বুদ্ধিজীবীর বাড়ি দখলে বাধা দেননি ডিসি ইব্রাহিম



শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
ডিএমপি’র উপ-কমিশনার ইব্রাহিম খান/ ছবি: সংগৃহীত

ডিএমপি’র উপ-কমিশনার ইব্রাহিম খান/ ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করার অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

রোববার (২৫ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে ডিসি ইব্রাহিমের বরখাস্তের বিষয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা মুখ খুলছেন না।

তবে পুলিশ সদরদফতর সূত্রে জানা যায়, আজাহারুল ইসলাম খান নামের এক ব্যক্তি পুলিশ সদরদফতরে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে পুলিশ সদরদফতর। আর ঐ ব্যক্তির অভিযোগের সত্যতা মেলে তদন্ত প্রতিবেদনে।

সূত্র বলছে, এক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের বাড়ি ভাঙা ও জমি দখলের সময় বাধা দেননি ডিসি ইব্রাহিম। তাই দায়িত্বে অবহেলা ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566830310882.gif

জানা যায়, পুরান ঢাকার নবাবপুরে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদ একেএম সামসুল হক খানের পরিবারের নামে বরাদ্দ দেওয়া সরকারি জমিতে তিন তলা একটি ভবন জবরদখল ও ভবন ভেঙে ফেলে ৩০ থেকে ৩৫ জন সন্ত্রাসী।

এ বিষয়ে বংশাল থানা ও জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে পরিবারটি। তাদের সম্পত্তির দাম ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, শহীদ সামসুল হক খানকে ২০১০ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে সামসুল হক খানের মা মাসুদা খানকে ঢাকার নবাবপুর রোডের ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে চার কাঠার প্লটটি ইজারা দেন।

পরে তার উত্তরসূরি হিসেবে তার ছেলে আজহারুল হক খানকে ঐ জমি হস্তান্তর করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে ঐ জমিতে মাসুদা করপোরেশন ও এসএইচকে করপোরেশন নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।

সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় জাবেদ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী ঐ জমি দখল করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় তার সঙ্গে ৩০ থেকে ৩৫ জন সন্ত্রাসী ছিল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566830329546.gif

ঐ ঘটনার পরদিনই শহীদ পরিবারের লোকজন বংশাল থানায় এক মামলা করেন। কিন্তু থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুলিশের লালবাগ জোনের তৎকালীন ডিসি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। এতেও কোনো কাজ হয়নি।

এ ঘটনায় পুলিশ সদরদফতরে ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরিবারটি। অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করে পুলিশ সদরদফতর। তদন্ত কমিটি ডিসি ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, তদন্তে অসহযোগিতা ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়।

ডিসি ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ মে পুলিশ সদরদফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি আমিনুল ইসলাম তাকে একটি চিঠি দিয়ে এসব অপরাধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান।

ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিসি ইব্রাহিমকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করে পুলিশ সদরদফতরে।

আরও পড়ুন: ওয়ারী বিভাগের ডিসি সাময়িক বরখাস্ত

   

‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী বাড়ছে’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি জানান, এবার বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

সোমবার (১৩ মে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাজেট বিষয়ক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাশেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।

আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

আসন্ন বাজেট প্রণয়ণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন যেন বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এবারের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ অবকাঠামোখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকবে বলে তিনি জানান।

বাজেটে কর অবকাশ সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, যেসব খাত দীর্ঘদিন কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে, সেসব খাতে কর অব্যাহতির সুবিধা উঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি খাত গত ২০ থেকে ২৫ বছর যাবৎ কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে। এই সুবিধার কারণে এখন তারা যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং দেশের বাজার দখলে নিয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের রফতানির দিকে মনোযোগী হওয়ার কথা থাকলেও তারা সেটি করছে না।

তিনি মনে করেন, কর অবকাশের বাড়তি সুবিধা উঠিয়ে নিলে এসব খাতের উদ্যোক্তারা রফতানির প্রতি মনোযোগী হবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর অবকাশ সুবিধা উঠিয়ে দিলে, এসব খাত বাড়তি সুবিধা হারাবে ঠিকই, কিন্তু সেটি রফতানির মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে পারবে। টেকসই অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের সেদিকে যাওয়ার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

;

বুধবার রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে আধাবেলা অবরোধের ডাক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি
বুধবার রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে আধাবেলা অবরোধের ডাক

বুধবার রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে আধাবেলা অবরোধের ডাক

  • Font increase
  • Font Decrease

চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ বাতিল, রাজা-হেডম্যান-কার্বারি পদবি বিলোপ এবং পাহাড়িদের প্রথাগত অধিকার হরণের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ১৫ মে (বুধবার) খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় আধাবেলা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

সোমবার (১৩ মে) রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে উক্ত অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী গণসংগঠনসমূহ এবং সচেতন নাগরিক সমাজ ও সাজেক কার্বারি অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগণ তথা স্থায়ী বাসিন্দারা ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও প্রথাগত অধিকার ভোগ করে আসছে। কিন্তু সরকার এই অধিকারকে সুরক্ষা না দিয়ে উল্টো আদালতের মাধ্যমে আইনটি বাতিল বা অকার্যকর করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, আইনটি না থাকলে রাজা হেডম্যান, কার্বারীর পদবিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তাদের আর কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এ ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না, তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

খাগড়াছড়ি জেলায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর, পানছড়ি বাজার, দীঘিনালা, মহালছড়ি, গুইমারা, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও রামগড় এবং রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, কুদুকছড়ি, সাজেক, কাউখালি, নানিয়াচর ও লংগদুতে সমাবেশগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে।

;

দৃষ্টিহীনতা বাধা হতে পারেনি মেধাবী ঐতির



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট
দৃষ্টিহীনতা বাধা হতে পারেনি মেধাবী ঐতির

দৃষ্টিহীনতা বাধা হতে পারেনি মেধাবী ঐতির

  • Font increase
  • Font Decrease

‘অন্ধজনের কিবা রাত্রি, কিবা আবার দিন, সুন্দর এই পৃথিবী হায়রে রইলো অচিন'। না ! পৃথিবী দেখা তার অচিন হলেও সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আলোকিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছেন ঐতি রায় (১৫)।

জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছেন। মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে 'এ' গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।

সোমবার (১৩ মে) সরেজমিনে গিয়ে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় ঐতির বাড়িতে কথা হয় তার বাবা অনুপম রায়ের সাথে। আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে এমন ফল করবে ভাবতে পারেননি। ছোটবেলা থেকে তার মেয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। আমরা সেভাবেই তাকে যত্ন করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই।

একমাত্র মেয়েকে তার মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতি লেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেছে।

ঐতির রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে ঐতির পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আমরা খুবই খুশি, শ্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান । এজন্য ঐতির পরিবার সরকারের সহযোগিতা চান।

এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনভাবেই সম্ভব না। ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে

;

‘গেটলক’ সিস্টেমে চলছে আন্তঃজেলা বাস, ফিরেছে শৃঙ্খলা



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর যানজট নিরসনে চালু করা গেটলক সার্ভিসের নিয়ম মেনেই চলেছে আন্তঃজেলা বাস। ফলে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজট কিছুটা নিরসন হয়েছে। ভিন্ন রূপ এসেছে বাস চলাচলে। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামার বিপরীতে নিয়ম মেনেই নির্দিষ্ট স্থানে থামছে বাস। ফলে রাজধানীর ভেতরে অবস্থানরত বাস পয়েন্টগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থায় ফিরেছে শৃঙ্খলা।

তবে শৃঙ্খলা ফিরলেও এই নিয়মে চলাচলে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের মতে, মহাখালী থেকে খিলক্ষেত বাস পয়েন্টের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানরত যাত্রী পরিবহন করে যে বাড়তি আয়ের সুবিধা পেতেন সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

আলম এশিয়া পরিবহনের চালকের সহকারী দেলোয়ার বলেন, বর্তমানে দূরপাল্লার গাড়িগুলোতে গেটলক নিয়ম হয়েছে। এখন টার্মিনাল থেকে গাড়িতে যাত্রী তোলার পর আমরা ওয়েবিলে যাত্রীর সংখ্যা লিখে মালিক পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে গাড়ি ছাড়ছি। রাস্তার মাঝ থেকে যাত্রী তোলার কোন সুযোগ নেই। ওয়েবিলের যাত্রীর থেকে গাড়িতে বেশি যাত্রী থাকলে জরিমানার নিয়ম করেছে। তাই এখন মহাখালী থেকে যাত্রী তোলা হলে গাড়ির গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার খিলক্ষেত কাউন্টারে গিয়ে গেট খোলা হয়। মাঝপথে কোন যাত্রী তোলার সুযোগ নেই।

ছবি: মহাখালী বাস টার্মিনাল

তিনি বলেন, আগে আমরা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত যেতে যেতে ১৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার যাত্রী নিতে পারতাম। এর কারণে মালিকপক্ষও কিছুটা লাভবান হতো, আবার আমাদেরও কিছুটা বাড়তি আয় হতো। কিন্তু এখন তো আর সেই সুযোগ নেই। আমাদের প্রতি ট্রিপের উপর একটা পার্সেন্টেজ দেয়া হয়। বেশি টাকা রোজগার করতে পারলে আমরা বেশি পার্সেন্টেজ পাই। মালিক পক্ষ লাভবান হলে আমরা লাভবান হয়। এখন আর সেই সুযোগটা পাবো না।

শুধু দেলোয়ারই না। একই ধরনের অসন্তোষের কথা জানান মহাখালী বাস টার্মিনালে কর্মরত অন্য পরিবহন শ্রমিকেরাও।

এদিকে, নতুন এই নিয়মে শৃঙ্খলা ফেরার কারণে সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করলেও কতদিন নিয়ম কার্যকর থাকবে সেটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাদের ভাষ্য, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সিস্টেম চালু করা হলেও প্রথমে কার্যকর থাকলেও কিছুদিন যেতেই আবারও নিয়মের বাইরে চলে যায় সবকিছু। ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানেই ফিরে আসে আগের রূপ।

আবির আহমেদ নামের এক যাত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশে তো নতুন নতুন কত নিয়ম হয়। প্রতিটা নিয়মের শুরুতে কঠোর অবস্থান দেখা যায়। কিন্তু কিছুদিন পর নিয়ম হারিয়ে যায়। কেউ আর নিয়ম মানে না। এই নিয়মগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করা হতো তাহলে দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসতো।

তিনি বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনালে যে নিয়ম চালু হয়েছে সেটা যদি ঠিকমতো কার্যকর থাকে, তাহলে এই সড়কের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। কোন যানজট থাকবে না।

ছবি: বাসগুলো ‘বাস বে’- এর মাধ্যমে যাত্রী উঠানামা করছে

অন্য এক যাত্রী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়ম হয়েছে তবে সেই নিয়ম কতদিন থাকবে সেটাই কথা। যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত তদারকি করে এবং নিয়ম মানতে বাধ্য করে তাহলে এই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে।

এদিকে সোমবার (১৩ মে) রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রীরা বাসে ওঠার পর গাড়ি ছাড়ার আগ মুহূর্তে মালিকপক্ষের কাছ থেকে ওয়েবিল সাক্ষর করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। এরপর গাড়ির গেট লক করে টার্মিনাল থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। ওয়েবিল স্বাক্ষরের পর কোন যাত্রী গাড়িতে উঠলেও তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও টার্মিনালে অবস্থিত কন্ট্রোল রুম থেকে মাইকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিতেও শোনা গেছে। সেই সঙ্গে কোন পরিবহন প্রধান সড়কে পার্কিং করলে মাইকের মাধ্যমে তাদের বার বার স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া এবং স্থান ত্যাগ না করলে চালক এবং চালকে সহকারীকে কন্ট্রোল রুমে ডেকে পাঠানো হচ্ছে।

এছাড়াও রাজধানীর মধ্যে চলাচলকারী লোকাল বাসগুলো ‘বাস বে’- এর মাধ্যমে যাত্রী উঠানামার চিত্রও দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল রোববার (১২ মে) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর যানজট নিরসনে আন্তঃজেলা বাসের ‘গেটলক’ সিস্টেম চালু, কার্যক্রম উদ্বোধনে করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন। এ সময় পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন এই ডিসি। সেই সঙ্গে যেখানে সেখানে হাত নাড়িয়ে বাসে না ওঠার জন্য যাত্রীদেরও অনুরোধ করেন তিনি।

গেটলক সিস্টেম প্রসঙ্গে (ডিএমপি) ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) সায়েম বলেন, আন্তঃজেলার যেসব বাস মহাখালী থেকে ছেড়ে যাবে সেগুলোতে কতজন যাত্রী আছে মালিক সমিতির লোকজন তা গুনে রাখবে। পরবর্তীতে কাকলী স্টপেজে বাস থামিয়ে দেখা হবে মহাখালী থেকে যে যাত্রী ছিল সেটাই আছে কিনা। এরপর কুর্মিটোলা, খিলক্ষেত এবং সর্বশেষ আব্দুল্লাহপুর স্টপেজ পর্যন্ত মালিক সমিতির লোক দ্বারা চেক করা হবে। এসব স্টপেজ ব্যতীত কোথাও থেকে যাত্রী ওঠানো যাবে না।

তিনি বলেন, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রতিনিয়ত এটি তদারকি করবে। কোনো পরিবহন এই নিয়ম অমান্য করে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এর আগে শনিবার রাতে ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টে জানানো হয়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছেড়ে প্রথমে কাকলী, তারপর কুর্মিটোলা, খিলক্ষেত এবং সর্বশেষ আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রী নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাবে। যেসব পরিবহন এই নিয়ম অমান্য করে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুক পোস্টে যত্রতত্র হাত নাড়িয়ে বাসে না ওঠার জন্য যাত্রীদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করা হয়।

;