে অভিযুক্ত করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের। এতে খেয়ালখুশিমতো ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তার তদন্ত নিজেরাই করেছে। তারা এমন সব ঘটনা ঘটিয়েছে যেখানে তাদের শারীরিক মারাত্মক প্রহারে মানুষ আহত হয়েছে অথবা মারা গেছেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে কতজন মানুষ মারা গেছেন তার মোট কোনো সংখ্যা সরকার প্রকাশ করেনি। এমনকি এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তও করেনি। এই তদন্ত যারা করেছেন তাদের স্বাধীনতা ও পেশাগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। 

রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা বছরেই আইন প্রয়োগকারীরা সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে তল্লাশি বা রেইড দিয়েছে। কোনো কোনো ঘেরাওয়ের কালে, গ্রেফতারকালে সন্দেজজনক কিছু মৃত্যু ঘটেছে। একই ঘটনা ঘটেছে অন্য আইন প্রয়োগকারীদের অপারেশনেও। রিপোর্টে আরও বলা হয়, আগের বছরের তুলনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে যায় গত বছর।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আইন ও শালিশ কেন্দ্র রিপোর্ট করেছে যে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ড, অথবা হেফাজতে থাকা অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আটজন। এর মধ্যে দুজন আইন প্রয়োগকারী এজেন্সির গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনজন নিহত হয়েছেন নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার আগে বা হেফাজতে নেয়ার পর শারীরিক নির্যাতনে। ২৬শে মার্চ সুলতানা জেসমিন র‌্যাবের হেফাজতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি আটক অবস্থায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা এটাকে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

র‌্যাবের ইউনিটের কমান্ড কর্মকর্তারা মিডিয়াকে বলেছেন, জেসমিন আর্থিক প্রতারণায় জড়িত থাকার জন্য তাকে তুলে নেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা আছে। ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশিতদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি একটি রিপোর্ট জমা দেয় আগস্টে। কিন্তু সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। অক্টোবরে হাইকোর্টের দু’জন বিচারক বলেন, এই রিপোর্ট অস্পষ্ট। গ্রেফতার ও আটকের বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা নেই এতে। এমন মন্তব্যের সময়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। 

১৮ই মার্চ সাদা পোশাকে র‌্যাব কর্মকর্তারা এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। এতে আহত হন একজন। ওই রিপোর্টে বলা হয়, মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ এবং মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হচ্ছে গুম এবং অপহরণ অব্যাহত আছে। অভিযোগ আছে এসব করছে নিরাপত্তা সার্ভিসের লোকজন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন রিপোর্ট করেছে যে, এ সময়ে ৩২ জনকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে, তদন্তে বা শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে সীমিত উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো রিপোর্ট করেছে যে, জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন যারা তারা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী। গুমের অভিযোগের পর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা কোনো রকম অভিযোগ ছাড়া কিছু মানুষকে ছেড়ে দিয়েছে। গ্রেপ্তার করেছে অন্যদের।

ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২৩ কান্ট্রি রিপোর্টে’ উল্লেখ করেছে যে, নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্সিগুলো জোরপূর্বক গুম, গোপন জেলখানার ব্যবহার, খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতার ও নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বছরজুড়ে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দিতে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অপহরণে জড়িত তাদের বিচারের। ভিকটিমের পরিবারগুলোর সংগঠন মায়ের ডাক র‌্যালি করে বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কোনো সদস্য আইনগতভাবে প্রশাসনিক, বিচারিক কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। মায়ের ডাক ও স্থানীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকারকে হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠিও লিখেছেন। একই সঙ্গে জাতিসংঘের কাছে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ার কারণে নাগরিক সমাজের সংগঠনের সমালোচনা করেন।

প্রতিবেদনে মিডিয়ার স্বাধীনতা অংশে বলা হয়, আইনে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্যকে সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিরুদ্ধে কথা বলাকে সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে বলেই মনে হয়। সাংবিধানিক কোনো পরিষদের সমালোচনাকে আইনে ফৌজদারি অপরাধ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে স্বাধীনতা যুদ্ধ, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার  বিরুদ্ধে প্রাপাগাণ্ডা ছড়ানোর কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। সরকারের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে সারাবছরই সরকার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আইনমন্ত্রী রিপোর্ট করেছেন যে, সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কমপক্ষে ৭০০০ মামলা মুলতবি আছে। আগস্টে সরকার ঘোষণা দেয়, তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে পরিণত করবে। পার্লামেন্ট এই আইন পাস করেছে সেপ্টেম্বর মাসে।

আইন ও সালিস কেন্দ্র রিপোর্ট করেছে যে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১১৯টি ঘটনায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে। আরেকটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন বলেছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর ৩০৯টি হামলা বা হয়রানির ঘটনা ঘটছে। আহত হয়েছেন ১৩৮ জন সাংবাদিক। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সুনাম নষ্ট করার জন্য প্রিন্ট, অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহারের অভিযোগে প্রথম আলোর সম্পাদক ও একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন আওয়ামী লীগপন্থি একজন আইনজীবী। এ অভিযোগে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আটক করে পুলিশ। এতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। এই আইনকে সংশোধন বা বাতিলের দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের সংগঠন, সম্পাদক পরিষদ ও রাজনৈতিক দলগুলো।

;