মানিকগঞ্জ: ফেরি সংকট ও নদীতে প্রচণ্ড স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে। এতে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা স্বল্প ভোগান্তিতে রেহাই পেলেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা।
বুধবার (২৯ আগস্ট) সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুট পারের অপেক্ষায় ছয় শতাধিক সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক নৌরুট পারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান ফেরিঘাট সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট শাখা বাণিজ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, বুধবার ভোর ৩টা থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীবাহী বাসের চাপ বাড়তে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হতে শুরু করে ছোট গাড়ি ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকের লাইন।
এতে করে যাত্রী ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখা হয়। যে কারণে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকের লাইনও দীর্ঘ হয়ে যায়। পরে সকাল ৭টা থেকে যাত্রীবাহী বাসের চাপ কিছুটা কমে গেলে ট্রাক পারাপার শুরু করা হয়। সবশেষ দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক নৌরুট পারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের বাণিজ্য বিভাগের সহকারি ব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট বড় মিলে ১৮ টি ফেরি রয়েছে। তবে ফেরির তুলনায় বাড়তি যানবাহনের চাপ রয়েছে ঘাট এলাকায়।
এছাড়াও নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরিগুলো চলাচলে সময় লাগছে আগের চেয়ে বেশি। যে কারণে ঘাট এলাকায় যানবাহনের লাইন লেগেই আছে। সবশেষ পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ির লাইন না থাকলেও নৌরুট পারের অপেক্ষায় রয়েছে দুই শতাধিক সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক।
যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ির সঙ্গে সিরিয়াল অনুযায়ী ওই ট্রাকগুলো নৌরুট পারাপার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উজানের ঢল ও টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি কমায় ভোগান্তিতে পড়ছে বানভাসি মানুষ। এদিকে জেলার পানি উঠায় ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ দান বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
জানা গেছে, গত রাত থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। উপজেলার মানুষ ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার কিছু বানভাসি মানুষ এখনো ঘরবাড়িতে ফিরতে পারেনি। বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
বন্যার কারণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১১টি এবং আদিতমারী উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
তিস্তা বাড়ির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত তিনদিন ধরে ঘর দুয়ারে পানি ছিল তা কমে গিয়েছে । বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে যায় চলাফেরা নিয়ে খুবই কষ্টে পড়েছি। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা এখনো পায়নি।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, গত দুইদিন থেকে তিস্তা পানি বৃদ্ধি পেয়ে অত্র ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ডুবে গিয়েছিল। বর্তমানে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। অত্র ইউনিয়নের জন্য সরকারিভাবে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি, তা বিতরণ চলছে।
ডালিয়া পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর বর্ষণে তিস্তায় পানির প্রবাহ বেড়েছিল। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাখি হাওলাদার বলেন, বন্যা কবলিত মানুষদের ১৩ লক্ষ টাকা ও ৯০ টন জিআর চাল বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
দিবসটি ঘিরে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দিবসটি উদযাপনে অধীনস্ত জেলা ও উপজেলা দপ্তরগুলোকে কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ শিশুর উন্নয়ন, সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বর্তমান সরকার। এই শিশুদের অন্তত ১৫ শতাংশ কন্যাশিশু। করোনাকালে কন্যাশিশুর ওপর বঞ্চনা বেড়ে যাওয়ায় দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের ১১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। এদিকে প্রতিবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। এই শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস হিসাবে।
ডেটলাইন ২৯ সেপ্টেম্বর, বেলা ১১টা। আদাবর থানা। পরিবেশ অপেক্ষাকৃত শান্ত। এক কিশোরকে দেখা গেলো ডিউটি অফিসারের সামনের লকআপের ভেতর পায়চারি করছে। সকাল ১০টায় তাকে ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়া হয়নি। কারণ তার নামে মামলা হয়েছে। আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলেছে। কিশোরটি কিছুটা হৈচৈ করছে।
এক গাড়ি চালক এসেছেন চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জীবননাশের হুমকি পেয়ে জিডি করতে। তিন তরুণ এসেছে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ নিয়ে। তারা গার্মেন্টস শ্রমিক বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। এমনই কিছু ছোট ছোট কাজ নিয়ে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যস্ত। অন্য সদস্যরা থানার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে। কারো হাতে অস্ত্রসস্ত্র নেই। সকলেই ইউনিফর্মড। দুই-একজনকে সিভিল ড্রেসেও দেখা গেলো।
তবে সার্বিকভাবে নজরে পড়ে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলা লুটপাটের শিকার এই থানাটি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত নয়। বরং কথা বলে জানা গেলো লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র এখনো পুরোপুরি উদ্ধার না হওয়ায় নতুন করে হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
গত জুলাইয়ে দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন যখন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় তখন হাসিনা সরকার গদি রক্ষার স্বার্থে সামনে ঠেলে দেয় পুলিশকেই। আন্দোলন ঠেকানোর নামে জনগণের জানমালের রক্ষক পুলিশ সাধারণের ওপর চড়াও হয়, গুলি চালায় নির্বিচারে। এতে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণ যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পালিয়ে বেঁচেছেন শেখ হাসিনা। তখন ক্ষুব্ধ মানুষ চড়াও হয় পুলিশের উপর। তাদের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে থানা ও পুলিশ বাহিনীর নানা স্থাপনা। বাদ যায় নি পুলিশের সদর দফতরও। দ্রুত অবস্থার অবনতি হওয়ায় জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ শুন্য থানায় ক্ষুব্ধ মানুষেরা লুটপাট চালায়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় দেশের পাঁচ শতাধিক থানা আগুন ও লুটপাটের শিকার হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)’র ২২টি থানা পুড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত থানার মধ্যে রাজধানীর আদাবর থানাটিও ছিলো। সেদিন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে থানাটি রীতিমতো ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিলো।
অন্তবর্তী সরকারের কার্যক্রম শুরুর সাত দিন পর কাজে ফিরতে শুরু করে পুলিশ। ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করে থানাগুলোও। আদাবরের রিং রোডে ভাড়ায় নেওয়া থানা ভবনটিতে পুলিশ সদস্যরাও ফেরেন। ফিরে দেখেন, তিনটি ফ্লোরে সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে আছে। পরবর্তীতে ভবন সংস্কার করে থানার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখনও পরিবহন, লোকবল ও অন্যান্য সরঞ্জামের সংকটে রয়ে গেছে থানাটি।
সরেজমিন গিয়ে সে দৃশ্যই চোখে পড়লো। তবে সরঞ্জাম সংকটের পাশাপাশি উপলব্দি করা যায় পুলিশের মানসিক দুর্বলতার দিকটিও। সারা দেশেই এখন শারীরিক উপস্থিতি থাকলেও পুলিশি কার্যক্রমে অনেকটাই স্থবিরতা স্পষ্ট। আদাবর থানাও তার ব্যতিক্রম নয়।
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রধানসহ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সকল পদেই পরিবর্তন এসেছে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের রদবদল চলমান। আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে থানার বেশির নিম্নপদস্থ সদস্যদের বদলি করা হয়েছে। বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা চাইছেন নতুন দিনে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে উঠবে।
কেমন অগ্রগতি হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়? সেটাই দেখতে এই প্রতিবেদক যান আদাবর থানায়।
প্রধান সড়ক লাগোয়া থানা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে থানা এসেছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। ডিউটি অফিসের পেছনেই থানার গারদের ভেতর এক কিশোরকে দেখা যায়। ডিউটি অফিসারের কাছে কিশোরটি জানতে চাইছিলো, সকাল ১০টায় তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা, অথচ ১১টা বেজে গেলেও তাকে কেনো ছাড়া হচ্ছেনা।
ছেলেটি বলছিলো, সকাল থেকে তাকে কিছুই খেতে দেওয়া হয় নি। পুলিশের কেউ অবশ্য তার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছিলেন না।
ডিউটি অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিশোরটির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি প্রিজন ভ্যানে তুলে তাকে থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো। তবে এর আগেই এক পুলিশ সদস্য নিজের পকেটের টাকায় কিশোরটিকে রুটি কলা কিনে খাওয়ান।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচল করা ভূঁইয়া পরিবহনের একজন বাসচালক এসেছেন চাঁদাবাজি ও প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে। নূরুল ইসলাম নামের এই চালক জানালেন, প্রতিদিন আয়ের একটি অংশে চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার প্রতিবাদ করায় জীবন শঙ্কায় আছেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২১ অক্টোবর আদাবর থানায় সাধরণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু এরপরেও মেরে ফেলার হুমকি পাচ্ছেন। তাই বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাতে এসেছেন।
থানার কর্মকর্তা অভিযোগ শুনে সমাধানের আশ্বাস দিলেন। কিন্তু তাতে কতটা আশ্বস্ত হতে পারলেন নুরুল? তিনি বলেন, চাঁদাবাজরা এখন আমাকে গাড়ি চালাতে দিচ্ছে না। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপদে আছি। পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না।
তিন তরুণকে দেখা গেলো থানায় এসেছেন ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে। তবে তারা মামলা করতে চান না। ডিউটি অফিসার জানালেন, সাধারণ ডায়েরি (জিডি)তে ছিনতাই কথা লেখার সুযোগ নেই। জিডি করতে হলে লিখতে হবে হারিয়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী দুজন। কথা বলে জানা গেলো, তারা গার্মেন্টস কর্মী। সকাল বেলা অফিসে যাওয়ার পথে আদাবর ১০ নম্বর এলাকায় অস্ত্রের মুখে তাদের দুইজনের মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনতাই করে নিয়ে যায় কয়েকজন অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী।
এলাকায় অপরাধ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে কেমন ব্যবস্থা নেওয়া গেছে? এমন প্রশ্নে এই থানার তরফ থেকে জানানো হয়, মাঠ পর্যায়ে তাদের সক্রিয় অবস্থান এরই মধ্যে অনেকাংশেই নিশ্চিত করা হয়েছে। লোকবল নিয়ে আর প্রশ্ন নেই। তবে লজিস্টিক পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে, কিছু কিছু কাজ ব্যহত হচ্ছে। আদাবর থানায় বর্তমানে কর্মরত আছেন ২৩ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ২৭ জন সহকারি উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) ১০৬ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
ডিউটি অফিসার জানালেন, জনবলের সংকট না থাকলেও থানার পরিবহন ও আসবাবপত্রের সংকট রয়েছে। থানার অন্তত পাঁচটি গাড়ি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তিনটি গাড়ি দিয়ে চলছে পুলিশি কার্যক্রম। এরমধ্যে একটি গাড়ি নষ্ট।
থানার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, চাঁদাবাজি, মারামারি ও মাদক সংশ্লিষ্ট ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসময়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক অভিযোগ, হুমকি ও বিভিন্ন কিছু হারিয়ে যাওয়া অভিযোগে ৭৯২টি সাধারণ ডায়রি (জিডি) জমা পড়েছে এ থানায়।
গত পাঁচ আগস্ট আদাবর থানার অস্ত্রগার ও মালগার থেকে সব কিছুই লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। চায়না রাইফেল, চায়না এসএমজি ও এলএমজি, ১২ বোর শর্টগান, বন্দুক, রিভলভার, পিস্তলসহ (চায়না/তরাশ/সিজেড) ১৭০টি অস্ত্র লুট হয়ে যায়। এছাড়াও ২৩ টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং শর্ট ও লংরেঞ্জের ১২৪টি টিআরসেল লুট হয়। এসময় বিভিন্ন অস্ত্রের দুই হাজার ৯৯৫ রাউন্ড গুলি লুট হয়। এছাড়াও বিভিন্ন মামলায় থানায় জব্দকৃত মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও সিএনজিসহ ৫৫টি যানবাহন এবং থানার ব্যবহৃত ১২টি গাড়ি আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং লুট করা হয়। পুলিশের ব্যবহৃত হ্যান্ডকাফ, বেস্ট, ওয়াকিটকি এবং কম্পিউটার, প্রিন্টার, সিসি ক্যামেরা, ডিবিআর, এসি, দরজা-জানালাসহ প্রায় চার কোটি টাকার সমমূল্যের মালামাল লুট হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা যায়।
পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন তারা জনতার মব ও যেকোনো ধরণের অপ্রিতিকর ঘটনা মোকাবিলা ও আসামি ধরার ক্ষেত্রে সতর্কভাবে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া চেয়ে নিজেদের নিরাপত্তাই আগে দেখছেন মাঠে কাজ করতে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা।
নাম প্রকাশে না করা শর্তে একজন উপ-পরিদর্শক জানান, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখনও নানাভাবে ভয়-ভীতি কাজ করছে। ৫ আগস্ট কেন্দ্র করে থানা থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাট হয়েছে। যা বেশিরভাগই এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে যেকোনো সময় আবারও পুলিশের ওপর হামলার আতঙ্ক রয়েছে। আর সে হামলায় ব্যবহৃত পারে পুলিশেরই লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র।
এলাকায় মাদক ও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে এমনটা স্বীকার করে নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার। তবে এখনও আমাদের অনেক কিছুরই সংকট রয়েছে।
এই প্রতিবেদকের কথা হয় আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, যানবাহন ও আসবাবপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনী সামগ্রীর সংকট রয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল পদ্ধতি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ হাতে লিখতে হচ্ছে, এমনটা জানিয়ে ওসি মাহফুজ বলেন, আমরা এখন হাতে লেখা অভিযোগ গ্রহণ করছি। পরবর্তীতে সেটিকেই সার্ভারে দেওয়া হচ্ছে। ডিউটি অফিসারের রুমে কম্পিউটার দেওয়া সম্ভব হয় নি। তবে আমাদের ডিসি স্যারের সহযোগিতায় সদর দফতর থেকে রিকুজিশন দিয়ে বিভিন্ন ইক্যুইপমেন্ট আনা হচ্ছে।
লুটপাট ও আগুনের কারণে ফোর্স মেস ধ্বংস হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, থানার ফোর্সরা এখন ফ্লোরিং করে থাকছেন। তাদের জন্য খাটের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুতই হয়ে যাবে।
ওসি আরও বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। এটা কথায় নয়, আমরা সত্যিকারে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করছি। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সুসম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও জনসাধারণের মধ্যে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ দূরীকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নে সেনাবাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হত্যার চেষ্টা মামলার ২জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজবাড়ী সেনা ক্যাম্প কর্তৃক সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের মুচিদাহ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- বসন্তপুর ইউনিয়নের মুচিদাহ গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান খানের ছেলে আমজাদ খান (৫০) ও একই গ্রামের নওশের খানের ছেলে হাফিজ খান (২৮)।
জানা গেছে, রোববার দুপুরে সদর উপজেলার মুচিদাহ গ্রামের মো. আব্দুল হান্নান খানের ছেলে মো. সাগর আলী খান রাজবাড়ীর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে এসে অভিযোগ করে জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার বাবা বসন্তপুর ইউনিয়নের মুচিদাহ খেলার মাঠ থেকে নিজ বাড়িতে আসছিল। ওই সময় এলাকার কতিপয় দুস্কৃতিকারী জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং ধারালো ছুরিসহ তার পিতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ ঘটনায় তারা রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিতকরণে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।
এ অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে সেনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি পরিকল্পিত অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজবাড়ী সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যদের একটি দল মুচিদাহ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মামলার ২নং আসামি আমজাদ খান ও ১০নং আসামি হাফিজ খানকে (২৮) গ্রেফতার করে।
পরে সেনা ক্যাম্প থেকে গ্রেফতারকৃত আসামিদের রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজবাড়ী সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।