অভিশপ্ত মেঘনার ভাঙনের মুখে মাতাব্বরহাট
লক্ষ্মীপুর: ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলার মধ্যে লক্ষ্মীপুর একটি। এ জেলার কমলনগর উপজেলাটি মেঘনার ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। উপজেলাটির প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে আছে মেঘনা। গত ৯ বছরে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ৮টি হাট-বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। থামছে না মেঘনার ভাঙন। এবার ভাঙনের মুখে পড়েছে মাতাব্বরহাট। ইতোমধ্যে ৮টি দোকানঘর ভেঙে গেছে। যেকোনো সময় পুরো বাজার নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে ব্যবসায়ী ও আশপাশের বাসিন্দারা।
অব্যাহত ভাঙনে গত বছর ঐতিহ্যবাহী কাদিরপন্ডিতেরহাট ও লুধূয়া বাজার নদী গর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়াও অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। হুমকির মধ্যে রয়েছে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা।
এদিকে মাতাব্বরহাট সংলগ্ন এক কিলোমিটারে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। ওই বাঁধে গত এক বছরে ৮ বার ধস নামে। এরমধ্যে গত একমাসে ৩ বার ধস নেমেছে। বাঁধটি এখন বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে নদীর তীব্র জোয়ারে অতিরিক্ত পানির চাপে মাতাব্বরহাটের ৮টি দোকান ঘর ভেঙে গেছে। হুমকিতে রয়েছে ওই বাজারের শতাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।
নদী এলাকার প্রায় ১৬ কিলোমিটারেই কম-বেশি ভাঙনের দৃশ্য দেখা যায়। এ অঞ্চলের ভাঙন ঠেকাতে এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন অন্তত ৮ কিলোমিটার বাঁধ। পর্যাপ্ত বাঁধ না থাকায় নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, ‘বাজারের পাশেই তার বাড়ি। নদীর ভাঙন বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছে। যে কোনো সময় আমার বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ভাঙন নিয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যাপ্ত বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি বাজারে ঢুকে পড়ছে। এতে পানির আঘাতে খালপাড়ের কয়েকটি দোকান ভেঙে গেছে। এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। দরকার আরও ৮ কিলোমিটার। দ্রুত আরও বাঁধ নির্মাণ করা না হলে বাজারটি বিলীন হয়ে যাবে। পরে সবকিছু হারিয়ে তাদের পথে বসতে হবে।
তারা আরও জানান, একই সময়ের বরাদ্দকৃত টাকায় পার্শ্ববর্তী রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ সফলভাবে নির্মাণ হয়েছে। এতে রক্ষা পেয়েছে রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। কিন্তু কমলনগরের মাতাব্বর হাটের এক কিলোমিটার বাঁধটি সেনাবাহিনী দিয়ে করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করায় ছিল নানা অনিয়ম। যার কারণে বার বার বাঁধটিতে ধস নামে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা জানান, নদীর স্রোতের পরিবর্তন ঘটায় ভাঙন কমছে না। কমলনগর রক্ষায় আরও বাঁধের প্রয়োজন। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ণ প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে।