মামলার সাক্ষ্যই জীবনের কাল হলো নদীর!
পাবনা: স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্য প্রদান ছিল মঙ্গলবার। সাক্ষ্য প্রদান করাই নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর জীবনের কাল হলো কিনা এ নিয়ে চলছে পাবনায় নানা গুঞ্জন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা জেলা প্রতিনিধি সুবর্ণা নদীকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সুবর্ণা নদী। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলার কারণেই সুবর্ণাকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি নিহত নারী সাংবাদিক নদীর বড় বোন চম্পার।
চম্পা সাংবাদিকদের জানান, শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে তিন-চার বছর আগে সুবর্ণার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর পার হতে না হতেই তাদের ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। ছাড়াছাড়ির পরপরই সুবর্ণা নদী পাবনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশ্লিষ্ট আদালতে যৌতুকের একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তার সাবেক স্বামী রাজিব, শ্বশুর আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করা হয়।
চম্পা আরও জানান, গতকাল মঙ্গলবার ওই মামলার সাক্ষ্য দেয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। আদালতের সুবর্ণা নদী তার সাক্ষ্য প্রদানও করেন।
চম্পার দাবি, স্বামী-শ্বশুর মামলায় ফেঁসে যাবেন এমন শঙ্কায় পরিকল্পিতভাবেই সুর্বণা নদীকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, পাবনা শহরের পৌর এলাকার রাধানগর মহল্লার আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন ভাড়া বাসায় ফেরার পথে কয়েকজন দুর্বৃত্ত নদীকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণা নদীকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, হত্যার সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও পুলিশের একাধিক টিম বেশ কয়েটি ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা যায়, সুবর্ণা নদী আনন্দ টিভির পাশাপাশি অনলাইন পোর্টাল দৈনিক জাগ্রতবাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। রাজীবের সঙ্গে বিয়ের আগেও তার আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে তার ৯ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। সুবর্ণা নদী জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে।
এদিকে সুর্বণা নদীর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পাবনায় কর্মরত সাংবাদিকরা। দ্রুত বাসার সামনে ও হাসপাতালে দেখতে যান সহকর্মীরা। আজ বুধবার সকালে সুবর্ণা নদীকে হত্যার প্রতিবাদে, দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পাবনায় কর্মরত সাংবাদিকরা দুপুর ১২টায় পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন ব্যানারে মানববন্ধন করেন। এই মানববন্ধনে একাগ্রতা প্রকাশ করে এতে অংশ নেন ঢাকা থেকে আসা আনন্দ টেলিভিশনের একটি টিম।