কৃষকদের আলোর পথ দেখাচ্ছে এই পাঠাগার

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষকদের পাঠাগার। ছবি: বার্তা২৪.কম

কৃষকদের পাঠাগার। ছবি: বার্তা২৪.কম

চুয়াডাঙ্গা: নিরক্ষর কৃষকদের শিক্ষার মাধ্যমে আলোর পথ দেখাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার কৃষি পাঠাগার। অল্প কিছুদিনে এই অঞ্চলে কৃষি পাঠাগারটি কৃষকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের ছোট বড় সব মানুষের মুখে এখন কৃষি পাঠাগারের সাফল্যের কথা। এ শিক্ষার মাধ্যমে জেলায় চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে আধুনিকতার স্পর্শ লেগেছে। অল্পদিনে বদলে গেছে জেলার আশপাশের গ্রামের দৃশ্যপট। গ্রামে কৃষি পাঠাগারের মাধ্যমে শুধু পুরুষেরা নয় নারীরাও শত বাধা পেরিয়ে এখন সফলতার দার প্রান্তে পৌঁছে গেছে।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই কৃষি পাঠাগারের সর্বক্ষণ দেখভাল করছেন।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে গড়ে ওঠা এই পাঠাগার থেকে প্রতিদিন চারশ কৃষক আধুনিক কৃষি বিষয়ক ও অক্ষর জ্ঞানের শিক্ষা নিচ্ছেন। এর ফলে গ্রামের অধিকাংশ নিরক্ষর কৃষক চাষাবাদে ব্যাপক উন্নতি করছে। পাশাপাশি কৃষি পাঠাগারের মাধ্যমে গ্রামের পিছিয়ে পড়া কৃষকদের সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরাও হচ্ছে অনুপ্রাণিত।

বছর দুই আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাগানপাড়ায় সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘ ও কৃষি পাঠাগার গড়ে ওঠে। বর্তমানে সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের সদস্য ও কৃষি পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা ৭শ। সংগঠনটি পরিচালনার জন্য একটি কমিটিও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মূলত গাড়াবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ১৩শ সাধারণ কৃষক রয়েছে। এদের ভেতর অধিকাংশ কৃষকই নিরক্ষর। নিরক্ষর এসব কৃষকদের নিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একঘণ্টা করে কৃষি বিষয়ে পাঠদান করানো হয়। কৃষি পাঠাগারে প্রতিদিন দুই শিফট ক্লাস নেওয়ায় এখানে কৃষির আধুনিক চাষাবাদ, কলাকৌশল, সার-কীটনাশকের ব্যবহার, বালাই ব্যবস্থাপনা, জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার, আইপিএম ও আইএফএমসি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিরক্ষর কৃষকদের লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে।

কৃষি পাঠাগারের মাধ্যমে গ্রামের অধিকাংশ কৃষক বাড়ির আঙিনায় ছোটছোট সবজি ও ফলের বাগান গড়ে তুলছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাঠাগারের সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন রকম গাছের চারা, সেচের জন্য ফিতা, পাইপ, হ্যান্ড স্প্রে, ফুট পাম্প, ধান ঝাড়ার জন্য চশমা, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

সংগঠনের ৭শ সদস্য মাসিক ১শ টাকা করে চাঁদা দেন। এ পর্যন্ত সংগঠনের তহবিলে জমাও হয়েছে অনেক টাকা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/30/1535623474018.jpg

কৃষক আবুল হোসেন সায়রা বলেন, ‘পাঠাগারে আমরা আধুনিক ভাবে চাষ করা সর্ম্পকে জানতে পারছি। আমরা বাড়ির উঠানেও বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে লাভবান হচ্ছি।’

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্রামের নারীরাও আজ পিছিয়ে নেই। কারণ আমরা পুরুষদের মতোই চাষাবাদ করছি। সংসারে সচ্ছলতা এনেছি।’

কৃষি পাঠাগারের সভাপতি আব্দুল কাদের জানান,‘কৃষি পাঠাগার আমাদের গ্রামের সব কৃষককে একটি পরিবার বানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে গ্রামের নিরক্ষর কৃষকরা আধুনিক চাষাবাদে আলোর পথ দেখছে।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাশরুর জানান, গ্রামের দৃশ্যপট পাল্টে দিতেই কৃষি পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে একজন কৃষক খুব অল্প সময়ে অধুনিক ভাবে চাষাবাদ করা সম্পর্কে ধারণা পাবে।

জেলার সুশীল সমাজ বলছে, চুয়াডাঙ্গার কৃষি পাঠাগারের মাধ্যমে এ গ্রামের কৃষকরা দেশের অন্য জেলার কৃষকদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।