২৫ আগস্টকে যেভাবে পালন করল রোহিঙ্গারা
কক্সবাজার: গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনা ও স্থানীয় মগদের নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। সে সময় মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণসহ নানা নির্যাতন চালিয়ে হাজারো রোহিঙ্গাকে হত্যা করে।
এক বছর পরে এসে সে নির্যাতনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ২৫ আগস্টকে কালো দিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা। বিক্ষোভ-সমাবেশ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক পরিবার নিজেদের রান্না-বান্না থেকেও বিরত ছিল। বালুখালী, কুতুপালং, টেকনাফের লেদা, থ্যাংখালীসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে হয়েছে বিক্ষোভ-সমাবেশ।
কুতুপালং ক্যাম্পের বিক্ষোভ সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, `নিজ দেশে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের মানবিকতায় আশ্রয় দিয়েছে। সব রকমের সহযোগিতাও দিচ্ছে। এ ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। কিন্তু আশ্রিত হয়ে আমরা কতদিন অন্যের ঘাড়ে পড়ে থাকব। সবকিছু পেলেও এখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিছুদিন পর আমরা এদেশের বোঝায় পরিণত হব। তাই স্বদেশে ফিরে যেতে চাই। আন্তর্জাতিক মহলকে অনুরোধ জানাচ্ছি, মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। যাতে আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারি।‘
এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান রোহিঙ্গা নেতারা।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গা রফিক মিয়া বলেন, `২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে আমার মা ও ভাই। আমার বোনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবাও এদেশে পালিয়ে আসার পথে মারা গেছে। সব হারিয়ে নিঃস্ব আমি। তারপরও আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই। এ কারণে আমি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি।‘
বিক্ষোভ মিছিলে থাকা মো. ফারুক নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, `আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমরা আজকের এ বিক্ষোভ করেছি। আমরা কী চাই তাই জানানোর জন্যই আমাদের এ বিক্ষোভ।‘
তিনি বলেন, `আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আর সেজন্য আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চাই। আমরা সেদিন ঘটনার জন্য দোষীদের বিচার চাই।‘
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট এই দিনে নিজ দেশের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মগ জনগোষ্ঠীর হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয় হাজারো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। তাই এই দিনটি কালোদিন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এসব হত্যার বিচার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতে তাদের এ কমসূচি।