প্রশ্ন সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে দেয়া হত পরীক্ষার্থীদের
ঢাকা: রাজধানীর বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার পর তা আলিয়া মাদরাসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে বসে সমাধান করত চক্রটি। পরে সেগুলো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের (পরীক্ষার্থী) কাছে সরবরাহ করত।
এমন অভিযোগে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূল হোতাসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতাররা হলেন- ইব্রাহিম (২৮), আইয়ুব আলী (বাঁধন), মোস্তফা কামাল (২৮), মনোয়ার হোসেন (৪২), নুরুল ইসলাম (৪৭), হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মোহাম্মদ বাবুল ও অলিপ কুমার বিশ্বাস। গত পাঁচ দিনের এক সাঁড়াশি অভিযানে তাদের সিরাজগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস করেছে। চক্রটি বিভিন্ন জনের কাছে প্রশ্ন সরবরাহ করে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি জানান, ভর্তি কিংবা নিয়োগ পরীক্ষায় মূলত দুই ভাবে জালিয়াতি হয়। একটি চক্র আগের রাতে প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করত। আরেকটি চক্র পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করত। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মোট ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত পাঁচ দিনের এক সাঁড়াশি অভিযানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিজিটাল ডিভাইস চক্রের মাস্টার মাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত ইব্রাহিম এবং ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আয়ুব আলী বাঁধনকে গ্রেফতার করা হয়।
নজরুল ইসলাম জানান, চক্রটি ২০১২ সাল থেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নয়, মেডিকেল, ব্যাংকসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
সিআইডির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃত অলিপ, ইব্রাহীম, বাঁধন ও মোস্তফা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর রাজধানীর আলিয়া মাদরাসা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে নিয়ে আসত। তারপর সেই হলের দুটি কক্ষে বসে তারা অভিজ্ঞদের দিয়ে ওই প্রশ্নপত্র সমাধান করত। পরে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করত। এ জন্য তারা প্রশ্নপত্র কেন্দ্র থেকে টাকা দিয়ে কিনে আনা, সমাধান ও যাবতীয় টাকা পয়সা সমন্বিত ভাবে খরচ করত। পরে সেই টাকা তারা পাওয়ার পর সমান ভাগ করে নিত।