ভারতীয় গরুর আতঙ্কে ব্যাপারীরা!
গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে: আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে গাবতলীর পশুর হাটে হাজির হচ্ছেন ব্যাপারীরা। রাজধানীবাসীর কোরবানির পশু রাখার সংকট থাকায় বেচা-কেনা এখনও শুরু হয়নি। তবে বেচাকেনা না শুরু হলেও হাটের শুরু দিন থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন দেশী গরুর ব্যবসায়ীরা।
তারা হতাশা প্রকাশ করে জানান, এবার তারা হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশী গরু নিয়ে এসেছেন এবং আরও দুই দিন পর্যন্ত গরু আসবে। তা দিয়ে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু এর মধ্যে যদি বর্ডার দিয়ে ভারতীয় গরু নামে এবং হাটে আসে তাহলে দেশী গরুর ব্যবসায়ীদের বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। যেমন বিগত বছরগুলোতে হয়েছেন।
এতে করে দেশীয় খামারিরা পশু পালনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। আর এর ফলে দেশীয়ভাবে কোরবানির চাহিদা মেটানোর মত সক্ষমতা কোনো দিনই তৈরি হবে না বলে জানিয়েছেন ব্যাপারীরা।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী ঘুরে ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
গাবতলী পশুর হাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ধীরে ধীরে রাজধানীর এই অন্যতম পশুর হাটটি কোরবানির পশুতে পরিপূর্ণ হচ্ছে। তবে ব্যাপারীদের দাবি, মাত্র ৫০ শতাংশ কোরবানির পশু হাটে এসেছে। সামনের দুই দিনে আরও ৫০ শতাংশ গরু হটে আসবে। আর হাটে আসা কোরবানির পশুর মধ্যে ৯০ শতাংশই হচ্ছে দেশী গরু। আর সামনের বাকি দুই দিনে যা পশু আসবে তার মধ্যে দেশী গরুর সংখ্যাই বেশি থাকবে।
তারপরও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না দেশী গরুর ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, গত দুই বছর ধরে হাটের শেষ দুই দিনে হঠাৎ করে ভারতীয় গরু চলে আসে। আর তুলনামূলকভাবে ভারতীয় গরুর দাম কম থাকায় দেশী গরু কম বিক্রি হয়। ক্ষতিগ্রস্থ দেশী গরুর ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত দুই বছরে ধরে ভারতীয় গরুর হঠাৎ আগমনে দেশী গরুর ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখ দেখছেন।
কুষ্টিয়ার খামারি মো. শরিফুল ইসলাম ৫টি দেশী গরুর নিয়ে এসেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত তিন বছর ধরে গরুগুলো অনেক টাকা খরচ করে পালন করেছি। এখন আশা হচ্ছে একটু ভালো দামে বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করব। যাতে করে নিজেও চলতে পারি আবার যেন উৎসাহ নিয়ে পশু পালন শুরু করি।
কিন্তু তিনি এ সময় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, চিন্তায় আছি হাটে আবার ভারতীয় গরু আসে কিনা। ভারতীয় গরু এবারও যদি হাটে চলে আসে তাহলে আমাদের অনেক লোকসান হবে। এবার এমন হলে মনে হয় না যে আর গরু পালতে পারব।
পাবনার গরু ব্যবসায়ী মিলন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাজারে যে পরিমাণ দেশী গরু আছে এবং আরো যা আসবে তা দিয়ে সুন্দর মত কোরবানির চাহিদা মিটবে। খুব বেশি দামও হবে না। কিন্তু হাটে যদি এখন হঠাৎ করে ভারতীয় গরু চলে আসে তাহলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হব। আর এতে করে খামারিরা আর উৎসাহ পাবেন না দেশী গরু পালনের।
ভারতীয় গরুর ব্যাপারীরা জানান, দেশীয় গরুর ব্যবসায়ীরা গরুর দাম চড়া করার জন্য এখন এ কথা তুলছেন। তারা নিজেরাও জানেন আমদানি করা পশু না আসলে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো যাবে না। আর চাহিদা মেটানো না গেলে সঙ্কটের কথা বলে দেশী গরুর ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার চিন্তায় আছেন।
সিরাজগঞ্জের ভারতীয় গরুর ব্যাপারী আজমল শেখ বার্তা২৪.কমকে বলেন, হাটে যে গরু আসছে তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এখনও যদি আমদানি করা গরু না আসে তাহলে সংকট তৈরি হবে। ফলে হাটে কোরবানির পশুর দাম বেশি থাকতে পারে।
কোরবানির পশু দেখতে আসা মাসুদুর রহমান বলেন, হাটে এখন বড় সাইজের গরু বেশি দেখছি। মাঝারি বা ছোট সাইজের গরু কম। আজ দেখতে এসেছি বাজেটে মিললে কিনব না হল আরেকদিন আসতে হবে।
এদিকে হাটের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি এখনো শেষ করতে পারেনি গাবতলী পশুর হাট কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো.সানোয়ার বার্তা২৪.কমকে বলেন, হাট প্রস্তুত। তবে ছোট ছোট দু‘ একটি কাজ রয়েছে যা আজ রাতের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।