মাত্রাতিরিক্ত ‘বিষ’: ফার্মের মুরগির মাংসে ক্যানসারের ঝুঁকি!

  • তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ফার্মের মুরগির মাংসতে অতিরিক্ত মাত্রায় বিষাক্ত ‘ক্রোমিয়াম’ পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই মাংস রান্না করলেও তা থেকে ক্রোমিয়াম বিনষ্ট করা সম্ভব নয়। এর ফলে এই মাংস খেলে মানুষের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তা উঠে এসেছে।

এক্সেস এ্যামান্ট অফ ক্রোমিয়াম ট্রান্সপোর্ট ফরম ট্যানারি টু হিউম্যান বডি থ্রো পোল্টি ফিড ইন বাংলাদেশ এন্ড ইটস কার্সিনোজেনিক ইফেক্ট (EXCESS AMOUNT OF CHROMIUM TRANSPORT FROM TANNERY TO HUMAN BODY THROUGH POULTRY FEED IN BANGLADESH AND ITS CARCINOGENIC EFFECTS) শীর্ষক এই গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

ফার্মের মুরগির খাদ্যের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে এ তথ্য পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

তার গবেষণায় দেখো গেছে, ফার্মের মুরগির খাদ্য বেশিভাগই চামড়া শিল্পের বর্জ্য থেকে উৎপন্ন। আর এই বর্জ্যে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ক্রোমিয়াম থাকে যা চামড়া প্রস্তত করার সময় ব্যবহ্ত হয়। আর এই চামড়ার বর্জ্য থেকে মুরগীর খাদ্য উৎপাদন করা হয়।

এসব খাদ্য মুরগির খেতে দেয়া হয় আর ক্রোমিয়াম মুরগির শরীর বিদ্যমান থাকে; নষ্ট হয় না। এরপর এই মুরগির মাংস মানুষ খেলে তা মানুষের শরীরের প্রবেশ করে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

ফার্মের মুরগীতে প্রতি কিলোগ্রামের ক্রোমিয়ামের কি পরিমাণ পাওয়া যায় সেটার একটি পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে এই গবেষণায়।

পরিসংখ্যানের দেখা গেছে, প্রতি ১০০০গ্রাম মুরগীর মাংসে ৩৪৯মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম থাকে। আর প্রতি কেজি হাড়ে ১৯৯০ মাইক্রোগ্রাম, কলিজায় ৬১১ মাইক্রোগ্রাম, মাথা ও মগজে ৪,৫৬১ মাইক্রো গ্রাম এবং রক্তে ৭৯২ মাইক্রো গ্রাম ক্রোমিয়াম ।

এছাড়াও ২৫০ গ্রাম মাংসের টুকরায় ৮৭.৫ মাইক্রোগ্রাম আর ৬০ গ্রাম মাংসের টুকরায় ২১.৮৮ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়াম থাকে।

অধ্যাপক আবুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে এই মুরগির মাংস রান্না করলেও এই বিষাক্ত ক্রোমিয়াম বিনষ্ট করা সম্ভব নয়। কারণ ক্রোমিয়ামের তাপ সহনীয় ক্ষমতা সাধারণ চুলার তাপমাত্রার চেয়ে ২৯গুণ বেশি। অর্থাৎ ক্রোমিয়ামের তাপ সহনীয় ক্ষমতা ২৯০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কিন্তু আমরা সাধারণত রান্না করি ১০০ থেকে ১৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। মানুষ শুধুমাত্র ৩৫ মাইক্রোমগ্রাম ক্রোমিয়াম গ্রহণ করতে পারে; কিন্তুর এর বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এক ছোট টুকরা মাংসে ২২ মাইক্রোগ্রাম মতো ক্রোমিয়াম থাকে।

তিনি আরও বলেন, এই ক্রোমিয়াম রান্নায় বিনষ্ট না হওয়ার মাংস খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে; যা আমাদের দেহের কিডনি, লিভার অকেজো করে দেয়। আর হজম শরীর শক্তিও নষ্ট করে। এছাড়াও দেহের কোষ নষ্ট করে দেয় যা পরবর্তীতে ক্যানসার সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র চামড়ার বর্জ্য থেকে উৎপন্ন মুরগীর খাদ্যে এই বিষাক্ত ক্রোমিয়াম থাকে। যা শরীরের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।

বাজারের সব ফার্মের মুরগিতে বিষাক্ত ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চামড়ার বর্জ্য থেকে উৎপন্ন খাদ্য যে সব মুরগির খামারের দেয়া হয়; সেগুলোতে শুধু এই ক্রোমিয়াম থাকে। অন্যগুলোতে থাকে না। তবে কয়েক বছর ধরে দেশের বেশির মুরগীর খাদ্যে চামড়ার বর্জ্য মুরগীর খাদ্য উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে আসছে ফিড কোম্পানিগুলো। সে অনুয়ায়ী বলতে পারি, দেশের সব খামারে ক্রোমিয়াম থাকতে পারে।