মনে রঙিন স্বপ্ন, তবে আলো নেই তাদের চোখে



কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
রংপুর: ছোটবেলা থেকেই দুঃখ কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠেন আনিছুল হক। তবে স্বপ্ন ছিল অভাব অনটনের সংসারে হাল ধরবেন নিজেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই অন্ধকার নেমে আসে তার পরিবারে। অন্ধত্ব নামের কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে আনিছুলের রঙিন স্বপ্নগুলো। এখন রাত-দিন সব সময়ই তার জীবন কাটছে অন্ধকারে। ভালো নেই আনিছুলের পরিবারও। অন্ধত্বের অভিশাপে দিশেহারা পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
 
রংপুর মহানগরীর উত্তর হাজিরহাট এলাকার রণচন্ডি গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে আনিছুল। একটা সময় তার দুই চোখেই আলো ছিল। তবে পরিবারে অভাব ছিল সব সময়ই। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। 
 
ত্রিশ বছর বয়সী আনিছুল ২০০৯ সালে পরিবারের কষ্ট দূর করতে বাবা-মাকে ছেড়ে পাড়ি দেন ঢাকায়। সেখানে একটি প্যাকেজিং কোম্পানিতে সামান্য কিছু বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন। এরপর বেশ ভালোই ছিল তার পরিবার। কিন্তু  দুই বছর পার না হতেই চোখের পর্দায় নেমে আসে কালো মেঘ। নিভে যেতে বসে আনিছুলের দু’চোখের স্বপ্ন। 
 
২০১১ সালে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ঢাকা থেকে শূন্য হাতে গ্রামে ফিরে আসেন আনিছুল। বংশগত দৃষ্টিহীনতার অভিশাপে হতাশায় ভেঙে পড়েন তিনি। কষ্টের জীবনে একজন সঙ্গী পেতে ২০১৩ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেছিলেন। কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায় ভেঙে যায় তার সংসার।
 
এখন মায়ের আঁচলই আনিছুলের নিরাপদ ঠিকানা। এই আনিছুল একটা সময় গ্রামের মেঠোপথ ধরে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন। প্রায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা আনিছুল সকাল বিকেল ছুটে যেতেন খেলার মাঠে। সবকিছুই সাজানো ছিল তার। কিন্তু এখন সেই সাজানো জীবনে কিছুই নেই। দৃষ্টিহীনতার মতো বংশগত রোগে এলোমেলো হয়ে গেছে আনিছুলের পুরো পরিবার। বর্তমানে চোখের আলো হারানো কর্মহীন আনিছুলের সারাদিন কাটে বাড়িতে। 
 
এদিকে আনিছুলের বড়ভাই আবদুল আহাদেরও চোখে কোনো আলো নেই। আহাদ ডিগ্রি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজ এলাকার ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষার আলো দিতে গড়েছিলেন মন্থনা বেসরকারি রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়। বেশ কয়েক বছর সেটি চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন পূর্ব পুরুষদের মতো তারও দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে থাকে তখন বন্ধ হয়ে যায় তার হাতে গড়া বিদ্যালয়টি। আহাদ এক সময় গ্রামের ছেলে-মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়াতেন। এখন চোখের আলো হারিয়ে সবকিছুই থমকে গেছে তার। তবে ছোট ভাইয়ের মতো নিঃসঙ্গ জীবন নয় তার। আহাদের রয়েছে স্ত্রী-সন্তান। বর্তমানে সেলাইয়ের কাজ করে পুরো পরিবারকে ভালো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আহাদের স্ত্রী।
 
আনিছুল ও আহাদের মতো অন্ধত্ব তাড়া করেছে তার বোন শাহানাজ পারভীনকে। এই তিন ভাই-বোন এখন আলো থেকে বহু দূরে। শিক্ষা-দীক্ষায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল শাহানাজেরও। এ বছর স্থানীয় জাফরগঞ্জ ফাজিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবার কথা ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবারের অন্যদের মতো তারও জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে থমকে যায় পরীক্ষা দেয়া। শাহানাজের একটা চোখের আলো নিভে গেছে, আর এক চোখে ঝাপসা দেখে সে। বর্তমানে দিনের আলোতে নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারলেও বিকেলের পর সবই অন্ধকার দেখে শাহানাজ। 
 
স্থানীয় এলাকাবাসী মাহবুবুল ও আবদুল হক জানান, বর্তমানে এই পরিবারের ৫ জন সদস্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তাদের ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কোনো কিছু নেই। এলাকার বিভিন্ন লোকজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই পরিবারকে মাঝে মধ্যে কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেয়। সেটা দিয়েই কোনো মতে তাদের সংসার চলছে।
 
অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষক হাসান আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আহাদ, আনিছুল ও শাহানাজের দাদি মরজিনা বেগম এবং ফুফু হোসনে আরা একই রোগে আক্রান্ত। তারা সবাই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই পরিবারের এখন উপার্জন করার মতো কেউ নেই।
 
এদিকে আহাদ ও আনিছুলের প্রত্যাশা, সমাজের বিত্তমান মানুষরা এগিয়ে আসলে তারা চিকিৎসার মাধ্যমে হয়তো আবারো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে। ফের স্বাভাবিক জীবনে হয়তো হাসি খুশিতে থাকবে তারা। 
   

বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: তাপস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মুগদায় করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত স্কুল শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদের পরিবারের পাশে থাকার এবং এ দুর্ঘটনায় দোষী সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মাহিন আহমেদের পরিবারকে সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে নিহতের বাড়িতে যান। পরে তিনি গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক নয়টার সময় মুগদার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে বর্জ্য স্থানান্তরকালে করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িতে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ছোট্ট বালক মাহিন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত। আমরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি। ছোট্ট শিশু হারানোর ঘটনায় বাবা-মাকে কোন ভাষাতেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। আমরা নিহতের পরিবারের পাশে থাকব।

এ দুর্ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এ দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা নেওয়া হয়েছে। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাইছি। এই দুর্ঘটনায় যেন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু বিচার হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আমাদের নির্ধারিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি চালানো হচ্ছিল। আমরা এ ধরনের অনিয়ম কোনভাবে বরদাশত করবো না। এ ঘটনায় কঠোরতর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ রকম কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ধরনের ঘটনায় আগেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। জড়িতদের চাকুরিচ্যুত করেছি, ছাটাই করেছি। আবার অনেক নতুন নিয়মিত গাড়িচালক নিয়োগ দিয়েছি। ফলে বিগত ২ বছর করপোরেশনের গাড়ি দ্বারা কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। গতকালের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা আমাদেরকে অত্যন্ত শোকাহত করে তুলেছে। এবারও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো। যাতে করে এ ধরনের দুর্ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মাকসুদা শমশের প্রমুখসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

;

৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

  • Font increase
  • Font Decrease

সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে আগামী ৯ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও একাডেকিম কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা আগামী ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এবং ১২ মে থেকে যথারীতি চালু হবে।

এতে আরও বলা হয়, গতকাল (বৃহস্পতিবার) শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করার শর্তে হলে অবস্থান করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন চুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ৯ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকব। ১২ মে থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে। দুইজন মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যদিও বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রোর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা চিঠিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম (পরীক্ষাসহ) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে এদিন রাতে প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে।

এর আগে, গত সোমবার মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। ওইদিন আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে মাঠে নামেন। আন্দোলন চলার সময় শিক্ষার্থীরা বাসেও আগুন দেন।

;

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা গ্রেফতার



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডখ্যাত দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপজেলার পশ্চিম আমিলাইশ এলাকা থেকে এই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়।

বগার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে শিশু হত্যা, অপহরণ, ইয়াবা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় সাতকানিয়ার সাবেক এমপির স্ত্রী-শ্যালকের ওপর হামলাসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে।

বগাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার। তিনি বলেন, ইয়াবা মামলায় বগাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও বাকলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

৩ মাসে বগার নেতৃত্বে ২২ হামলা:

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা। গত তিনমাসে সাতকানিয়ার চরতি-আমিলাইশ এলাকায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এই সাইফুল বাহিনী। এরমধ্যে কমপক্ষে ১০টি ঘটনায় থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলেননি।

নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতেই নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সাইফুল বাহিনীর অত্যাচার। দক্ষিণ চরতিতে নৌকার সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ও দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় সাইফুল বাহিনী। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি ও ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।

নির্বাচনের পরের দিন সোমবার খতিরহাট এলাকায় নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিন কে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন।

এছাড়া নির্বাচনের পর ৫ ফেব্রুয়ারি চরতি ইউনিয়ন পরিষদ কার্য়ালয়ে ঢুকে বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। পরে দক্ষিণ চরতি এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের পর থেকে এখনো ঘর ছাড়া নুর মোহাম্মদের পরিবার। চরতি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাইনুদ্দিনকে অপহরণ করে মারধর দক্ষিণ চরতির আরাফাত সিকদারকে মারধর করে এই সাইফুল বাহিনী।

নির্বাচনের আগে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ চরতি কাটাখালী ব্রিজের পাশে নৌকার পথ সভায় অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায় সাইফুল ও তার বাহিনী। এই সময় নৌকা সমর্থক চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মিছদাকুল বেসারত চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফয়সালসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন।

এর দুইদিন আগে ১৯ ডিসেম্বরও নৌকার পথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। ওইদিনও ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুককে বাড়ি-দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নুর হোসেন কেও মারধর করে সাইফুল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন কোনো দিন নেই যে- সন্ত্রাসী সাইফুল ও তার বাহিনী দ্বারা এলাকার মানুষের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী সাইফুল কোনো পদ পদবিতে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্য়াক্রম চালিয়ে আসছেন। এতদিন পর্যন্ত সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল। গত বছর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তখন থেকে এম এ মোতালেবের দিকে ভিড়েন সাইফুল মেম্বার। মোতালেব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তারপর থেকে আরো হিংস্র হয়ে উঠেন তিনি।

এর আগে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে যায় দক্ষিণ চরতির ১০ পরিবার। নারী ও শিশুসহ এসব পরিবারের প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন দীর্ঘ এক বছর নিজেদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর উদ্ভাস্তুর মতো দিনযাপন করে। বাড়ি-ভিটে ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন উদ্ভাস্তু পরিবারসহ এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন।

সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে এসব মারধর ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (বগা)। ইতোমধ্যে দুই-তিন বার জেলেও গিয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসায়ী। সাতকানিয়ার পশ্চিম অঞ্চল (চরতি, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, এওচিয়া ও নলুয়া) সহ চন্দনাইশের বৈলতলী, আনোয়ারার হাইলধর ও বাঁশখালীর পুকুরিয়া অঞ্চলের অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল ও তার বাহিনী। এছাড়া রয়েছে খাল ও সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবসা।

সাইফুল বাহিনীর অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার।

 

;

সিন্ডিকেট করে অনিয়ম দুর্নীতি

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে

টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে

  • Font increase
  • Font Decrease

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদফতরের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।

সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওপেন প্ল্যাটফর্মে টেন্ডার উন্মুক্ত করান। তারপর তাদের মাধ্যমে টেন্ডারের দরপত্রের আহ্বান করে আবেদন গ্রহণ করেন এই কর্মকর্তা। তাদের টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি কাজ পাইয়ে দিয়ে এর বিনিময়ে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের অর্থ।

এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে, এই নির্বাহী প্রকোশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২২-২০২৪ অর্থবছরে মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টারের পাশের অবস্থিত (রুম নম্বর ৭ ও ৮) এই দুটি রুমকে সংস্কার/ মেরামত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আইভি বাংলোতে রূপান্তরের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে কাজ শেষ না করে কমিশন নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দকৃত অর্থ পাইয়ে দেন তিনি।

তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর এই তদন্ত কমিটির চোখে ধুলো দিতে রাতের আঁধারে নামমাত্র নিম্নমানের কাজ করেন তিনি। একই সঙ্গে নানান ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কমিশনের বিনিময়ে কাজ ভাগিয়ে নেওয়া, কাজ না করে বিল উত্তোলন করাসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।

এর আগে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইভি বাংলো তৈরির নামে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, এসব অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে। গত বছরের আগস্ট মাসে এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগের অভাব থাকে না। এটা নতুন কিছু না। আপনি আরিফের নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। তার কাছে সব তথ্য উপাত্ত দেওয়া আছে।

আরিফকে ফোন করে তার কর্মস্থলের পদমর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে আছেন।

এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্যার আপনাকে কী বলেছেন, সেটা তো আমি জানি না। আমি একটু স্যারের সঙ্গে কথা বলে রবিবার আপনাকে ফোন দিবো’।

সেলফোনে কথা বলে জানাতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘এখন তো আমি আমার নিজের কাজে একটু সচিবালয়ে আছি। এখন সম্ভব না’।

এসব দুর্নীতির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়, তদন্তের দায়িত্বে থাকা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানের সঙ্গে। 

সোহেল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এটা বেশ কিছুদিন আগের কথা। আসলে তদন্ত কমিটি না। প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল আমাকে’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যেকোনো বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রথমে প্রাথমিকভাবে তার অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। আমি তদন্ত করেছিলাম। সেই প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিলাম’।

তদন্তে কী পেয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারবো না। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সঙ্গে আমাদের কথা বলার অনুমতি নেই’।

এরপর তিনি ফের বলেন, ‘তবে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ হয়নি’।  

তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্য জানতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নবীরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এদিকে জানা গেছে, এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় নিজ এলাকায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।

সূত্র বলছে, চুন্নু নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছেন ‘নাহিয়ান ব্রিকস ফিল্ড’, পটুয়াখালীর কলেজ রোডে দুইতলা বাড়ি, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে পাঁচ একর জমি, পটুয়াখালীতে ‘নেক্সাস’ নামে একটি গার্মেন্ট শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকার ধানমণ্ডিতে সেন্ট্রাল রোডে ও বেইলী রোডে দুটি ফ্ল্যাট। এছাড়াও রয়েছে, নামে-বেনামে অসংখ্য সম্পদ।

;